reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৩ জুন, ২০২২

কারিগরি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাস্তব হলো পদ্মা সেতু

ছবি : সংগৃহীত

দেশের লাখো মানুষের আবেগ অনুভূতি জড়িয়ে আছে পদ্মা সেতুর সঙ্গে। তবে এর নির্মাণকাজ ছিল খুবই কঠিন। শুধু বিশ্বব্যাংকের সাথে চ্যালেঞ্জ নয়, কারিগরি দিক থেকেও বিশ্বের মধ্যে নানা কারণে অনন্য বাংলাদেশের এ সেতু।

খরস্রোতা নদী পদ্মা, বলা হয়ে থাকে আমাজনের পর সবচেয়ে স্রোতস্বিনী নদী এটি। এখানে বর্ষায় এমন গতিতে স্রোত থাকে, যে কোনো প্রকৌশলগত কাজ করা জটিল হয়ে পড়ে। সে স্রোত সামলেই করতে হয়েছে পদ্মা সেতুর কাজ।

সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে এই অসম্ভব কাজটিই আজ সম্ভব হয়েছে। দীর্ঘ নির্মাণ কাজ শেষে আগামী ২৫শে জুন উদ্বোধন হতে যাচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, পদ্মা নদীর তলদেশে মাটির গভীরে পাইল বসানো ছিলো সবচেয়ে কঠিন কাজ। পৃথিবীর আর কোনো নদীর ওপর সেতু বানাতে গিয়ে এতো গভীরে পাইল বসাতে হয়নি।

পদ্মা সেতুর সঙ্গে জড়িত প্রকৌশলীরা বলছেন, যমুনা সেতু ও গঙ্গা নদীর ওপর তৈরি হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণে অর্জিত জ্ঞান এই সেতুর নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হয়েছে।

পদ্মার তলদেশে এবং দু'পাশে রয়েছে নরম মাটি ও বালি। একারণে কাজটা ছিলো বেশ কঠিন ও জটিল।

মাটি নরম হওয়ার কারণে নদীর তল অনেক গভীরে চলে যেতে পারে অথবা দুই পাশ ভাঙতে পারে এই চিন্তা মাথায় নিয়েই করা হয়েছে পদ্মা সেতুর কাজ। শীতের সময় পদ্মা নদীতে গভীরতা থাকে ১০০ ফুটের কাছাকাছি। বর্ষার সময় এই গভীরতা দ্বিগুণ হয়ে যায়। এ কারণে চ্যালেঞ্জ ছিলো নদীর ওই গভীরতায় সেতুর যেসব পাইল বসানো হবে সেগুলোর ফাউন্ডেশন তৈরি করা।

নদীতে অনেক ভারী পাথর, কংক্রিটের ব্যাগ এবং জিওব্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে। যেসব পাথর ব্যবহার করা হয়েছে তার এক একটির ওজন ৮০০ কেজি থেকে এক টন।

পদ্মা নদী অত্যন্ত শক্তিশালী ও বিশাল। বিশ্বে খরস্রোতা যতো নদী আছে তার একটি এই পদ্মা। এর চেয়ে বেশি পানির প্রবাহ আছে পৃথিবীর একটি মাত্র নদীতে, সেটি আমাজন এবং ওই নদীর ওপর কোনো সেতু নেই।

পৃথিবীর ১০ থেকে ১৫টা বড় বড় নদীর মধ্যে দুটো হচ্ছে গঙ্গা ও ব্রম্মপুত্র। কিন্তু পদ্মা নদী হচ্ছে এই দুটো নদীর যোগফল।

সিরাজগঞ্জের উজানে ব্রম্মপুত্র ১২ থেকে ১৪ কিলোমিটার চওড়া। রাজশাহীতে পদ্মা চার থেকে ছয় কিলোমিটার প্রশস্ত। ফলে যে পরিমান পানি প্রায় ২০ কিলোমিটার জায়গা দিয়ে পার হচ্ছে সেই পানি মাওয়ায়, যেখানে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, ছয় কিলোমিটার প্রশস্ত পদ্মা নদী দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার চেষ্টা করে। ফলে স্রোতের ধারা বহুগুণ বেড়ে যায়।

পদ্মা নদীর তলদেশে মাটির গভীরে পাইল বসানোর কাজ।

বর্ষাকালে পানির এই স্রোত থাকে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় পাঁচ মিটার। অর্থাৎ এই নদী দিয়ে সেকেন্ডে ১৫ লাখ ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হয়। শীতকালে স্রোত কমে যায়, তখন তা থাকে সেকেন্ডে দেড় মিটারের মতো।

পদ্মা সেতুতে পানির স্রোত যখন দুই মিটারের কম ছিলো তখনই সেতুর নির্মাণ কাজ চালানো হয়েছে। কারণ বর্ষাকালে এখানে কাজ করা অসম্ভব।

বর্ষাকালে সেখানে কোনো বার্জ রাখা সম্ভব নয়। স্টিলের তার দিয়ে বার্জ বেঁধে রেখে কাজ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই তার ছিঁড়ে বার্জ ভেসে গেছে পানির স্রোতে।

প্রকৌশলীরা বলছেন, বর্ষাকাণে নির্মাণ কাজের সময় পদ্মা নদীতে বার্জ, ড্রেজার ও ক্রেনকে থর থর করে কাঁপতে দেখা গেছে।

সেতুটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যাতে এর শক্তিশালী পিলার নদীর প্রবল স্রোতের তোড়েও টিকে থাকতে পারে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পদ্মা সেতু,কারিগরি,প্রকৌশলী
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close