reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৬ জানুয়ারি, ২০২১

সঙ্গীর জন্য কাঁদছে চিড়িয়াখানার কাঞ্চি

বাংলাদেশের জাতীয় চিড়িয়াখানার কাঞ্চি নামের একটি গন্ডার পুরুষ সঙ্গীর জন্য পাগলপ্রায় অবস্থায় রয়েছে। সাত বছর আগে সঙ্গী হারানো কাঞ্চির জন্য করোনার কারণে পুরুষ গন্ডার জোগাড় করতে পারছেন না কর্মকর্তারা।

কাঞ্চির ভয়াবহ এই নিঃসঙ্গতা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদ সংস্থা এএফপি। গণমাধ্যমটির বাংলাদেশ অঞ্চলের ব্যুরো-চিফ শফিকুল আলম চিড়িয়াখানার কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে লিখেছেন, কাঞ্চির এখন সবচেয়ে উর্বর বয়স চলছে। এই দিনগুলোতে সঙ্গী বেশি করে দরকার। কিন্তু সঙ্গী মারা যাওয়ার পর সেই ২০১৪ সাল থেকে একা-একাই দিন কাটছে কাঞ্চির।

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মাঝে একবার ‘ভিন্ন সঙ্গী’ পায় কাঞ্চি। পুরুষ গন্ডার মারা যাওয়ার পর নিঃসঙ্গতা দূর করতে প্রাণী বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে তার সঙ্গে একই প্রজাতির তৃণভোজী ভেড়া রাখা হয়।

২০১১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কাঞ্চিদের আনা হয়। যার মালিক ছিলেন মেনেস নামের এক ব্যক্তি। তিন বছর বাদে অসুস্থ হয়ে মারা যায় পুরুষ সঙ্গীটি। তাতে নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে দেয় স্ত্রী গন্ডার কাঞ্চি। গঠন করা হয় মেডিকেল বোর্ড। কাঞ্চির প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে কাজের কাজ কিছুই হলো না। পরে যোগাযোগ করা হয় মেনেসের সঙ্গে। মেনেস জানান তিনি বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে আসলে চিড়িয়া খানায়ও ঘুরে আসবেন। মেনেস দেশে আসলে সোজা দেখতে যান কাঞ্চিকে। বুঝতে পারেন কাঞ্চি একাকিত্বে ভুগছে। দীর্ঘ সময় দেখাশোনার পর সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেন কাঞ্চির খাঁচায় যেন একটি তৃণভোজী কোনো প্রাণী দেয়া হয়। না হলে সে এভাবেই মারা যাবে। পরে ভেড়া দেয়া হলেও খুব একটা কাজ হয়নি।

রাজধানী ঢাকার বুকের এই চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীরাও ইদানীং কাঞ্চির অস্থিরতা বুঝতে পারেন। কিছু খেতে চায় না। প্রায়ই তার কেয়ারটেকার ফরিদ মিয়ার সঙ্গে অসংলগ্ন আচরণ করে।

ফরিদ মিয়া এএফপিকে বলেছেন, ‘তার মুড যখন-তখন পাল্টে যাচ্ছে। মাঝেমাঝে আমার ডাকেও সাড়া দেয় না। এত বছর একা থাকার কারণে এমনটা হয়েছে।’

‘আমি ওকে বলেছি খুব তাড়াতাড়ি সঙ্গী এনে দেব। কিন্তু শুনছে না। সঙ্গীর জন্য দিশেহারা হয়ে আছে।’

কাঞ্চির জন্য আফ্রিকা থেকে পুরুষ গন্ডার আনার পরিকল্পনা করছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু করোনার কারণে সম্ভব হচ্ছে না।

কাঞ্চির বিষয়টি আলোচনায় এসেছে পাকিস্তানের কাভান নামের একটি হাতির কারণে। কাভান তার বাংলাদেশি সঙ্গী সহেলিকে হারিয়ে প্রায় এক দশক নিঃসঙ্গ অবস্থায় দিন কাটিয়েছে। তাকে নিয়ে পাকিস্তানে আন্দোলন শুরু হওয়ার পর কম্বোডিয়ার একটি অভয়ারণ্যে পাঠানো হয়েছে।

মে মাসের শেষ দিকে দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রীলঙ্কা সরকার ১৯৮৫ সালে কাভানকে উপহার হিসেবে পাকিস্তানে পাঠায়। ওই সময় তার বয়স ছিল এক বছর। শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রতীক হিসেবে সাবেক পাক স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়া-উল-হক হাতিটি গ্রহণ করেন।

নিঃসঙ্গ কাভান পাগলের মতো আচরণ করতে থাকে ২০০২ সাল থেকে। পরে সে সঙ্গী হিসেবে পায় সহেলিকে। সহেলি ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে যায়।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সহেলি ২০১২ সালে মারা গেলে কাভান ‘নিঃসঙ্গতম হাতি’ হয়। তখন থেকে তার আচরণ বেশি খারাপ হতে থাকে। এক সময় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ তাকে শিকল পরায়।

ঢাকার কাঞ্চির পরিণতি কাভানের মতো যেন না হয়, সেই চেষ্টা করছেন চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা।

‘বন্দী অবস্থায় একটি গন্ডার সাধারণত ৩৮ বছর বাঁচে। কাঞ্চির সামনে তাই আরও অনেক দিন পড়ে আছে,’ চিড়িয়াখানার কিউরেটর আব্দুল লতিফ বলেন, ‘তাকে একটা সঙ্গী খুঁজে দেয়া আমাদের দায়িত্ব।’

কাঞ্চির শরীর এখনো ভালো থাকলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন ফরিদ মিয়া, ‘স্বাস্থ্য এখন ভালো আছে। কিন্তু ভবিষ্যতে কী হবে জানি না। খুব তাড়াতাড়ি ওর একটি সঙ্গী দরকার।’

পিডিএসও/ জিজাক

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কাঞ্চি,চিড়িয়াখানা,সঙ্গী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close