নিজস্ব প্রতিবেদক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

  ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আজ চির নিদ্রায় শায়িত হবেন আল মাহমুদ

ঢাকায় দুটি জানাজা এবং সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সেই মৌড়াইল গ্রামে বাবা-মায়ের কবরের পাশে আজ শেষ ঠাঁই নেবেন ‘সোনালী কাবিন’র কবি আল মাহমুদ। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাব ও বায়তুল মোকাররম মসজিদে জানাজার আগে শ্রদ্ধা নিবেদনের অনুষ্ঠানটি হয় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে।

কবির বড় ছেলে শরীফ মাহমুদ জানিয়েছেন, আজ রোববার মৌড়াইল গ্রামে তৃতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার বাবাকে সমাহিত করা হবে।

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা কবি আল মাহমুদের জানাজা আজ বাদ জোহর ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের নিয়াজ মুহম্মদ স্কুল মাঠে হবে। পরে শহরের দক্ষিণ মোড়াইল কবরস্থানে তার মা-বাবার কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হবে। দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবির ইন্তেকালের খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।

রোগ-শোকসহ বিভিন্ন কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যাতায়াত প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন আল মাহমুদ। বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করা এই কবির পৈতৃক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের মৌড়াইল এলাকায়। শুক্রবার রাত ১১টা ৫ মিনিটে ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। গতকাল সকাল থেকে তার স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা বাড়িতে ভিড় করেন।

পরিবার সূত্র জানিয়েছে, আজ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মরহুমের গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন হবে। ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই মৌড়াইল গ্রামের মোল্লাবাড়ীতে জন্ম নেওয়া আল মাহমুদ দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে ছিলেন সবার বড়। পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকার কারণে মাঝেমধ্যে অল্প সময়ের জন্য পৈতৃক নিবাসে আসতেন। তবে কয়েক বছর ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসা-যাওয়া কমিয়ে দিয়েছিলেন।

কবি আল মাহমুদের ভাতিজা মীর রব্বান হোসেন বলেন, কাকা মাঝেমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এলেও নিজ পৈতৃক ভিটাতে থাকেননি প্রায় এক যুগের বেশি সময়। আর অসুস্থতাজনিত কারণে কয়েক বছর তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসেননি। নিজ বাড়িতে যখন আসতেন, তখন তার ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের ভিড় লেগে থাকত। গল্প করে অনেক সময় দিতেন। দিনে বেশির ভাগ সময় বসে থাকতেন বাড়ির সামনের পুকুর ঘাটে। বড়শি দিয়ে মাছও শিকার করতেন। তাকে স্থানীয়রা পিয়ারু মিয়া বলে ডাকত। তার আসল নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ।

তার ছোট ভাই মীর ফরহাদ হোসেন মারা গেছেন আগেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কবি আল মাহমুদের পৈতৃক ভিটা আছে কিন্তু নিজের ঘর নেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যখন আসতেন, উঠতেন ছোট ভাইয়ের বাড়িতে। পৈতৃক ভিটায় আগের দিনের একটি চৌচালা ঘর বা রাউডি ঘর ছিল। যখন তিনি আসতেন ওই ঘরে অবস্থান করতেন। সেখানে ঘরটি ভেঙে এখন ভবন করা হয়েছে। এতে মনে অনেক কষ্ট পেয়েছেন। এরপর থেকেই তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসা কমিয়ে দিয়েছিলেন।

আল মাহমুদের স্মৃতিচারণ করে তার ছোটবেলার সঙ্গী ভাষাসৈনিক মুহাম্মদ মুসা বলেন, একসঙ্গে আমরা ভাষা আন্দোলন করেছি ৫২ সালে। ছোটবেলা খেলার প্রতি আগ্রহ ছিল না আল মাহমুদের। তার বই পড়ার প্রতি আগ্রহ বেশি ছিল। শুধু বই পড়ত। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি স্বাধীন বাংলা পররাষ্ট্র দফতরে চাকরি করতেন। কাবলি বোন বইয়ে তিনি একটি লেখার পর তাকে জেলে পাঠানো হয়। পরে বঙ্গবন্ধু তাকে জেল থেকে মুক্ত করে শিল্পকলা একাডেমিতে প্রকাশনা পরিচালকের দায়িত্ব দেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এলে আমাকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতেন। আল মাহমুদের সাহিত্যের উত্থান আমার হাত ধরেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যত কালচারাল অনুষ্ঠান হতো একসঙ্গে করেছি। রবীন্দ্রনাথের পর বাংলা সাহিত্যে এমন কবি আর জন্ম নেবে না। অনেকেই আল মাহমুদের ওপর ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়েছেন।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নেওয়া কবি আল মাহমুদ ১৯৭৪ সালে গণকণ্ঠের সম্পাদক থাকাকালে কারাবরণ করেন। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক পদ থেকে অবসর নেন তিনি। সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি একুশে পদক, বাংলা একাডেমিসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চির নিদ্রায় শায়িত,আল মাহমুদ,কবি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close