কাইয়ুম আহমেদ

  ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২

৭৫ পেরিয়ে শেখ হাসিনা

যার কর্মে-স্বপ্নে অনন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ

সময়ের নানামুখী যাত্রা-অভিজ্ঞতার বহু বর্ণিল তরঙ্গাভিঘাত পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে উন্নয়নে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। কথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ’ এখন বিশ্বে উন্নয়নের বিস্ময়, রোল মডেল। মানবতার অনন্য উদাহরণ। অর্থনীতি, রাজনীতি এবং শিক্ষা—সব ক্ষেত্রেই আজ উন্নয়নে সমৃদ্ধ। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকথা এখন গল্প নয়, বাস্তব। আর এর সফল কারিগর হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। আজ তার ছিয়াত্তরতম জন্মদিন। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি মধুমতী নদীবিধৌত গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছার প্রথম সন্তান।

শেখ হাসিনার পঁচাত্তর বছরের জীবন বিকশিত ফুলে-ফলে, পূর্ণকর্মে ও স্বপ্নে। আমাদের জাতীয় জীবনে তার অবদানের শেষ নেই। নানা সামাজিক-রাজনৈতিক ডামাডোল এবং বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও তিনি এক ‘আলোকখনি’ আমাদের জন্য তৈরি করেছেন। তার স্বপ্ন বাংলাদেশ আরো বড় হবে, রাষ্ট্র হিসেবে আরো সংহত হবে, আমাদের দৃষ্টি আরো প্রসারিত ও উদার হবে, আমরা আরো গণতান্ত্রিক এবং মানবিক হব।

টানা তৃতীয় মেয়াদসহ চতুর্থবার দেশ পরিচালনা করছেন শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে অমিত সম্ভাবনার দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। তার দূরদর্শী ভূমিকা ও সময়োপযোগী নেতৃত্ব আজ প্রশংসিত সারা বিশ্বে। তার অর্থনৈতিক মহাপরিকল্পনায় অর্থ ও বাণিজ্যের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের অর্জন বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।

মানুষের জন্যই প্রতিদিনের প্রতিটি ক্ষণকে কাজে লাগানোর পণ শেখ হাসিনার। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাতির পিতার স্বপ্নকে সফল করার প্রত্যয়েই এগিয়ে চলেছেন। তাই দেশের সাধারণ মানুষ ভালোবেসে তাকে ডাকেন ‘শেখের বেটি’।

গণভবন সূত্রে জানা যায়, গভীর রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার মধ্য দিয়ে দিন শুরু হয় তার। এরপর কোরআন তেলাওয়াত করেন। ফজরের নামাজ শেষ করে চা-নাশতা খাওয়ার পাশাপাশি সংবাদপত্র পড়েন। কখনো প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু জাতীয় নেতাই নন, তিনি আজ তৃতীয় বিশ্বের একজন বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে অবতীর্ণ। সাম্প্রদায়িকতা উদার প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক বিজ্ঞানমনস্ক জীবনদৃষ্টি তাকে করে তুলেছে এক আধুনিক, অগ্রসর রাষ্ট্রনায়কে।

বর্ণাঢ্য সংগ্রামমুখর জীবন শেখ হাসিনার। তবে সাফল্যগাথা এই কর্মময় জীবন কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না, ছিল কণ্টকাকীর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস তিনি গৃহবন্দি থেকেছেন। সামরিক স্বৈরশাসনামলেও বেশ কয়েকবার তাকে কারানির্যাতন ভোগ ও গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে। বারবার জীবনের ওপর ঝুঁকি এসেছে। অন্তত ২০-বার তাকে হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তিনি অসীম সাহসে তার লক্ষ্য অর্জনে অবিচল।

বঙ্গবন্ধুকে সপরিপারে হত্যার পর দীর্ঘ নির্বাসন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে প্রথম দেশে এসে বলেছিলেন, ‘বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য আমি দেশে এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।’ সেই কথা রেখেছেন শেখ হাসিনা। তিনি বাঙালি জাতিকে আগলে রেখেছেন দুর্যোগে, সংকটে।

শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, গতিশীল নেতৃত্ব, মানবিক মূল্যবোধ দিয়ে শুধু দেশেই নন, বহির্বিশ্বেও অন্যতম সেরা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। জাতির পিতার আদর্শকে বুকে ধারণ করে তার নেতৃত্বে জাতি এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সুখী-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়ার পথে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শেষে তিনি এখন অবস্থান করছেন ওয়াসিংটন ডিসিতে। তার অনুপস্থিতিতেই দিনটি উৎসবমুখর পরিবেশে নানা কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে দেওয়া বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও ১৪-দলীয় জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেন, ‘আমরা যেমন বলি বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। তেমনই শেখ হাসিনার জন্ম না হলে ‘উন্নয়ন-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’ জাতি দেখতে পেত না। শেখ হাসিনার জন্মের সফলতা ও সার্থকতা তার কর্মের মধ্য দিয়ে।’

বাসস পরিচালনা বোর্ডের সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শেখ হাসিনা তার সব কর্মকাণ্ডে বঙ্গবন্ধুকে অনুসরণ করছেন। তিনি দেশে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগণের উন্নয়নের ও নারীর ক্ষমতায়নসহ সব ক্ষেত্রেই অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছেন।

কর্মসূচি : জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী জন্মদিনে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। প্রধানমন্ত্রী তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে গত ২৪ সেপ্টেম্বর অন্য বিশ্বনেতাদের অংশগ্রহণে ইউএনজিএর সাধারণ আলোচনায় অন্যান্য বছরের মতো বাংলায় ভাষণ দেন।

তার অনুপস্থিতিতেই দিনটি উৎসবমুখর পরিবেশে নানা কর্মসূচি উদযাপন করবে তার নেতৃত্বাধীন দল আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ আজ বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এ ছাড়া ২৮ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয়ভাবে বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। একই সঙ্গে সকাল ১০টায় ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে (বাসাবো, সবুজবাগ) বৌদ্ধ সম্প্রদায়, সকাল ৯টায় খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (সিএবি) মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে (৩/৭/এ সেনপাড়া, পর্বতা, মিরপুর-১০) এবং সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় বিশেষ প্রার্থনা সভার আয়োজন করেছে। এসব কর্মসূচিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।

একই দিনে ঢাকাসহ সারা দেশে সব সহযোগী সংগঠন আলোচনা সভা, আনন্দ র‌্যালি, শোভাযাত্রা, দোয়া মাহফিল, বিশেষ প্রার্থনা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ দিবসটির তাৎপর্য অনুযায়ী যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে বিভিন্ন উপযোগী কর্মসূচি উদযাপন করবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শেখ হাসিনা,আওয়ামী লীগ,প্রধানমন্ত্রী,জন্মদিন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close