জিয়াউদ্দিন রাজু

  ২৫ অক্টোবর, ২০২১

বিতর্কিত বক্তব্য : মেয়র জাহাঙ্গীরের ভবিষ্যৎ কী?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়ায় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র (জিসিসি) জাহাঙ্গীর আলমের সামনে কী শাস্তি অপেক্ষা করছে, এ নিয়ে চলছে নানা কথা। তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে কি না—এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আগামী ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে। তবে এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় মেয়র জাহাঙ্গীরের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানিয়েছে, গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। বৈঠকে জাহাঙ্গীরের বিষয়টি উঠে এলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা উপস্থিত মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের কাছে তার বিষয়ে মতামত জানতে চান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাহাঙ্গীরের বিষয়ে আপনাদের (মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা) মতামত দেন। দল থেকে জাহাঙ্গীরকে যে জবাব (নোটিস) দেওয়া হয়েছে, তিনি জবাবের উত্তর দিয়েছেন। এখন আপনারা বলেন, তার বিষয়ে মতামত দেন।

এ বিষয়ে বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের এক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য প্রতিদিনের সংবাদকে গত শুক্রবার রাতে জানিয়েছেন, নেত্রী যখন মেয়র জাহাঙ্গীরের বিষয়ে উপস্থিত নেতাদের কাছে জানতে চেয়েছেন তখন উপস্থিত কোনো নেতাই তার পক্ষে ছিলেন না। স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা তার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।

তিনি আরো বলেন, জাহাঙ্গীর যে বক্তব্য দিয়েছেন তা বিব্রতকর। বৈঠকে দলের নেতারা তার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। সে যে ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন এতে দলেরই ক্ষতি। এ সময় উপস্থিত এক নেতা বলেন, নেতারা যেখানে-সেখানে যা-তা বলে ফেলেন। তাদের মধ্যে কোনো আদর্শ নেই। কিছু ‘বাকবাকুম’ নেতার কারণে দলের সমালোচনা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর হতে হবে। যাতে করে নেতারা কথা বলার সময় চিন্তা করে কথা বলেন। নেত্রী সবকিছু শোনার পর দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বললেন।

স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কী আছে মেয়র জাহাঙ্গীরের কপালে!কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কার্যনির্বাহী সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, ড. আবদুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, রমেশ চন্দ্র সেন, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রশিদুল আলম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।

এদিকে মেয়র জাহাঙ্গীরের বিষয়ে গত শনিবার নিজ বাসভবনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, গাজীপুরের মেয়র ও গাজীপুর সিটি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ অন্য আরো কিছু সাংগঠনিক শৃঙ্খলাবিরোধী অভিযোগ আগামী ১৯ নভেম্বর শুক্রবার বিকাল ৪টায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভায় উত্থাপিত হবে। সভায় রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক আলোচনার পাশাপাশি দলীয় আদর্শ এবং শৃঙ্খলাবিরোধী বক্তব্যের জন্য গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে প্রদত্ত শোকজ নোটিসের ওপর আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।

প্রসঙ্গত, আলোচনার শুরু মূলত জাহাঙ্গীর আলমের ঘরোয়া পরিবেশের একটি বক্তব্যের ভিডিও প্রকাশের পর। গোপনে ধারণ করা ১১ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে মেয়র জাহাঙ্গীরকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে কটূক্তিমূলক মন্তব্য করতে শোনা যায়। এ ছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আজমত উল্লা খান এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের সঙ্গে সম্পর্ক, হেফাজতের প্রয়াত নেতা জুনায়েদ বাবুনগরীর সঙ্গে তার সখ্য ও রাষ্ট্রীয় দুটি সংস্থা নিয়ে নানা আপত্তিকর মন্তব্যও শোনা যায়।

বিষয়টি পছন্দ হয়নি জেলা আওয়ামী লীগের বড় অংশের। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানোর পর দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গাজীপুর মহানগর। মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়। ২২ সেপ্টেম্বর থেকে নানাভাবে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তারা। ভিডিওর বক্তব্যের বিষয়ে এরই মধ্যে জাহাঙ্গীরকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় সংসদ। সেই নোটিসের জবাব গত ১৭ অক্টোবর দিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম।

শুর¤œ থেকেই ভিডিওকে বানোয়াট বলে আসছেন জাহাঙ্গীর। তিনি তার অনুসারীদের নিয়ে ২৪ সেপ্টেম্বর একটি সমাবেশও করেন। পাশে তার বিরোধীদেরও অবস্থান ছিল। পুলিশ বিরোধীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর জাহাঙ্গীর নির্বিঘ্নে সমাবেশ করেন।

কিন্তু সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম শুরু থেকেই দাবি করে আসছেন, অডিও-ভিডিও সুপার এডিটিংয়ের মাধ্যমে তার বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে। এমনকি এতে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ারও হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

তবে তা কোনোভাবেই মানতে নারাজ গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের অন্য নেতারা। জাহাঙ্গীরের সেই বক্তব্য ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ প্রসঙ্গে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আজমত উল্লা খান এক সমাবেশে বলেন, বক্তব্য যেটা আসছে, এটা তো একেবারেই ক্ষমার অযোগ্য। বঙ্গবন্ধু ও মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের হিসাব দিয়ে ৩০ লাখকে ২ লাখ প্রমাণ করার চেষ্টা-এ বক্তব্য অবশ্যই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর মনে ক্ষত সৃষ্টি করেছে। সেজন্য তারা এটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন।

মেয়র জাহাঙ্গীরের ব্যাপারে দল যে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে, সেই ব্যাপারে তার প্রতিক্রিয়া জানতে মেয়র জাহাঙ্গীরকে গতকাল রবিবার একাধিক ফোন করা হয়, কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মেয়র জাহাঙ্গীর,বিতর্কিত বক্তব্য,আওয়ামী লীগ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close