জন্মদিনের শুভেচ্ছা
দুঃখ-বেদনার কোলেকাঁখেই মিলনের শৈশব
অকপটে সত্য বলতে প্রয়োজন সাহস। এ সাহস সবার না থাকলেও ইজাজ আহমেদ মিলন সঞ্চয় করেছেন। নিজের বিরুদ্ধে গেলেও প্রকাশ করেছেন গভীর এ সত্য। কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জ্বলে পুড়ে খাঁক হয়েও থেমে থাকেননি তিনি। বেদনাকে জন্ম সহোদর করেই ইজাজ আহমেদ মিলন সফলতার গল্প রচনা করে যাচ্ছেন লাগামহীন ঘোড়ার বেগে। অথচ কোনো ক্লান্তি ছুঁয়ে যায়নি তার বেদনাগ্রস্ত দেহ।
অন্তর্ভেদী দৃষ্টি এবং নিজস্ব শৈলীর সমন্বয়ে ইজাজ আহমেদ মিলন তৈরি করেছেন তার কাব্যজগত। তার কবিতায় রয়েছে প্রেম, বিরহ, দ্রোহ, সমাজ সচেতনতার সুষম বিন্যাস। নানা ছন্দময় ভঙ্গিমায় কবি ইজাজ মিলন নিজেকে বিলিয়ে দেন কাব্যের পঙক্তিতে। লিখেন প্রখর জীবনবোধের গল্প। ইজাজ আহমেদ মিলন কবিতায় বারবার খুঁজেছেন অদৃশ্যের দর্শন।
২০০৯ সালে 'নষ্ট শরীর ভিজে না রৌদ্রজলে' কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে কাব্যজগতে আত্মপ্রকাশ ঘটান কবি ইজাজ আহমেদ মিলন। প্রথম গ্রন্থের জন্য লাভ করেন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম (চ্যানেল আই) এবং সিটি ব্যাংক প্রবর্তিত 'সিটি আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার'। উল্লেখ্য যে, একই বছর একই মঞ্চে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি নির্মলেন্দু গুণসহ বরেণ্য আরো অনেকেই। যা ইজাজ মিলনের জন্য এক অনন্য প্রপ্তি। পুরস্কার গ্রহণের সময় তিনি এই পুরস্কারকে নোবেলের সাথে তুলনা করে ফেলেন। কিন্তু সায়ীদ স্যার এর বিরোধিতা করে বলেছিলেন, সামনে আরো বড় বড় অনেক পুরস্কার অপেক্ষা করছে। সায়ীদ স্যারের কথার সত্যতা দেখালেন ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাংবাদিকতা দেশের সেরা পুরস্কার 'বজলুর রহমান স্মৃতিপদক' নিজের করে নেওয়ার মাধ্যমে। বলে রাখা ভালো, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ভিন্ন গ্রাম ঘুরে ঘুরে ২৫ জন শহীদ পরিবার খুঁজে বের করেন মিলন। পরিবারের সদস্যদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন তৈরি করেন। যা পরবর্তীতে '১৯৭১:বিস্মৃত সেইসব শহীদ' নামক গ্রন্থে রূপ নেয়। এটি নিঃসন্দেহে পরিশ্রমের কাজ। যা মিলন নিজ তাগিদেই করেছেন এবং প্রতিটি শহীদের জীবন কাহিনী লিখতে গিয়েও দেখিয়েছেন তার শব্দ নির্মাণের দক্ষতা। অত্যন্ত দরদ দিয়ে লেখা এ গ্রন্থটিকে 'হৃদয় চেরা ইতিহাস' কিবা 'যেন একাত্তরের রণক্ষেত্র' আখ্যায়িত করে অনেকেই লিখেছেন জাতীয় দৈনিকগুলোর পাতায়।
