নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১২ জানুয়ারি, ২০২১

টিকাদান শুরু ফেব্রুয়ারিতে

*অনলাইনে নিবন্ধন ২৬ জানুয়ারি থেকে *টিকা নেওয়ার পর মাথা ঝিমঝিম করা, ব্যথা, বমি ভাব দেখা দিতে পাওে *আসতে পারে ফাইজারের টিকাও

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত এবং ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত নভেল করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম চালান ২৫ জানুয়ারির মধ্যে পৌঁছাবে বলে আশা করছে সরকার। সবকিছু ঠিক থাকলে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে মাঠপর্যায়ে এই টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেজন্য আগামী ২৬ জানুয়ারি থেকেই অনলাইনে নিবন্ধন শুরু হবে। গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম।

খুরশীদ আলম বলেন, ‘বেক্সিমকো ফার্মা আমাদের জানিয়েছে, আগামী ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে টিকা আসবে। টিকা আসার পর দুদিন বেক্সিমকোর ওয়্যার হাউসে থাকবে। সেখান থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকা অনুযায়ী বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের এমএনসিঅ্যান্ডএএইচ অপারেশনাল প্ল্যানের পরিচালক ডা. মো. শামসুল হক বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে টিকা পৌঁছাবে ২৭ জানুয়ারি। টিকা পাওয়ার পর কয়েকটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবকদের দেওয়া হবে। আর মাঠপর্যায়ে টিকা দেওয়া শুরু হবে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে।

টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (গবেষণা) ড. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা জানিয়েছেন, ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর মাথা ঝিমঝিম করা, ব্যথা, বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে। তবে সেটা শতকরা ২ থেকে ৩ ভাগের বেশি নয়। যেকোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রোধ করতে ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম কাজ করবে। ফাইজারের টিকাও পেতে পারে বাংলাদেশ। কোভ্যাক্স থেকে আট লাখ ডোজ পাওয়ার সুযোগ আছে ফেব্রুয়ারির মধ্যে।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত টিকা ‘কোভিশিল্ড’-এর তিন কোটি ডোজ আনতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে গত নভেম্বরে যে চুক্তি হয়েছিল, তাতে প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ পাওয়ার কথা বাংলাদেশের। বাংলাদেশে সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকার ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’ হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা সরবরাহ করবে। কোভিশিল্ড টিকা প্রত্যেককে দুই ডোজ করে দিতে হয়। সে কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রথমে পরিকল্পনা করেছিল, প্রথম চালানের ৫০ লাখ টিকার অর্ধেক ২৫ লাখ মানুষকে দিয়ে তাদের জন্য বাকি টিকা সংরক্ষণ করা হবে। তবে সেই পরিকল্পনায় পরিবর্তন এসেছে বলে জানিয়েছেন এ বি এম খুরশীদ আলম। তিনি বলেছেন, ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার নতুন তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ডোজ দেওয়ার দুই মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যাবে। সে কারণে প্রথম চালানে পাওয়া টিকা প্রথম মাসেই একসঙ্গে ৫০ লাখ মানুষকে দেওয়া হবে। এর আগে আমাদের জানানো হয়েছিল, প্রথম ডোজ দেওয়ার ২৮ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে। সে হিসেবে প্রথমে ২৫ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু রবিবার নতুন নিয়ম জানার পর আমরা পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনেছি। প্রথম যে ৫০ লাখ টিকা আসবে, তা দিয়ে দেওয়া হবে। দুই মাসের মধ্যে আরো টিকা আসবে।’

আসতে পারে ফাইজারের টিকাও : ফাইজারের টিকাও পাচ্ছে বাংলাদেশ। কোভ্যাক্স থেকে আট লাখ ডোজ পাওয়ার সুযোগ আছে ফেব্রুয়ারির মধ্যে। তবে, সংরক্ষণ নিয়ে জটিলতা থাকায় আপাতত ঢাকার ফ্রন্টলাইনারদের মধ্যেই ফাইজারের টিকা প্রয়োগ সীমিত রাখার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সবার জন্য স্বল্পমূল্যে কোভিড টিকা নিশ্চিত করতে কাজ করছে আন্তর্জাতিক টিকা জোট-কোভ্যাক্স। সেখান থেকে চাহিদার ২০ শতাংশ টিকা পাবে বাংলাদেশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ফাইজারের টিকা নিতে বাংলাদেশ ইচ্ছুক কি না তা জানতে চেয়ে গত ৬ জানুয়ারি সরকারকে চিঠি দেয় কোভ্যাক্স। বিষয়টি ইতিবাচকভাবেই দেখছে বাংলাদেশ। ওই টিকা পেতে হলে আবেদন করতে হবে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে। কোভ্যাক্সের চিঠির জবাব দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।

ফাইজারের টিকা সংরক্ষণ করতে হয় মাইনাস সেভেনটি ডিগ্রি সেলসিয়াস অর্থাৎ ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচের তাপমাত্রায়। দেশের কোথাও এই তাপমাত্রায় সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে কি না তা খতিয়ে দেখছে সরকার। বড় জটিলতা হলো, এই তাপমাত্রায় পরিবহনও করতে হবে। অবশ্য টিকা প্রয়োগের আগে পাঁচ দিন পর্যন্ত দুই থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়ও রাখা যায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, এই টিকা সংরক্ষণ বেশ চ্যালেঞ্জিং। মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়।

জনসংখ্যার দশমিক দুই পাঁচ শতাংশের জন্য প্রথম দফায় আট লাখ ডোজ মিলবে কোভ্যাক্স থেকে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে প্রয়োগ হচ্ছে ফাইজারের টিকা। এর অনুমোদনও দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
টিকাদান,ভ্যাকসিন,করোনার টিকা,স্বাস্থ্য
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close