reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ইরানে বিক্ষোভকারী নারীদের ধর্ষণের হুমকি

ছবি : সংগৃহীত

মাটিতে ফেলে একজন অফিসার তাঁর বুট দিয়ে আমার পিঠে আঘাত করে। সে আমার পেটে লাথি মারে, আমার হাত বেঁধে একটি ভ্যানে ওঠায়। এভাবেই ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার বর্ণনা দিচ্ছিলেন ৫১ বছর বয়সী মরিয়ম (ছদ্মনাম)।

নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে ২২ বছর বয়সী তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর ইরান জুড়ে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভ দমাতে ব্যাপক ধরপাকড় চালাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। গ্রেপ্তার হয়েছেন হাজারো মানুষ। গ্রেপ্তারকৃতদেরই একজন মরিয়ম।

মরিয়ম বিবিসিকে বলেন, আপনারা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে যা দেখছেন পরিস্থিতি তার চেয়েও খারাপ। একজন কমান্ডারকে সেনাদের নির্দয় হওয়ার নির্দেশ দিতে শুনেছি। নারী অফিসাররাও ভয়ংকর। তাদের একজন আমাকে চড় মেরেছে এবং ইসরায়েলি গুপ্তচর ও যৌনকর্মী বলে গালি দিয়েছে।

বিবিসি কর্তৃক যাচাইকৃত ভিডিওতে দেখা গেছে, নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করছে এবং ধরতে পারলে গ্রেপ্তার করছে। স্যাম নামের একজন বিক্ষোভকারী বলেন, আমি একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে ঠেলে দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু দ্রুত সেখানে কয়েকজন এসে পৌঁছায়। আমাকে নির্মমভাবে মারধর করে তাঁরা।

স্যাম আরও বলেন, তাঁরা আমাকে এবং অন্যান্য বন্দীদের একটি বাসের মেঝেতে একজনের ওপর আরেকজন করে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত রেখেছিল। আমি রাজনৈতিক বন্দীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট রাইসির ভূমিকার কথা ভাবছিলাম। কিছুক্ষণের জন্য মনে হয়েছিল, আমাকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে। তাদের যখন রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনীর হেফাজতে স্থানান্তর করা হয় তখন পাশে থাকা অন্য আটককৃতরা প্রতিবাদ করছিলেন বলে জানান মরিয়ম।

মরিয়ম বলেন, ভ্যানে আমার সঙ্গে অন্য মেয়েরাও ছিল। কিন্তু তাদের বয়স অনেক কম। তাদের সাহসিকতা আমাকে মুগ্ধ করে। তাঁরা চিৎকার করছিল এবং অফিসারদের নিয়ে মজা করছিল। এই প্রজন্ম আমাদের প্রজন্ম থেকে আলাদা। তাঁরা অকুতোভয়।

মরিয়ম আরও জানান, তাঁরা আমাকেসহ অন্তত ৬০ জন নারীকে একটি ছোট ঘরে রাখে। আমরা একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম এবং বসতে বা নড়াচড়া করতে পারিনি। টয়লেট ব্যবহারের সুযোগ ছিল না। যখন আমরা রুমের ভেতরে চিৎকার করে প্রতিবাদ করি। তখন তাঁরা হুমকি দিতে থাকে যে, আমরা চুপ না থাকলে আমাদের ধর্ষণ করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ১৩ সেপ্টেম্বর হিজাব নীতি লঙ্ঘনের অভিযোগে মাহসা আমিনিকে তেহরান থেকে গ্রেপ্তার করে ইরানের নৈতিকতা পুলিশ (মোরালিটি পুলিশ)। তিন দিন পর শুক্রবার হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশের নির্যাতনের কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এরপর শুরু হয় বিক্ষোভ।

ইরান হিউম্যান রাইটস বলেছে, দেশটির অন্তত ৮০টি শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, রাজধানী তেহরানের আশপাশের শহরগুলোতে বিপুলসংখ্যক মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছেন। বিক্ষোভ দমনে কাঁদানে গ্যাস, বেয়নেট, জলকামান ও গুলির মতো প্রচলিত অস্ত্রের পাশাপাশি ব্যবহার করা হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। সেই সঙ্গে চলছে গণহারে গ্রেপ্তার। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, দেশটিতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে আটক করা হচ্ছে। আর নিহত হয়েছেন প্রায় ১০০ বিক্ষোভকারী।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ইরান,বিক্ষোভ,মাশা আমিনি,ধর্ষণ,নিরাপত্তা বাহিনী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close