ইজাজ আহমেদ মিলন পেশায় সাংবাদিক হলেও সক্রিয় আছেন সাহিত্যের নানা বিষয়ে। কবিতা, গল্প, গান সব দিকেই রেখে যাচ্ছেন সমান অবদান। কবিতা,গল্প,প্রবন্ধ,জীবনীগ্রন্থ,গবেষণাধর্মীগ্রন্থ সব মিলিয়ে এযাবৎ তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ডজনখানেক।কবি শামসুর রাহমান পরবর্তী সময়ের শক্তিমান কবি আল মাহমুদ মিলনের কবিতা পাঠ করে লিখেছেন, 'ইজাজের মতো তরুণ কবিরাই একসময় উত্তীর্ণ হয়ে যায়।' জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের অনুপ্রেরণায় প্রবেশ করেছেন গল্প তৈরিতে।প্রখর জীবনবোধের গল্প নিয়ে প্রকাশিত হয় গল্পগ্রন্থ 'ছাতিম গাছের মৃতছায়া।' ইজাজ মিলনের গল্প সম্পর্কে বরেণ্য সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী লিখেছেন, - 'মিলন তার কবিতার মতো গল্প লেখাতেও সমান মুনশিয়ানা দেখিয়েছে।' অথচ জীবনের সঙ্গে ভয়াবহতম যুদ্ধ করেই তিনি আজ ইজাজ আহমেদ মিলন। তার জীবন যুদ্ধের সাহসী গল্প নিয়েই রচনা করেছেন 'আত্মকথন : বেদনা আমার জন্ম সহোদর'।এতো অল্প বয়সে আত্মজীবনী লিখে চারপাশে ছড়িয়েছেন আলোচনা-সমালোচনার ঢেউ।তবুও দমে যাননি। নিজের লড়াকু জীবনের কথা জানিয়েছেন।দিয়েছেন অকপট স্বীকারোক্তি।
বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য অবদান রেখে যাবেন এমন ছাপ তার লেখায় খুঁজে পাওয়া যায়। তার লেখায় মা মাটির গন্ধ পাওয়া যায় প্রখর ভাবে। এই ছোট্ট জীবনে যেভাবে বেদনাকে ধারন করে এগিয়ে চলেছেন তাতে অনুধাবন করা যায় সে থেমে যাবেন না সহসা। নিজেকে নিজে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন দিনের পর দিন। নিয়ে যাচ্ছেন এক অনন্য উচ্চতায়।
দুঃখ আর বেদনার কোলেকাঁখেই কেটেছে মিলনের শৈশব।বাড়ি বাড়ি কাজ করেছেন,রিক্সা চালিয়েছেন।তবুও থেমে থাকেননি তিনি।স্রষ্টার প্রতি অগাধ বিশ্বাস নিয়ে চলেছেন সামনের দিকে।পরম যত্নে শৈশবের কাঁটা বিছানো রাস্তা করেছেন মসৃণ।এভাবেই ছুটে যাচ্ছেন তিনি তার পরিচিত এক গন্তব্যের দিকে।পিছন ফিরে তাকাতে হচ্ছেনা আর।
সার্টিফিকেট অনুযায়ী ইজাজ আহমেদ মিলন ১৯৮৭ সালের আজকের দিনে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ঘন সবুজে আচ্ছাদিত মাওনার আক্তাপাড়া গ্রামে নানা বাড়ি জন্মগ্রহণ করেন।কিন্তু তার জন্ম ১৯৮৭-'র বছর তিন-চার আগে।বাবার পকেট ডাইরিতে পুত্রের জন্ম তারিখ লিপিবদ্ধ করা হলেও জন্ম সাল লিপিবদ্ধ করেননি।এজন্য সার্টিফিকেটের এই জন্মসালেই পরিচিতি পাচ্ছেন এই লড়াকু মানুষ।আজ ইজাজ আহমেদ মিলনের ৩১ তম জন্মদিন।জন্মদিনে জীবন যুদ্ধের লড়াকু মানুষের প্রতি অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা।- রাহাত রাব্বানী/ পিডিএসও/রানা