নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ জুন, ২০২১

বিআইপির সমীক্ষা প্রতিবেদন

পরিবেশ দূষণে ৭০ ভাগ দায়ী পরিবেশ অধিদপ্তর

প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) গবেষণায় জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুসংস্থান ধ্বংসের কারণ বিশ্লেষণের জন্য পরিবেশগত বিপর্যয়ের ১০০ টি কেইস স্ট্যাডি সমীক্ষা করেছে। যার মধ্যে পানি দূষণ ৪২, বায়ু দূষণ ২৯, মাটি দূষণ, বৃক্ষ নিধন ১৭, প্লাস্টিক দূষণ ৮ ও অন্যান্য দূষণ ৮।

আর পরিবেশগত বিপর্যয়ের ঘটনাসমূহ পর্যালোচনার মাধ্যমে বিআইপি’র সমীক্ষায় দেখা যায় যে, পরিবেশ ও প্রতিবেশ দূষণের শতকরা ৭০ ভাগ ঘটনার ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের দায় রয়েছে। আর শতকরা ৫০ ভাগ ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের দায় রয়েছে।

অনুরূপভাবে এ ধরনের পরিবেশ দূষণের ঘটনা বিশ্লেষণে নগর কর্তৃপক্ষ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে ৫০ শতাংশ, শিল্প কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ও পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ৫০, বনবিভাগ ৩০, সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব ৬০ ও জনগণের উদাসীনতার ৪০ শতাংশই ক্ষেত্রেই দায় রয়েছে।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এর উদ্যোগে শনিবার ‘বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধারে পরিকল্পনা’ শীর্ষক একটি পরিকল্পনা সংলাপে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান এ সমীক্ষা প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন।

এই প্রতিবেদনে পরিবেশ দূষণের কারণগুলো পর্যালোচনার মাধ্যমে পানি, বায়ু, মাটি, শব্দ ও প্লাস্টিক দূষণের পেছনে সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব, আবর্জ্যনা ব্যবস্থাপনার অভাব, অনিয়ন্ত্রিত ইটিপি বিহীন কলকারখানা স্থাপন করা। এছাড়া অবৈধ ইটভাটার আধিক্যতা, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই বিভিন্ন শিল্প কারখানা, ইটভাটা ও বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনকারী কার্যক্রম পরিচালনা, বন উদ্যান এর গাছ কেটে ফেলাসহ নানাবিধ পরিবেশগত বিপর্যয়ের চিত্র তুলে ধরা হয়।

এ সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, আন্তরিক সদিচ্ছা থাকলে বিদ্যমান পরিকল্পনা এবং আইন-নীতিমালার অনুসরণ ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পরিবেশকে প্রাধান্য দিয়েই আমাদের ভৌত ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা সম্ভব।

সংলাপে বিআইপি’র সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, পরিবেশের প্রতি আমাদের সংবেদনশীল হতে হবে এবং পরিবেশের প্রতি যত্নশীল থেকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাতে হবে। তিনি আরও বলেন, উন্নয়ন সংক্রান্ত সকল নীতিমালায় পরিবেশের বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে এবং পরিবেশ নিয়ে ভূল সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নের বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখেই আমাদের পরিকল্পনা ও উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবির-উল-জব্বার বাস্তুসংস্থান ও পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেন। একইসঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় মহা পরিকল্পনার অভাব এবং সাধারণ জনগণের অসেচতনতা আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এই পরিকল্পনাবিদ আরো বলেন, পরিবেশ রক্ষায় খুলনার খাল পুনরুদ্ধার চেষ্টা, খেলার মাঠ, পার্ক, উন্মুক্ত স্থান বৃদ্ধি, প্রতিবছর গাছ রোপণ, জ্বালানী হিসেবে ফসিল ফুয়েলের ব্যবহারকে নিরুসাহিত করে সোলার সিস্টেম কে উৎসাহিত করার সাম্প্রতিক উদ্যোগের কথাও বলেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. মাকসুদ হাশেম বলেন, পরিবেশ রক্ষায় নেয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ব্যর্থতার মূলে রয়েছে সমন্বয়হীনতা ও পরিকল্পনাকে বুঝতে না পারা। বিভিন্ন সময়ে নেয়া নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা গুলোর মালিকানা না থাকায় সেই পরিকল্পনাগুলোর বাস্তবায়ন ও হয়না।

এছাড়াও বিভিন্ন শহরের গৃহস্থালি বর্জ্য পানির ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক আলাদা না করার ফলে নদী খালের পানি দূষিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এই পরিকল্পনাবিদ আরো বলেন, ঢাকার নদী খাল রক্ষায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এর বিশেষ পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের টাউন প্ল্যানার আজমেরী আশরাফী রাজশাহী বলেন, পানি দূষণ রোধে সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও ড্রেনেজ পরিকল্পনা, বায়ু দূষণ রোধে ৪২ শতাংশ ভূমিকে কৃষি জমির জন্য বরাদ্দ রাখা এবং প্রতিটি সংস্থাকে তাদের কার্যক্রমে বৃক্ষ রোপণে উদ্বুদ্ধ করা। ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, যার কারণে রাজশাহী শহরে পরিবেশ এর মানদণ্ডে ভাল অবস্থানে আছে।

এছাড়াও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সকল সংস্থা ও সকল স্তরের মানুষকে একাত্ম করা অত্যান্ত জরুরি বলেও তিনি মন্তব্য করেন। মহাপরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব সকলের কাছে পৌঁছাতে পারলেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহজ হয় বলে মন্তব্য করেন এই পরিকল্পনাবিদ।

পিডিএসও/এসএম শামীম

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিআইপি,সমীক্ষা প্রতিবেদন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close