reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৬ নভেম্বর, ২০২২

মিষ্টি আলুর পুষ্টিগুণ জানেন কি!

ফাইল ছবি।

মিষ্টি আলু। শর্করা জাতীয় একটি খাবার। তবে এটি শুধু শর্করা নয়। বরং পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি খাদ্য মিষ্টি আলু। বৈজ্ঞানিক নাম (Ipomoea batatas) ইপোময়া বেটাটাস । বাংলাদেশ, ভারত, চীন, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, আমেরিকা ও আফ্রিকাসহ নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে মিষ্টি আলু জন্মে থাকে। এসব দেশের মানুষের কাছে একটি প্রিয় খাদ্য উপাদানও বটে।

উপকারিতা মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণ বিটা ক্যারটিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, ফাইবার রয়েছে। মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য মতে, ‘একটি মিষ্টি আলুতে ১০০-এর বেশি ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে, যা প্রতিদিনের ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে থাকে।’ হাত-পায়ের আঙুল ফুলা কমানো, কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রসাবের সমস্যা দূর করাসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য এর পাতা ও মূল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাছাড়া এর পাতা শাক হিসেবে বেশ সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সম্মৃদ্ধ। অনেক ফসলে তুলনায় মিষ্টিআলুর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি।

পুষ্টিগুণ মিষ্টি আলুর যেগুলির রাঙা আবরণ- এর মধ্যে যে পুষ্টি উপকরণ তা সাদা মিষ্টি আলুর তুলনায় বেশি। ১০০ গ্রাম ওজনের একটি মিষ্টি আলুতে আছে ১০০ ক্যালোরি বা কার্বোহাইড্রেট, ২ গ্রাম প্রোটিন, ২২ গ্রাম শ্বেতসার, ৩ গ্রাম আঁশ, ০ গ্রাম চর্বি। এছাড়া একটি মিষ্টি আলু থেকে প্রতিদিনের চাহিদা ২৬০ ভাগ ভিটামিন ‘এ’, ১২.৬ ভাগ, ভিটামিন বি১- ১১ মিগ্রা, বি২- ১১ মিগ্রা, বি৩- ৫মিগ্রা, বি৬- ২৯ মিগ্রা, বি৯- ৬ মিগ্রা। একইসঙ্গে ভিটামিন সি ১৯.৬ মিগ্রা, ভিটামিন ই ৭১ মিগ্রা, ক্যাশশিয়াম ৩৮ মিগ্রা, লৌহ ৬৯ মিগ্রা, ম্যাগনেসিয়াম ২৭ মিগ্রা, ফসফরাস ৫৪ মিগ্রা, পটাশিয়াম ৪৭৫ মিগ্রা, সেডিয়াম ৩৬ মিগ্রা ও জিংক ৩২ মিগ্রা. পাওয়া যায়।

মিষ্টিআলু ভাত আলুর চেয়ে অধিক পুষ্টিকর। মিষ্টিআলু প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে হালুয়া, পায়েশ, ফিরনি, চিপস, জ্যাম, জেলি, মিষ্টি, ভর্তা, তরকারি এসব তৈরি করা যায়। দুধের সঙ্গে মিষ্টিআলু মিশিয়ে খেলে অন্যরকম স্বাদ লাগে। মিষ্টিআলুর পাতা বা শাক সুস্বাদু হওয়ায় পুষ্টিকর তরকারি হিসেবে গ্রাম বাংলায় যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে শুঁটকি, ছোটমাছ আর মাছের মাথা দিয়ে রান্না করলে বেশ স্বাদের হয়। মিষ্টিআলু জমি থেকে তুলে ৩-৪ মাস পর্যন্ত অনায়াসে সংরক্ষণ করা যায়।

পুষ্টির উৎস ভিটামিন ‘সি’ ও ‘ডি’ : মিষ্টি আলু ভিটামিন সি ও ডি-এরও সমৃদ্ধ উৎস। ভিটামিন সি ঠাণ্ডা প্রতিরোধে ও ভিটামিন ডি স্বাস্থ্যকর হাড়, হৃৎপিণ্ড, স্নায়ু, ত্বক ও দাঁতের জন্য জরুরি। ভিটামিন সি দাঁত, হাড় এবং কোষ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্ষত সারাতে, শরীরে কোলাজন উৎপাদন করে ত্বকের নমনীয়তা ধরে রাখতে ভিটামিন সি-এর প্রয়োজন হয়।

আয়রন : মিষ্টি আলু আয়রনেরও ভালো উৎস। এটি আমাদের শরীরে শ্বেতকণিকা তৈরি, চাপ প্রতিরোধ, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কার্যকর রাখাসহ নানা উপকার করে।

