reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

মাস্ক পরতে উদাসীনতায় বাড়তে পারে সংক্রমণ

দেশে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে উদাসীনতা কমবেশি ছিল নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার শুরু থেকেই। সরকারের নজরদারি কমে যাওয়ায় উদাসীনতা বেড়েছে কয়েকগুণ। যারা এখনো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন তাদেরও অনেকে এমন মনোভাব ব্যক্ত করছেন যে কোভিড প্রতিরোধী টিকা পেয়ে গেলে আর মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার দরকার হবে না। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা নেওয়াটাই নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকার একমাত্র নিশ্চয়তা নয়।

দেশে কোভিড প্রতিরোধী গণটিকাদান কার্যক্রম চলছে গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১১ দিনে টিকা নিয়েছেন ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৩১৩ জন। দেশে কোভিড সংক্রমণও কিছুটা নিম্নগামী। এ অবস্থায় জনসাধারণের মধ্যে মাস্ক পরার ব্যাপারে ব্যাপক শিথিলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মাস্কের প্রতি এমন উদাসীনতাকে উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। টিকাদান কার্যক্রম চলা অবস্থায়ও মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, নিয়মিত বিরতিতে হাত ধোয়াসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন তারা।

কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘মাস্ক পরতে হবে, এর বিকল্প এখনো নেই।’ বাংলাদেশে কোভিড পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে ফ্লাইট আসছে। তাদের মাধ্যমে দেশে আবার ছড়াতে পারে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী সম্প্রতি প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘সাধারণভাবে একটা রোগের টিকা তৈরি করতে ৭ থেকে ১০ বছর লাগে। গড়ে লাগে সাড়ে সাত বছর। টিকা প্রয়োগ-পরবর্তী দুই বছর একে ফার্মাসিক্যাল সার্ভিলেন্ট পিরিয়ড হিসেবে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। কিন্তু অবস্থা বিবেচনায় বিজ্ঞানীরা ১২ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে করোনাভাইরাসের টিকা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন। তাই এখনই বলা যাচ্ছে না, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের ‘কোভিশিল্ড’ টিকার কার্যকারিতা মানবদেহে কত দিন থাকবে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এর কার্যকারিতার মেয়াদ হবে এক বছর। তবে এই সময় বাড়তে পারে, আবার কমতেও পারে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কত দিনে দেশের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া যাবে?’

টিকা নেওয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে কি না জানতে চাইলে লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘টিকা দেওয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি মানার বাধ্যবাধকতা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। কারণ টিকা নেওয়ার পর কোভিডে আক্রান্ত না হলেও অন্যকে সংক্রমিত করার ক্ষমতা থাকবে। টিকা নেওয়া ব্যক্তির শরীরে কোভিড-১৯ প্রবেশ করলে তা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে লড়াই করবে পরাজিত হবে, কিন্তু ওই সময় তার হাঁচি-কাশি-স্পর্শে অন্যকে আক্রান্ত করবে।’

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘ভ্যাকসিন দেওয়ার পর ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে অন্তত দুই সপ্তাহ লাগবে। কিন্তু অ্যান্টিবডি তৈরি হলেও একজন ব্যক্তি ভাইরাসের পোষক হতে পারেন। তাই ভ্যাকসিন নিলেও মাস্ক পরতে হবে। এ টিকার কার্যকারিতা কত দিন থাকবে বা কতজনকে টিকা দিলে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হবে এসব এখনো অজানা।’

মানুষের মধ্যে মাস্ক নিয়ে অসেচতনতা বেড়েছে, এটি একেবারেই অনুচিত বলে মন্তব্য করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘একজনকে দেখে যেন আরেকজন মাস্ক ছেড়ে না দেয় সেদিকেও নজর দিতে হবে। আর টিকা নিয়ে নিজে সুরক্ষিত থাকলেও কিন্তু ওই ব্যক্তি বাহক হতে পারেন। তার মাধ্যমে অন্য কেউ আক্রান্ত হতেই পারে।’

টিকার কার্যকারিতা কত দিন থাকবে সে তথ্য না থাকার কথা জানিয়ে জনস্বাস্থ্যবিদ চিন্ময় দাস বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মানলে কেবল করোনাভাইরাস ঠেকানো নয়, অন্য উপকারও রয়েছে। আর সবাইকে যেহেতু একসঙ্গে ভ্যাকসিন দেওয়া যাচ্ছে না তাই স্বাস্থ্যবিধি মানা জরুরি।’

একই মত দেন আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ বিশ্বের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিনেটেড না হচ্ছে ততক্ষণ স্বাস্থ্যবিধি মানতে হয়। কারণ যেকোনো দেশে যেকোনো সময় আবার আউটব্রেক হতে পারে।’

পিডিএসও/ জিজাক

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মাস্ক,করোনা,কোভিড ১৯,করোনাভাইরাস
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close