নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২২ জানুয়ারি, ২০২৩

পাঠ্যবইয়ে ভুল, শুধুই  লজ্জিত এনসিটিবি 

নেই জবাবদিহিহীনতা, শাস্তির সুযোগ 

ছবি : সংগৃহীত

দায়বদ্ধতা না থাকা এবং পর্যাপ্ত সময় ও পারিশ্রমিক বরাদ্দ না থাকায় বারবার ত্রুটি, লেখা কপি ও ইতিহাস বিকৃতি ঘটছে বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে। তাছাড়া ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির জন্য লেখা ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞান বইয়ে ভুল তথ্য ও সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব গবেষকরা। এবছর অন্তত আটটি পাঠ্যপুস্তকে পাওয়া গুরুতর ভুলের জন্য সমালোচনায় জর্জরিত হচ্ছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে পাঠ্যক্রম তৈরি, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও বিতরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। যদিও এ জন্য শুধুই লজ্জিত, বিব্রত সংস্থাটি। তবে লেখকদের শাস্তি দেওয়ার এখতিয়ার এনসিটিবির নেই। কোনো ভুলের জন্য দায়ী লেখককে পরবর্তীতে আর কোনো দায়িত্ব না দেওয়ার ক্ষমতা আছে শুধু।

জানা গেছে, ভুলের অভিযোগ ওঠার পর এনসিটিবি কিছু ভুল সংশোধন করেছে এবং বলেছে যে তারা এখন আরও ত্রুটি বের করার জন্য অন্যান্য বই যাচাই করছে। পাশাপাশি ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগগুলোও খতিয়ে দেখছে।

নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে লেখা সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বই 'অনুসন্ধানী পাঠ'-এর একটি অংশ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এডুকেশনাল সাইট থেকে নিয়ে হুবহু অনুবাদ করে ব্যবহার করার যে অভিযোগ উঠেছে, তা সত্য বলে স্বীকার করে নিয়েছেন বইটির রচনা ও সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত থাকা অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক হাসিনা খান। এছাড়া ষষ্ঠ শ্রেণির নতুন ইংরেজি পাঠ্যবই, ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বই, চতুর্থ শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার ইংরেজি সংস্করণের বই এবং নবম-দশম শ্রেণির তিনটি পাঠ্যবইয়ের বিরুদ্ধেও ভুল তথ্য ও ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ উঠেছে। আর নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা’ বইয়ে চারটি, ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়ে তিনটি এবং ‘পৌরনীতি ও নাগরিকতা’ বইয়ে দুটি ভুল পাওয়া গেছে। এই ভুলগুলো ২০১৩, ২০১৭ ও ২০২১ সালের পাঠ্যপুস্তকগুলোতে করা বেশ কয়েকটি পূর্ববর্তী ভুলকেও সামনে নিয়ে এসেছে।

যদিও এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেছেন, এতো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করার পরেও ভুল বন্ধ না হওয়ায় আমরা লজ্জিত, বিব্রত। এজন্য এনসিটিবিতে যারা দায়িত্বরত তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। তবে লেখকদের শাস্তি দেওয়ার এখতিয়ার এনসিটিবির নেই। কোনো ভুলের জন্য দায়ী লেখককে পরবর্তীতে আর কোনো দায়িত্ব না দেওয়ার ক্ষমতা রাখি। এর বাইরে কোনো শাস্তি দেওয়ার সুযোগ নেই। এটা শুধু শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেখতে পারে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি (বুয়েট) বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও আমরা যোগ্যমানের পাঠ্যপুস্তক তৈরি করতে পারিনি। বরং বরাবরই দেখা যাচ্ছে যে পাঠ্যপুস্তকে অনেক ভুল, যা মোটেও কাক্সিক্ষত না।

বারবার বই পরিবর্তনের বিরোধিতা করে কায়কোবাদ বলেন, স্কুল-কলেজে যা পড়াব, তার উদ্দেশ্য হলো বাচ্চাদের ভিত্তিটা শক্ত করে দেয়া। সে ভিত্তিটা বারবার পরিবর্তন হবে না। যেমন যোগ-বিয়োগ, গুণ-ভাগ, অ্যালগরিদম—এগুলো তো কথায় কথায় পরিবর্তন হবে না।

উন্নত পাঠ্যক্রম করতে হলে তিন মাসের সময় দিয়ে টেন্ডার করা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভালো শিক্ষক কখনেও টেন্ডারে অংশ নেবেন না। যে বইয়ের ৩০ লাখ কপি আমরা ছাপাব, তা অত্যন্ত বড় মাপের দক্ষ শিক্ষক দিয়ে রচনা করতে হবে। তাতে যদি পাঁচ বছর লাগে, সে সময় নিয়েই বইটা রচনা করতে হবে। সে বইটি আমরা ৩০ বছর পাঠ্য হিসেবে রাখব। এভাবে আমরা লেখককে অনেক টাকাও দিতে পারব।

এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে মাধ্যমিক পর্যায়ের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির একটি পাণ্ডুলিপির জন্য লেখকরা মোট ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং সম্পাদনার জন্য ৬০ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। একটি বই ছয়-সাত বছরের বেশি পড়ানো সম্ভব হয় না। তাই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কারণে পাঠ্যক্রম দ্রুত পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়ে।

এ বছর শ্রেণিভেদে শিক্ষার্থীরা দুই ধরনের বই হাতে পেয়েছে। এর মধ্যে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে নতুন বই পেয়েছে। আর অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে বই পেয়েছে। আগামী বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণি নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে। ২০২৫ সালে চতুর্থ, পঞ্চম শ্রেণি ও দশম শ্রেণি যুক্ত হবে। ২০২৬ সালে একাদশ ও ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণি যুক্ত হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পাঠ্যপুস্তক,এনসিটিবি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close