খনিজ উপাদান : মিষ্টি আলুতে ম্যাঙ্গানিজ ও পটাশিয়ামসহ বিভিন্ন খনিজ উপদান রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। ফলে নিয়মিত মিষ্টি আলু খেলে ধমনী, রক্ত, হাড় ও মাংসপেশির সুস্থতায় ও স্নায়ুর সুষ্ঠভাবে কাজ করে। এ ছাড়া রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধ : মিষ্টি আলু প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি হয়, যা রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। প্রাকৃতিক চিনি কাজের শক্তি প্রদান করে অবসাদ, ক্লান্তি দূর করে থাকে। মিষ্টি আলুতে প্রাকৃতিকভাবে চিনি থাকলেও তা খুব ধীরে ধীরে রক্তের সঙ্গে মিশে যায়। এতে শরীর শুধু শক্তির নিয়মিত জোগানই পায় না, শরীরে শক্তির ভারসাম্যও বজায় থাকে। এটি শর্করা হলেও বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, মিষ্টি আলু রক্তের সুগার মান সুস্থিতিতে এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হ্রাস করতে বেশ উপযোগী। মিষ্টি আলুতে বেশ আঁশ আছে, এর গ্লাইসিমিক ইনডেক্স বেশ নিচুতে (৫০)। তবে এতে আরো কিছু উপাদান আছে এ জন্য রক্তের সুগার কমাতে এটি উপযোগী। আমাদের চর্বি কোষ থেকে উৎপন্ন হয় প্রোটিন হরমোন ‘এডিপোনেকটিন’। যাদের ডায়েবেটিস তাদের শরীরে এডিপোনেক্টিন হরমোন নিচু এবং মিষ্টি আলুর নির্যাস টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে এডিপোনেকটিন মান তাৎপর্যপূর্ণভাবে বাড়ায়। তবে অতিরিক্ত পারিমাণ খেলে হীতে বিপরীত হতে পারে। তাই প্রতিদিন একটির বেশি মিষ্টি আলু খাওয়া উচিৎ নয়।

পেটের রোগ উপসম : ইরিটিবেল বাউয়েল সিনড্রোম (আইবিএস) এবং আলসারেটিভ কোলাইটিসের মতো পেটের রোগেও উপকারী। মিষ্টি আলুতে আরো রয়েছে প্রদাহরোধী গুণ। দেখা গেছে, মিষ্টি আলুতে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট যা আছে, সেগুলো প্রদাহসূচকগুলো হ্রাসে সহযোগী।

হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে : এ সবজি ভিটামিন বি৬-এর একটি ভালো উৎস। এটি আমাদের শরীরে হোমোসাইস্টিন নামের কেমিক্যাল কমাতে সহায়তা করে। এই কেমিক্যাল হৃদরোগসহ নানা ধরনের অসুখের অন্যতম কারণ। পটাশিয়াম হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিক রাখতে, কিডনি সুরক্ষায় ও একে কর্মক্ষমতা স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখে।

Harvard University School of Public Health এক গবেষণায় দেখেছেন যে, মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি৬ রয়েছে, যা রক্তের হমোসাইটিনিন ভেঙ্গে দিয়ে রক্তের ধমনী এবং শিরায় রক্ত চলাচল সচল রাখে। এর পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রেখে হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া ইলেক্ট্রোলাইট হার্টবিট নিয়মিত রাখে।

রাতকানা রোগ প্রতিরোধ : রাতকানা রোগের ক্ষেত্রেও এর উপকারিতা লক্ষ্য করা যায়। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে রোগীকে প্রাণীর, বিশেষ করে খাসীর কলিজার সাথে মিষ্টি আলু খাওয়াতে হবে ।

বীর্য ধরে রাখে : বৃক্কের কার্যক্ষমতায় ঘাটতি বা কাঙ্ক্ষিত সময়ের আগেই বীর্যস্খলন-এর সমস্যায় এই উদ্ভিদ বেশ কার্যকরী। গবেষণায় আরো দেখা গেছে, মিষ্টি আলুতে যে সব ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট রয়েছে, এগুলো ভারি ধাতু ও মুক্ত মূলকের সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি হ্রাস করার ব্যাপারে বেশ সহায়ক। সুতরাং যারা সহবাসের সময় বীর্য ধরে রাখতে অক্ষম, তারা প্রতিদিন অন্তত একটি করে মিষ্টি আলু খেতে পারেন।

ক্যান্সার প্রতিরোধক : দেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হলো বিটা-ক্যারটিন। একটি মাঝারি আকৃতির মিষ্টি আলুতে ভিটামিন ‘এ’ এবং বিটা-ক্যারটিন রয়েছে। ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা, দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। School of Public Health’s Department of Nutrition গবেষণায় দেখেছেন যে, বিটা ক্যারটিন প্রোসটেট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে থাকে।

কীভাবে খাবেন? তাজা মিষ্টি আলু খুব ভালো। ঝলসানো বা সেঁকা আলু সঙ্গে দধি (টক দধি) খুব ভালো খাবার। সুপ ও স্টু বানাতেও এ সবজিটি ব্যবহার করা যেতে পারে। মিষ্টি আলুর থেকে খুব ভালো সুস্বাদু মিষ্টি তৈরি হয়। মিষ্টি আলুর গোলাপ জাম মিষ্টি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বেশ জনপ্রিয়। এ ছাড়া সিদ্ধ করে বা তরকারী হিসেবেও মিষ্টি আলু খাওয়া যায়। সূত্র : ইন্টারনেট

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মিষ্টি আলু,খাদ্য,বাংলাদেশ,ভারত,চীন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close