গাজী শাহনেওয়াজ

  ২২ মে, ২০২০

করোনা আতঙ্কে এমপিসহ সংসদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

সংসদ সদস্য ও তাদের পরিবার এবং সংসদ ভবনে দায়িত্ব পালনকারী নিরাপত্তাকর্মীরা একের পর এক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবাই রীতিমতো আতঙ্কে আছেন।

আগামী ১০ জুন বসছে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন। এই অবস্থায় অন্যান্য বছরের থেকে এবারের বাজেট অধিবেশন সংক্ষিপ্ত হলেও বাজেট পাসের বিশাল প্রক্রিয়ায় করোনাভাইরাস থেকে রক্ষায় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণই প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ২২ মার্চের জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশন স্থগিত করা হয়। তবে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে এই পরিস্থিতির মধ্যে গত ১৮ এপ্রিল জাতীয় সংসদের ইতিহাসে সংক্ষিপ্ততম অধিবেশন বসেছিল। সোয়া ঘণ্টা স্থায়ী ওই অধিবেশনে সংসদ সদস্যরা মাস্ক ও গ্লাভস পরে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে বসেছিলেন। আলোচনাও হয়েছিল খুবই সংক্ষিপ্ত।

কিন্তু নিয়মরক্ষার একদিনের অধিবেশনে করোনা বিষয়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা গেলেও বাজেট অধিবেশনে সেটা করা কঠিন।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বাজেট পাস একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়। ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের খসড়া প্রস্তাব মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন এবং একই দিনে তা সংসদ অধিবেশনে উত্থাপন করতে হবে। এরপর সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যদের আলোচনা শেষে ৩০ জুন পাস হবে। এর আগে সম্পূরক বাজেট পাস হবে। এই কাজে সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

আগে সংসদ সচিবালয়ের স্বল্পসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে একদিনের অধিবেশন চালানো গেলেও তা দিয়ে বাজেট অধিবেশন চালানো অসম্ভব। কারণ বাজেটের নথি বিতরণ, সংসদ সদস্যদের জন্য বিভিন্ন নথি সংসদ কক্ষে পৌঁছানো এবং গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের মধ্যে নথি বিতরণসহ বাজেট অধিবেশনে নানাবিধ কার্যক্রম রয়েছে।

আর একদিনের অধিবেশনে এমপিদের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হলেও ১৩৫ জন উপস্থিত ছিলেন। সে ক্ষেত্রে বাজেট অধিবেশনে সবার আলোচনার সুযোগ থাকায় উপস্থিতিও বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। ওই অধিবেশনে সাংবাদিক ও দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু বাজেট অধিবেশনে সেটা সম্ভব হবে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ফলে অধিবেশন নিয়ে চ্যালেঞ্জ থাকছেই।

এই পরিস্থিতিতে অধিবেশন নিয়ে চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি আতঙ্কও রয়েছে। কারণ, ইতোমধ্যে সংসদ ভবন এলাকায় অনেকেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। নির্বাচনী এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন নওগাঁ-২ আসনের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার। এর আগে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীর স্ত্রীর করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। এছাড়া কয়েকজন সংসদ সদস্যকে আইসোলেশনে যেতে হয়।

সর্বশেষ সংসদ ভবন এলাকায় দায়িত্ব পালনকারী ৭৯ জন আনসার সদস্যসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শতাধিক সদস্য এরইমধ্যে করোনা পজিটিভ হওয়ায় বাজেট অধিবেশনে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সংসদ ভবন কেন্দ্রীয়ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। এ জন্য অনলাইনে বাজেট অধিবেশন পরিচালনার প্রস্তাবও এসেছে। তবে এই পদ্ধতির অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অনেকে আবার এ বিষয়ে সংবিধানে কোনো নির্দেশনা নেই বলে মত প্রকাশ করেছেন। এই অবস্থায় রাষ্ট্রপতি অধিবেশন আহ্বানের পর অধিবেশন পরিচালনার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে বাজেট অধিবেশনে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আগামী ১১ জুন সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট পেশের প্রস্তাব করে অর্থ বিভাগ থেকে সংসদ সচিবালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আগামী ১০ জুন অধিবেশন আহ্বান করেছেন রাষ্ট্রপতি। অধিবেশনের প্রথম দিনে চলতি সংসদের সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন ও তা আলোচনা শেষে গ্রহণের পর অধিবেশন মুলতবি করা হবে। পরদিন সংসদের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করা হবে।

সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী, সংসদে উপস্থাপিত চলতি অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট এবং আগামী অর্থবছরের বাজেটের ওপর জাতীয় সংসদে সাধারণ আলোচনার বিধান রয়েছে। ফলে আলোচনা না করে বাজেট পাস হলে তা আইনি ব্যত্যয় হবে। যার কারণে যতদূর সম্ভব কম সময় আলোচনা করে বাজেট পাস করা হবে।

বিগত বাজেট অধিবেশনগুলোয় ৪০ থেকে ৬০ ঘণ্টা আলোচনা হয়েছে। তবে এবারের বাজেট আলোচনা হবে সংক্ষিপ্ত, যা পাঁচ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হতে পারে। গত বছর বাজেট অধিবেশন ২১ কার্যদিবসের হলেও এবার তা হবে সর্বোচ্চ ১৫ দিন। বাজেট বক্তৃতা সংক্ষিপ্ত করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সংসদ,করোনা আতঙ্ক,বাজেট অধিবেশন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close