reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৭ মে, ২০২১

খা‌লেদার ভিসা আবেদন বি‌বেচনা কর‌বে যুক্তরাজ্য

ফাইল ছবি

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সা‌বেক প্রধানমন্ত্রী খা‌লেদা জিয়ার ভিসার আবেদন বি‌বেচনা কর‌বে যুক্তরাজ্য। য‌দিও প্র‌ক্রিয়াগত কার‌ণে ভিসা পে‌তে কিছুটা বিলম্ব হ‌তে পা‌রে। বর্তমা‌নে ভিসা প্র‌ক্রিয়া করার প্র‌তিষ্ঠান ভিএফএস বন্ধ আছে। রোববার কিংবা সোমবার ভিএফএস খোলা হ‌বে। তারপর ভিসা প্র‌ক্রিয়া হ‌তে পা‌রে।

শুক্রবার ঢাকায় ব্রি‌টিশ হাইক‌মিশ‌নের একজন মুখপাত্র ব‌লেন, কোনো ইন্ডিভিজুয়াল কেসের ক্ষেত্রে আমরা মন্তব্য করি না। যদি খালেদা জিয়া ভিসার জন্য আবেদন করে থাকেন তাহলে সেই বিষয়টি যুক্তরাজ্য সরকার বিবেচনা করে দেখবে।

এ‌দি‌কে ভিএসএ‌ফের কার্যক্রম চালু করা সম্প‌র্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ‌কে আবদুল মো‌মেন ব‌লে‌ছেন, ভিএফএস গ্লোবাল (বাংলা‌দেশ) লি‌মি‌টেডের কার্যক্রমকে জরুরি পরিষেবা হিসেবে বিবেচনা করে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনপূর্বক অনতিবিলম্বে চালু রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রোববার বা সোমবার এ সংস্থা কার্যক্রম শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার তোড়জোড় চলছে। খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনে সরকার ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে, যদিও এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক অনুমতি দেওয়া হয়নি। আগামী রোববার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

ইতিবাচক মনোভাবের পর খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার জোর প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি ও তার পরিবারের সদস্যরা। দলটির চেয়ারপারসনের পাসপোর্ট নবায়ন, ভিসাসহ আনুষঙ্গিক কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে। যাতে অনুমতি পেলে যে কোনো মুহূর্তে তাকে বিদেশ নেয়া যায়।

পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে যুক্তরাজ্যে নেয়ার জন্য জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে। সেখানে তার বড় সন্তান ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার বলেন, খালেদা জিয়ার মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ-পরবর্তী বিভিন্ন জটিলতা রয়েছে। সেজন্য ‘মানবিক’ বিবেচনায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেয়ার অনুমতি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

পরিবারের আবেদনের পর বৃহস্পতিবার বিকালে সচিবালয় থেকে এ সংক্রান্ত নথিপত্র আইনমন্ত্রীর বাসায় নিয়ে যান আইন সচিব গোলাম সারওয়ার। খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে আইনের কোনো ব্যত্যয় আছে কিনা জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘এ বিষয়ে মাননীয় মন্ত্রী কথা বলবেন। আমি কিছু বলব না। শামীম ইস্কান্দার সাহেব বিদেশ নেয়ার জন্য আবেদন করেছেন, এটা রিপোর্টে আছে। আমি ফাইলগুলো নিয়ে যাচ্ছি মন্ত্রী মহোদয়ের ওখানে।’

আবেদনে কোন দেশের কথা বলা আছে জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘না, ওনারা কোনো কিছু উল্লেখ করেননি। শুধু চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার কথা বলেছেন। আর কিছু বলেননি। পরবর্তী প্রক্রিয়া কী হবে জানতে চাইলে আইন সচিব বলেন, আমরা মতামত দিলে সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সামারি (সংক্ষিপ্ত) আকারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবে। তিনি আরও বলেন, আমরা ফাইল নিয়ে যাচ্ছি, তিনি দেখবেন। মন্ত্রী মহোদয় সিদ্ধান্ত দিলে, তখন হবে।’

সরকার ও বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আইন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ দ্রুত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যেতে পারে। এরপর তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে পারবেন না বলে যে শর্ত দেয়া হয়েছে তা তুলে নিয়ে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করলে খালেদা জিয়ার বাইরে যেতে আর কোনো বাধা থাকবে না।

উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেয়ার অনুমতি চেয়ে বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। লিখিত আবেদনটি মতামতের জন্য রাতেই তা আইন সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে।

বিএনপি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হয়েছে। সরকারের মনোভাব জানার পর বিদেশ নেয়ার প্রস্তুতি শুরু করে খালেদা জিয়ার পরিবার।

বুধবার রাতেই বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারের সঙ্গে দেখা করেন শামীম এস্কান্দার। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা জানিয়ে তাকে যুক্তরাজ্যে নেয়ার সহযোগিতা চান তিনি। হাইকমিশনার যুক্তরাজ্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

পরে শামীম ইস্কান্দারকে জানান, তার সরকার বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা করাতে সব ধরনের সহযোগিতা করবে। যুক্তরাজ্যে যেতে তার সরকার ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে বলে হাইকমিশনার তাকে অবহিত করেন। সরকারের সবুজ সংকেত পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার সকালে খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট নবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করেন শামীম এস্কান্দার। সকালে আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট নবায়নের জন্য জমা দেয়া হয়েছে।

এদিকে পাসপোর্ট পাওয়ার পর ভিসার জন্য তা যুক্তরাজ্য হাইকমিশনে জমা দেয়া হবে।

গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা শনাক্ত হয়। এরপর থেকে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজায়’ তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এফএম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে চিকিৎসা শুরু হয়। করোনা আক্রান্তের ১৪ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর খালেদা জিয়ার করোনা টেস্ট করা হলে ফলাফল আবারও পজিটিভ আসে।

এর পর কিছু পরীক্ষার জন্য তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। প্রথম দফায় পরীক্ষা করে বাসায় ফেরার পর দ্বিতীয় দফায় ২৭ এপ্রিল তাকে ফের হাসপাতালে নেয়া হয়। সোমবার ভোরের দিকে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে (করোনারি কেয়ার ইউনিট) স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন।

এদিকে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের করোনার কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তার ফুসফুস থেকে তরল জাতীয় পদার্থ (ফ্লুইড) অপসারণ করা হয়েছে। তার ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। এর মাত্রা ওঠানামা করছে। এছাড়া অক্সিজেনের মাত্রাও কিছুটা কমেছে।

পিডিএসও/এসএম শামীম

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
খা‌লেদা জিয়া,ভিসা আবেদন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close