বদরুল আলম মজুমদার

  ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২

উত্তরায় আ.লীগ নেতা সালাউদ্দিন লাভলুর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ১ নং ওয়ার্ডে সভাপতি পদপ্রার্থী সালাউদ্দিন লাভলুর বিরুদ্ধে পদ বাণিজ্য, অস্ত্র ও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। উত্তরার ব্যবসায়ী উজ্জ্বল চক্রবর্তীর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগে গত মার্চে তার বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ইউনিট গঠনে পদ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোতে অর্থের বিনিময়ে জামায়াত-বিএনপির নেতাদের পদ দিয়েছেন বলে অভিযোগ দলের অনেক নেতাকর্মীরা। এছাড়া কারণে-অকারণে অনেককে নিজের কাছে থাকা বৈধ অস্ত্র তাক করার কারণে তিনি এখন সবার কাছে ‘পিস্তল লাভলু’ হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে লাভলুর বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে এর আগে এই প্রতিবেদককে তিনি জানিয়েছেন, উজ্জ্বলের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। আর যখন-তখন অস্ত্র তাক করার বিষয়টি অতিরঞ্জিত।

জানা গেছে, উত্তর আওয়ামী লীগের ১ নং ওয়ার্ডে আরেক নেতা সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকলেও লাভলু নিজেকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। এ পরিচয়ের জোরে তিনি একটি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছেন। তার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক পদবি ব্যবহার করে অস্ত্র দেখিয়ে উত্তরা এলাকায় অনেকের পাওনা টাকা উঠিয়ে দেওয়ার দেনদরবার ও চাঁদাবাজি করে অবৈধভাবে বিপুল টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি। চাঁদাবাজির ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় সালাউদ্দিন লাভলুর বিরুদ্ধে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। বর্তমানে ওই মামলায় তিনি জামিনে থাকলেও তার হুমকি-ধমকি থেকে রেহাই পাচ্ছেন না কেউই।

মামলা সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় ব্যবসায়ী উজ্জ্বল চক্রবর্তী একজনের কাছে টাকা পেতেন। ওই টাকা উঠিয়ে দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে টাকা নেন লাবলু। পরে টাকা না উঠিয়ে দিয়ে উল্টো চাঁদা দাবি ও অস্ত্র ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দেন উজ্জ্বলকেই। উজ্জ্বলের কাছ থেকে লাভলু বিভিন্ন সময়ে ৫ লাখ টাকা নিয়েছেন এবং এরপরও বারবার চাঁদা দাবি করেছেন। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর অভিযোগ জানিয়ে চিঠিও লিখেছেন ভুক্তভোগী।

উজ্জ্বল বলেন, সালাউদ্দিন লাভলু আমার পাওনা টাকা উঠিয়ে না দিয়ে ঘোরাতে থাকেন। উল্টো আমার কাছে আরও টাকা চান। গত ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় ৯ নং সেক্টরে আম্বার ফাস্টফুডের সামনে ডেকে নিয়ে আরও ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমি এই টাকা দিতে অস্বীকার করলে তার কোমরে থাকা পিস্তল আমার কপালে তাক করেন। আমাকে প্রস্তাবে রাজি না হলে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেন। পরে পিস্তলের বাট দিয়ে আমার বাঁ কানে আঘাত করেন। এ নিয়ে ওইদিনই উত্তরা পশ্চিম থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

উজ্জ্বল আরো বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর উত্তরা ৯ নং সেক্টর ইউনিটে আমাকে নেতা বানানোর প্রস্তাব দেন লাভলু। তিনি আমাকে ইউনিটের সাংগঠনিক সম্পাদক পদের জন্য ১ লাখ টাকা জোগাড় করতে বলেন। তিনি জানান ওই টাকা স্থানীয় এমপি ও নগর নেতাদের দিতে হবে। আমি ওই সময় তাকে ৭০ হাজার টাকা দিই।

কিন্তু আমাকে ইউনিট কমিটিতে নেয়নি। পরে আমার জোরাজুরিতে ৭০ হাজার টাকা ফেরত দিতে চাইলেও তা ফেরত দেয়নি। এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা বাগদাদসহ আরো অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কাক্ষিত পদ দেয়নি লাভলু।

এ বিষয়ে সেলফোনে কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে।

এদিকে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লাভলু তার কোমরে থাকা পিস্তল দিয়ে প্রায়ই মানুষকে ভয়ভীতি দেখায়। তার এ পিস্তল তাক থেকে রেহাই পায়নি মুদি দোকানী থেকে রাজনৈতিক নেতা পর্যন্ত। চলতি বছর স্থানীয় এমপির জন্মদিন উপলক্ষে ওয়ার্ড অফিসে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে মদপান করে মাতলামি ও কয়েকজনকে অস্ত্র তাক করে মেরে ফেলার হুমকি দেন লাভলু। এ নিয়ে স্থানীয় নেতারা এমপি হাবিব হাসানের কাছে তার বিরুদ্ধে নালিশ করেন। স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ, লাভলু নিজ জেলা টাঙ্গাইলে ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে বহিষ্কার হয়ে উত্তরার রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ইউনিট কমিটি গঠনের নামে বিএনপি জামায়াতের কর্মীদের দলে এনে পদবাণিজ্য করেন লাভলু। অচিরেই তার দেওয়া ইউনিট কমিটিগুলো বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় নেতারা।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আওয়ামী লীগ,সালাউদ্দিন লাভলু,উত্তরা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close