জিয়াউদ্দিন রাজু
গাজীপুরের অভিজ্ঞতা বরিশালে কাজে লাগাতে চায় আ.লীগ
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। গাজীপুরে দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে বরিশাল সিটিতে জয়লাভের আশায় ঐক্যের বার্তা দিচ্ছে কেন্দ্র গঠিত সমন্বয়ক টিম। বরিশাল নগরীতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে আওয়ামী লীগের একটি কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনকারী কমিটি।
আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, নীতি ও আদর্শবান নেতা আজমত উল্লা খানের গাজীপুরে পরাজয় অবশ্যই আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় বার্তা। এ থেকে অবশ্যই শিক্ষা নিয়ে বরিশালে কাজে লাগাতে চায় দল। এজন্য দলীয় কাউন্সিলর থেকে শুরু করে সবার সঙ্গে বৈঠকে বসতে চান তারা। এ ছাড়া গোপনে যাতে কোনো কর্মী নৌকার বিরুদ্ধে কাজ না করেন সেজন্য দলীয় কর্মীদের দিকে বিশেষ নজর রাখা হবে। বিএনপি নির্বাচনে না এলেও এ দলের নেতাকর্মীরা ভোটের মাঠে কোন দিকে পা ফেলেন সেদিকেও নজর রাখা হবে।
স্থানীয় কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, দলীয় কোন্দলে নাজুক অবস্থানে রয়েছেন বরিশালের নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ (খোকন সেরিনিয়াবাত)। বরিশাল নগরীতেই সবচেয়ে বেশি দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। এ অবস্থা কাটিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের অনুকূলে ভোট আহরণে সর্বস্ব নিয়োগ করতে চায় আওয়ামী লীগ।
এ লক্ষ্যে ১৭ মে কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি রাজধানীর ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সমন্বয় সভাও করেছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে বরিশালের বর্তমান মেয়র বরিশাল অঞ্চলের আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে। তিনি খোকন সেরনিয়াবাতের বড় ভাই। কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গত শুক্রবার গৌরনদীতে একটি বিশেষ বর্ধিত সভা করে। বরিশালের নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত এতে উপস্থিত ছিলেন। কমিটি আগামী ১ জুন আরো একটি বিশেষ বর্ধিত সভা করবে।
আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্র জানিয়েছে, বরিশালে ঐক্য গড়া না গেলে নৌকার প্রার্থীর পরাজয় এড়ানো সম্ভব নয় এটা বুঝতে পেরেই দলীয় ঐক্যের দিকে জোর দেওয়া হয়েছে। যেসব নেতাকে দলের সবাই মান্য করেন তারা বিশেষ বর্ধিত সভায় উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে কেউ সহযোগিতা না করলে তাদের জন্য অবশ্যই শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। তবে এখনই এ বিষয়টি নিয়ে ভাবতে চান না আওয়ামী লীগের নেতারা। এ বিষয়টি পরের বিষয় এমনটাই মনে করেন নেতারা।
দলটির কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুরে নৌকার প্রার্থীর পরাজয়ের বড় কারণ হলো কর্মীদের অসহযোগিতা এটাই তারা মনে করেন। বরিশালে নির্বাচনী ময়দানে কাজ করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, দলের মধ্যে পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস নৌকার প্রার্থীর জন্য কত ক্ষতিকর হতে পারে তার বড় উদাহরণ হলো গাজীপুর। এ থেকে আওয়ামী লীগ অবশ্যই শিক্ষা নিতে চায়। কর্মীরা যাতে বরিশালে নৌকার প্রার্থীকে অসহযোগিতা না করেন তার জন্য সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চান তারা।
বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় টিমের সমন্বয়ক ও বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগে ঐক্যের বা মনের কোনো অমিল নেই। নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে বলে আশা করি। যারা বলেন সেখানে কোন্দল রয়েছে, তাদের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, এখানে নির্বাচনে তাদের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি ফয়জুল করিম। তার হাতপাখা প্রতীকের অনুকূলে প্রচারে মাঠে নেমেছেন ২ হাজার ১০০ নারীকর্মী। এ বিষয়টি হালকাভাবে নিতে চায় না আওয়ামী লীগও। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আমাদের প্রার্থীর জয়লাভের ক্ষেত্রে আমরা সবাইকে নিয়েই কাজ করতে চাই। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে জয়লাভ করতে চাই। যার জন্য আমাদের সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠন যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও ছাত্রলীগ কাজ করবে।
বরিশালে নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচনী কার্যক্রমে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশকে দেখা যায় না বলে অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। তবে সে অবস্থা কাটিয়ে দ্রুত সেখানে ঐক্য গড়ে তুলতে চায় আওয়ামী লীগ। সেজন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটি কাজ শুরু করেছে। এ বিষয়ে বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতা বলেন, আসলে নির্বাচনে অনেকেই মনোনয়ন চেয়েছে কিন্তু দল একজনকে চূড়ান্ত মনোনীত করেছে। এখনে মান-অভিমান, চাওয়া-পাওয়া থাকতে পারে। তবে নির্বাচনের সময় আসতে আসতে এগুলো কমে আসবে। নৌকার প্রার্থীর পক্ষে সবাই কাজ করবে। এসব বিষয় নিয়ে আগামী জুনের ১ তারিখে বরিশাল মহানগরীতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। দলের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে সভায় দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে।
প্রসংগত, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
পিডিএসও/এমএ