reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০

করোনায় ডিজিটাল জীবন

ভবিষ্যতে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে তো বটেই, এমনকি পেশাগত ক্ষেত্রেও যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠতে চলেছে এই ভার্চুয়াল জগত। আর তাই এর সঙ্গে সঙ্গে ভার্চুয়াল শিষ্টাচার আর নৈতিকতা নিয়েও ভাবার সময় হয়ে গেছে। আগের যেকোন সময়ের চাইতে এটা এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

ঘরবন্দি জীবনে আড্ডার কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। এখন কেউ যখন জিজ্ঞেস করে 'কেমন আছ?', আমরা 'ভালো আছি' বলি না, বলি 'সুস্থ আছি'। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে কিভাবে যেন আমাদের ভার্চুয়াল জগতের ভাষাগুলো বদলে যাচ্ছে।

অদূর ভবিষ্যতে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে তো বটেই, এমনকি পেশাগত ক্ষেত্রেও যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠতে চলেছে এই ভার্চুয়াল জগত। আর তাই এর সঙ্গে সঙ্গে ভার্চুয়াল শিষ্টাচার আর নৈতিকতা নিয়েও ভাবার সময় হয়ে গেছে। আগের যেকোন সময়ের চাইতে এটা এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

না, খুব শক্ত ধরাবাধা 'কোড অফ কন্ডাক্ট' এর কথা বলা হচ্ছে না। তবে ভাবার বিষয় হল: ভার্চুয়াল মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগের অনেক কিছুই বাদ পড়ে গেছে, যেমন আপনার হাসি, বা হাতের কোন একটা অঙ্গভঙ্গি, যাকে আমরা অবাচনিক যোগাযোগ বলে থাকি। এই ব্যাপারগুলোর অনুপস্থিতিতে অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। আপনি যা বোঝাতে চান নি কেউ হয়তো তাই বুঝে নিল। বিব্রত হলেন। ভুল ভাঙাতে আরও ব্যাখা, সেখানেও নতুন ভুলের ঘটনা ঘটতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে সতর্কতা স্বরূপ প্রাথমিক মাত্রার কিছু শিষ্টাচারের কথা এখন মাথায় রাখতে হবে।

আর সঙ্গে এ ব্যাপারটাও মাথায় রাখতে হবে আমরা সবাই একটা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। করোনারি এই দুঃসহ কালে একজন আরেকজনের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকাটা কিন্তু সবচেয়ে জরুরি।

ভিডিও কল

এই লকডাউন পরিস্থিতি এসে সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তনটা এনেছে তা হলো- আগের যেকোন সময়ের চাইতে আমরা এখন অনেক বেশি ভিডিও কলে কথা বলি। স্কাইপ, জুম, গুগল হ্যাঙআউট, হোয়াটসঅ্যাপ এমনকি মেসেঞ্জারেও। কোথাও কোথাও হয়তো লকডাউন শিথিল হয়েছে কিছুটা, কিন্তু অফিস-আদালতের কাজকর্ম আগের অবস্থায় ফেরেনি এখনও। আর সেক্ষেত্রে ভিডিও কল বা মিটিং আরও অনেক দিনই অব্যাহত থাকবে বলে মনে হচ্ছে।

আমরা আড্ডায় বা সামনাসামনি বসে কথা বলতে গিয়ে, আমাদের মুখের কথার সঙ্গে সঙ্গে অনেক বেশি শারীরিক বিভিন্ন ভাষাও ব্যবহার করি: যেমন হাসি, হাতের অঙ্গভঙ্গি, সম্মতি জ্ঞাপনে মাথা ঝাঁকানো। এসবকিছুই আমাদের যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু ভিডিও কলে বা ভার্চুয়াল অন্য মাধ্যমে এই দৈহিক অবাচনিক ভাষাগুলো চাপা পড়ে যায়।

এছাড়া ভিডিও কলে খুব সহজেই মনোযোগ অন্যদিকে চলে যেতে পারে, হয়তো অবচেতনেই আপনি আপনার ইনবক্সের মেসেজ চেক করছেন- তখন কিন্তু কথা বলাটা মুশকিল হয়ে পড়ে। আবার গ্ৰুপ কলে একজনের কথা বলার মাঝখানে অন্য একজন কথ বলা শুরু করে দিল, যা বিরক্তি উৎপাদন করে। কারো কারো কাছে এটা অশিষ্টও ঠেকতে পারে।

তো এই পরিস্থিতি এড়াতে কি করা যায়? আপনি যদি কথা বলতে চান, হাত তুলতে পারেন। কয়েকটি ভিডিও অ্যাপে ক্যামেরার দিকে আঙ্গুল তুললে ডিজিটালি আলো আপনার ছবির উপরে পড়বে। ফলে বাকিরা বুঝতে পারে যে আপনি এখন কথা বলতে চাচ্ছেন। এছাড়াও আগে থেকে আলোচনার বিষয়বস্ত ঠিক করে রাখা যেকোন মিটিঙের জন্য ভালো, এতে করে এলোমেলো কথার সুযোগ তৈরি হয় না।

ভিডিও কলের ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- আপনি যখন কথা বলছে না তখন 'মিউট' বাটন (মাইক্রোফোন আঁকা বোতামটি) চাপ দিন। নয়তো আপনার চারপাশের শব্দ বাকিদের বিরক্ত করবে, যিনি কথা বলছেন তারও অসুবিধা হবে। এরপর যখন আপনি আবার কথা বলবেন, বাটনটিতে চাপ দিয়ে চালু করে নিন।

কাজের পরিবেশ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে

পরিবর্তিত কাজের পরিবেশের সঙ্গে কাজও বেড়ে গেছে আমাদের। এখন অনেককেই নতুন করে শিখতে হচ্ছে ডিজিটাল অফিসের অনেক কিছু। আগে অফিসে কর্মীরা কাজ করছে কি করছে না সরাসরি দেখতে পেতেন বড়কর্তারা। কিন্তু এটা একটা অসম্ভব ব্যাপার হয়ে গেছে, এখন প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কে কি কাজ করছে, দেখে আসা সম্ভব নয়। তাহলে?

