হাসান ইমন, লাকসাম থেকে

  ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮

নেতৃত্ব সংকটে কুমিল্লা-৯ আসনের বিএনপি, হতাশ তৃণমূল

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের সব জায়গা চলছে নির্বাচনী প্রচারণা। দলকে বিজয়ী করতে মনোয়ন পাওয়া প্রার্থীরা ঘুরছেন মানুষের ধারে ধারে। পাড়ায়-মহল্লায় ভোটারের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন প্রার্থীরা। কুশল বিনিময় করছেন ছোট বড় সবার সাথে। করছেন পথসভা। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন নানা উন্নয়নের। প্রচার প্রচারণায় তফসিল ঘোষণার পর থেকে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. তাজুল ইসলাম। জনসমর্থন আদায় করতে চষে বেড়াচ্ছেন মাঠে। অন্যদিকে নির্বাচনী মাঠে দেখা যাচ্ছেনা বিএনপিকে। নেতৃত্ব না থাকায় কোথাও কোন কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না দলটির। হতাশায় ভোগছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এসব কারণে নেতারা আবার দল ছেড়ে যোগ দিচ্ছেন অন্য দলে।

জানা যায়, আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্ধী বিএনপির প্রতীক ধানের শীষের পক্ষের কোনো প্রচার এখনো চোখে পড়েনি। দলটির নির্বাচনী আমেজের শুরুতে কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনে বিএনপির প্রার্থী নিয়ে ছিল দ্বিধাদ্বন্ধ। আনোয়ারুল আজিম নাকি আবুল কালাম? একইসঙ্গে ছিল প্রায় ডজন খানেক প্রার্থী। কিন্তু নানা সমস্যায় জর্জরিত এ দলটির নমিনেশন আনোয়ারুল আজিম পেলেও নতুন করে বিভক্তি শুরু হয়েছে। এ ছাড়া গত পাঁচ বছরে মাঠে বিএনপির কোনও কার্যক্রম দেখা যায়নি। বিশেষ করে গত বছর দলটির উপজেলা কমিটি নিয়ে দ্বন্ধে আনোয়ারুল আজিম পদত্যাগ করায় বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা আরো নাজুক হয়েছে।

নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নমিনেশন পাওয়া না পাওয়া নিয়ে বেশ অনিশ্চয়তার মধ্যেই ছিলেন। এলাকায় প্রচার ছিল তিনি এবার নমিনেশন পাবেন না। অন্যদিকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সব পর্যায়ের কমিটিতে আনোয়ারুল আজিমের লোকজনকে পদায়ন করা হয়নি। এ নিয়ে আনোয়ারুল আজিম ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখালেও তার লোকজনের কোনো হিল্লা করতে পারেননি। দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে তার অনুসারী নেতারা বিতাড়িত হওয়ায় গত দুই বছর থেকেই তারা আজিমের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এ অবস্থায় তার পক্ষে প্রচারের জন্য এমন কর্মী-সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি ঠিকমতো মাঠেও নামতে পারছেন না। প্রার্থী হিসেবে বিএনপির টিকিট পেয়ে আনোয়ারুল আজিম কয়েক দফা লাকসাম-মনোহরগঞ্জ ঘুরে গেলেও নেতাদের সঙ্গ না পাওয়ায় নির্বাচনের মাঠে নামতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত তিনি সবাইকে নিয়ে মাঠে নামতে পারেন কি না- এ নিয়ে শঙ্কায় বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মী।

তার ওপর মনোনয়নবঞ্চিত অংশের নেতারা আনোয়ারুল আজিমের পক্ষে মাঠে নেমে কতটা সক্রিয় ভূমিকা রাখে সাধারণের মনে এ প্রশ্ন রয়েছে। বিএনপির এই প্রার্থী সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও সবাইকে এখনো ঐক্যবদ্ধ করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত আদৌ পারবেন কি না, সে সংশয় রয়েছে। তাই ধানের শীষের পক্ষে লাকসাম-মনোহরগঞ্জের অধিকাংশ এলাকায় প্রচার সরগরম করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। প্রার্থীর এমন দৈন্যতায় হতাশ দলের সাধারণ নেতাকর্মীরাও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিএনপির নেতা-কর্মীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ‘শুনেছি আজিম সাহেব নমিনেশন পেয়েছেন, কিন্তু আজ পর্যন্ত ওনার চেহারাটাও দেখলাম না। নির্বাচনের আর মাত্র ৯ দিন বাকি। এ অবস্থায় তিনি কখন প্রচারে নামবেন আর কখন মাঠ গোছাবেন, তা কেবল তিনিই বলতে পারেন।’ এ ছাড়া চৈতী কালাম নমিনেশন না পাওয়ায় তার সমর্থকরা ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নিতে আগ্রহী হচ্ছেন না।

এ বিষয়ে মনোয়ন পাওয়া আনোয়ারুল আজিম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আমরা সরাসরি মাঠে নেই। তবে নির্বাচনী প্রচারণায় আছি। বিভিন্ন কৌশলে সাধারণ মানুষের কাছে আমরা যাচ্ছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের পরিস্থিতি বুঝে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। তবে খুব দ্রুতই মাঠে নামবো।

এলাকায় বিএনপির অবস্থান না থাকার কারণ হিসেবে লাকসাম উপজেলা ভাইস চেয়াম্যান মহব্বত আলী বলেন, বিগত বিএনপি আমলে তারা কোনও উন্নয়নমুলক কাজ করেনি। শুধু দুর্নীতি করেছে। মানুষ কিভাবে তাদের সাথে থাকবে। আর কিভাবে বিএনপির পক্ষে কাজ করবে?

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নেতৃত্ব সংকট,কুমিল্লা-৯ আসন,বিএনপি
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close