নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ আগস্ট, ২০১৮

ভোগান্তি উপেক্ষা করে ঈদযাত্রা

আগামী বুধবার (২২ আগস্ট) সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আজহা পালিত হবে। তাই প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন রাজধানীর অসংখ্য মানুষ। পথঘাটের সব দুর্ভোগ উপেক্ষা করেই নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছেন তারা। পুরোদমে শুরু হওয়া ঈদযাত্রার প্রথম দিনে ছিল সড়কে যানজট আর বিলম্বে ট্রেন ছাড়ার বিড়ম্বনা।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী বাসটার্মিনাল এবং কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন যাত্রীদের পদচারণায় মুখর ছিল। তবে ঢাকা নদীবন্দরে (সদরঘাট) বাড়ি ফেরা মানুষের চাপ ছিল তুলনামূলক কম। আর ট্রেন স্টেশন জুড়েই ছিল ঘরে ফেরা মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ঈদযাত্রার প্রথম দিনেই ট্রেন শিডিউলের কিছুটা গড়বড় হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে ট্রেনগুলো নির্ধারিত সময়ে ছাড়লেও তিনটি ট্রেন যথাসময়ে যাত্রা করতে পারেনি। তবে সড়কপথে যানবাহনের চাপ বাড়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তবে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গতকাল যানজট ছিল না বললেই চলে, তবে যানবাহনে ছিল ধীরগতি।

সড়কপথে : গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ ছিল সকাল থেকেই। সড়কে যানজট থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন ঘরমুখো মানুষেরা। গাজীপুরের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ও এর আশেপাশে থেমে থেমে যানজট ছিল। সকালে ওই মহাসড়কের ওভারব্রিজের ওপর একটি ট্রাক বিকল হয়ে যাওয়ায় যানজট সৃষ্টি হয়। এই যানজট কালিয়াকৈর খারাজোরা এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিকেল থেকে যানজট কমে গাড়ি চলছে ধীর গতিতে। তবে চন্দ্রা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত কোনো যানজট ছিল না। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁ থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট ছিল। অন্যদিকে মহাসড়কে গরুবাহী ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহনের চাপ ছিল বেশি।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে গত বৃহস্পতিবার রাতে শুরু হওয়া যানজট গতকাল শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

হাইওয়ে পুলিশের দাউদকান্দির থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, ঈদ সামনে রেখে মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং চার লেন থেকে সেতুর দুই লেনে উঠতে গিয়ে গাড়ির গতি কমে যাচ্ছে। ফলে যানজট সৃষ্টি হয়েছে।

এ ছাড়া গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়া এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে অ্যালিগেন্ট গ্রুপের শ্রমিকরা। এতে ওই মহাসড়কে উভয়পাশে অন্তত ২০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা। কর্তৃপক্ষ ১০ দিনের বেতন পরিশোধের ঘোষণা দিলে প্রায় ৬ ঘণ্টা পর বিকেল ৪টার দিকে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর হাবিব ইস্কান্দার জানান, চলতি (আগস্ট) মাসের বেতনের দাবিতে হোতাপাড়ায় অবস্থিত অ্যালিগেন্ট গ্রুপের কারখানার শ্রমিকেরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। শ্রমিক ও কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা পর মালিক পক্ষ দাবি মেনে নিয়ে ১০ দিনের বেতন আগামী রোববার দেওয়ার ঘোষণা দিলে বিকেলে ৪টার দিকে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেয়।

ট্রেন যাত্রা : দীর্ঘ লাইনের অপেক্ষার পর গত ৮ আগস্ট যারা ট্রেনের আগাম টিকেট পেয়েছিলেন, তাদের ঈদযাত্রা গতকাল শুরু হয়েছে। রেলওয়ের ঈদযাত্রার প্রথম দিন সকাল থেকেই কমলাপুর স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে ঈদযাত্রার প্রথমদিনে ৩টি ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটে। খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস, দেওয়ানগঞ্জগামী তিস্তা এক্সপ্রেস ও দিনাজপুরগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস যথাসময়ে কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যেতে পারেনি। পরে সেগুলো পৌনে ১ ঘণ্টা থেকে পৌনে ২ ঘণ্টা বিলম্বে কমলাপুর ছেড়ে গেছে। ট্রেন দেরিতে আসায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নীল সাগর এক্সপ্রেসের যাত্রী আহসানুল কবির বলেন, প্রথম দিনেই দেরি, বাকি দিনগুলো কি হবে তা আল্লাহ জানে। তবে ভাগ্য ভালো খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। এখন ভালোভাবে বাড়ি যেতে পারলেই খুশি।

রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবার কোরবানির ঈদের ৪ দিন আগে থেকে ঈদের ৭ দিন পর্যন্ত বিভিন্ন গন্তব্যে ৯ জোড়া বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে। ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে দুটি করে, ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-দিনাজপুর, ঢাকা-লালমনিরহাট ও ঢাকা-খুলনা রুটে এসব ট্রেন চলবে। এ ছাড়া ভৈরব-কিশোরগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রুটে ঈদের দিন চলবে শোলাকিয়া স্পেশাল। ১৮ আগস্ট থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ২১ ও ২২ আগস্ট ঢাকা-কলকাতার ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেস বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া ২৩ আগস্ট খুলনা-কলকাতা রুটে চলাচলকারী বন্ধন এক্সপ্রেস বন্ধ থাকবে।

এ বিষয়ে কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ট্রেন ৩টি যথাসময়ে কমলাপুরে আসতে না পারার কারণে ছেড়ে যেতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। ট্রেনের সিডিউলে যেন বিপর্যয় না ঘটে সে চেষ্টাই করছি।

নৌ-পথে : ঈদযাত্রার প্রথম দিন সকালে রেলওয়ে স্টেশন ও বাস টার্মিনালগুলোতে ভিড় বাড়লেও ঢাকা সদরঘাটে যাত্রীর চাপ তেমন বাড়েনি। বিআইডব্লিউটিএর পরিবহন পরিদর্শক (টিআই) নিয়াজ আহমেদ বলেন, অন্য শুক্রবারে যে রকম যাত্রী যায়, আজ (গতকাল) সে রকমই আছে। সকালে চাঁদপুরের যাত্রী বেশি ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, বরিশালের উদ্দেশে গতকাল সকাল ৮টা ও সাড়ে ৮টায় গ্রিন লাইনের দুটি লঞ্চ ছেড়ে গেছে, সেখানেও যাত্রী ছিল ‘স্বাভাবিক’।

চাঁদপুরগামী এমভি মিতালী লঞ্চের চালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আজকে তেমন ভিড় নেই। কাল থেকে চাপ বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। মিতালী লঞ্চে সন্তানকে নিয়ে চাঁদপুর যাচ্ছেন শাহনাজ পারভীন। তিনি বলেন, তার স্বামী গত সোমবার অফিস ছুটি শেষে যাবেন। ঈদের আগে আগে ভিড় বেশি থাকে, তখন বাচ্চা নিয়ে যাওয়া অনেক কষ্ট। তাই একটু আগেই রওয়ানা দিলাম।

কোতয়ালি থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মওদুদ হাওলাদার বলেন, ঈদের যাত্রীদের নিরাপত্তায় সদরঘাটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৩০০ সদস্য পালা করে দায়িত্ব পালন করবেন।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ঈদযাত্রা,ভোগান্তি,ঈদুল আজহা,কোরবানির ঈদ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close