চারপাশে এখন এমন অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে যে, কাউকে কাউকে অফিস বা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে দিনে ১২/১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত সরাসরি জুমে থাকতে হচ্ছে। এবং এই পরিবর্তিত পরিস্থিতি কাজের পরিবেশ নিয়েও ভাবতে বাধ্য করছে সবাইকে।

তবে সারাক্ষণ অনলাইনে সাড়া দিলেই যে কাজের মান ভালো হয়ে যাচ্ছে এমন না। বরং এতে মনোযোগ ব্যাহত হওয়ার ঘটনাটি ঘটে বেশি। এক্ষেত্রে প্রত্যেকের সুবিধা হয় এমন একটা সময় ঠিক করে নেওয়া যেতে পারে মিটিঙের জন্য। তখনই প্রত্যেকে যার যার কাজের অগ্রগতি নিয়ে জানাতে পারেন।

মহামারির এই সময়টাতে আমরা অনেকেই অনেকভাবে মানিয়ে নিচ্ছি, যোগ্যতার পরিচয় দিচ্ছি। বাড়িতে বসে কাজ করার বিষয়টা শুনতে যতই আরামদায়ক মনে হোক না কেন, আমাদের অনেকের জন্যই বিষয়টা সহজ নয়। কারও বাড়িতে হয়তো আলাদা ঘর নেই নিরিবিলি কাজ করার জন্য। কারও বাড়িতে হয়তো ভালোমানের ইন্টারনেট সংযোগ নেই। আর প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার বিষয়টা তো আছেই।এই বিষয়গুলো চিন্তা করেই কাজের ধরণে যেমন পরিবর্তন আনতে হবে, পরিবর্তন আনতে হবে দৃষ্টিভঙ্গিতেও।

দূরত্বটা বাইরের হোক, মনের নয়

প্রিয়জনের নিরাপত্তার জন্যই এখন দূরে থাকছি আমরা। কিন্তু সেই দূরত্বটা যেন মনে স্থান না পায়। এখন বরং আমরা আরও সুযোগ পাচ্ছি তাদের পাশে থাকার। কিন্তু মাঝে মাঝে এই অবিরত ফোন কল, ভিডিও কলও ক্লান্তিকর হয়ে উঠতে পারে। কেননা আমাদের প্রিয় মানুষগুলো তো শুধু তাদের কন্ঠস্বর নয়, তাদের স্পর্শ, পাশে থাকার, একসঙ্গে সবাই মিলে বসে আড্ডা দেওয়ার সময় হাতে গরম চায়ের উষ্ণতা- এইসব কিছু মিলেই তো প্রিয় মানুষ। তাই ডিজিটাল যন্ত্রের পর্দায় তাদের দেখতে পাওয়াটা ক্লান্তিকর হতেই পারে।

বিশেষজ্ঞ মতামতও তাই: লন্ডনভিত্তিক সাইকোথেরাপিস্ট ও লেখক অ্যারন বালিক বিখ্যাত মার্কিন দৈনিক দ্য নিউ ইউর্ক টাইমসকে এ প্রসঙ্গে বলেন, এই ক্লান্তি আসাটা স্বাভাবিক। তাই মাঝে মাঝে বিরতি নেওয়া উচিৎ। নয়তো সেটা অনেকটা কাজের মতোই একঘেয়ে মনে হবে।

আরেকজন প্রফেসর কক্স, তিনিও দ্য নিউ ইউর্ক টাইমসকে বলেন, একটা ভালো সমাধান হতে পারে প্রত্যেকটা কাজের জন্য ডিভাইস আলাদা রাখা। যেমন আপনি অফিসে কাজের জন্য ল্যাপটপ ব্যবহার করছেন, প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলতে ফোন বা ট্যাব ব্যবহার করতে পারেন।

যদিও এমনিতেই 'স্ক্রিন টাইম' আমাদের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু কাজের প্রয়োজনে হয়তো আমাদের ডিজিটাল আর ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগাযোগ করতে হচ্ছে সর্বক্ষণ। আর যত দিন যাচ্ছে প্রবণতা দেখে মনে হচ্ছে যেন এই মাধ্যমে যোগাযোগ আরও বাড়বে আমাদের।

কাজেই এই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে কিছু নিয়ম বোধকরি ঠিক করে নেওয়া জরুরি। নয়তো ভুল বোঝাবুঝির যেমন সুযোগ আছে, তেমনি বিঘ্ন ঘটতে পারে কাজ ও ব্যক্তিগত সম্পর্কেও ক্ষেত্রেও। অতএব এখনই সতর্ক হোন। খবর নিউ ইয়র্ক টাইমস।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
করোনা,ডিজিটাল,জীবন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close