অনিক আহমেদ, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক
প্রাণহীন শীতের ক্যাম্পাস
প্রকৃতির নিয়ম মেনে বছর ঘুরে শীত আসে। নভেম্বরে শুরু হলেও শীতের তীব্রতা জানুয়ারিতেই বেশি অনুভব হচ্ছে। হাড়কাঁপানো শীতের মাঝেই অনেকে এই ঋতুর আসল সৌন্দর্য খুঁজে পান। তবে করোনার প্রকোপে শিক্ষার্থীরা এবার ক্যাম্পাসে শীতের সৌন্দর্য উপভোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
প্রতি বছরের মতো এবারও সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) কুয়াশার চাদর মুড়িয়ে শীত তার আগমনী বার্তা জানান দিচ্ছে। একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ, তবে শিক্ষক-কর্মকর্তারা নিয়মিতই অফিস করছেন। চারদিকে শীতও ভালোমতো জেঁকে বসেছে। দীর্ঘসময় পেরিয়ে গেলেও সূর্যের দেখা মিলছে না! কিন্তু অবসর নেই ক্যাম্পাসে দায়িত্বরতদের। শীত কমবেশি যেটাই হোক, সূর্যের দেখা পাওয়া যাক বা না যাক, সময়মতো ঠিকই অফিস করতে হচ্ছে।
সাধারণত বছরের এ সময়ে ফেসবুকে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্ট্যাটাসের মাধ্যমেই ক্যাম্পাসে শীতের সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। কিন্তু এবার শিক্ষার্থী নেই। হয়তো সেজন্যই উৎসাহী কিছু শিক্ষক-কর্মকর্তা ক্যাম্পাসের শীতের ছবি আপলোডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব পালন করছে! অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাসায় বসে সেগুলো দেখে প্রাণের ক্যাম্পাসকে মিস করছে।
গ্রাম ও শহর, দুই ধরণের পরিবেশের ছোঁয়া থাকায় গণ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শীতের অন্যরকম চিত্র দেখা যায়। খুব সকালে অজপাড়া গ্রামের শীতের সৌন্দর্য এবং একইসাথে ইট-পাথরের তৈরি শহুরে শীত, দুই-ই একসাথে মিলবে এখানে। তাই সবুজে ঘেরা ৩২ একর ক্যাম্পাস এখন শিক্ষার্থীদের বড় আফসোসের জায়গা! এ নিয়ে ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদের শিক্ষার্থী তৌহিদ মোর্শেদ বলেন, গত তিন বছর শীতের ক্যাম্পাস দেখেছি। তখন তেমন কিছু মনে হয়নি। এবার আসলেই ক্যাম্পাসে শীত উপভোগ মিস করছি!
শীতে ক্যাম্পাসের পিঠাঘরে বিভিন্ন ধরণের পিঠা খেতে শিক্ষার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা যেত। করোনাতে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও আবার চালু হয়েছে পিঠাঘর। তবে ভিড় কম। দরকারি কাজে আশপাশে অবস্থানরত কিছু শিক্ষার্থীই ক্যাম্পাসের অন্যতম জনপ্রিয় এই স্থানটিকে সরগরম রাখার চেষ্টা করছে। অবসরে পিঠা হাতে কিছু শিক্ষককেও সেখানে আড্ডা দিতে দেখা যায়।
ভলিবল, বাস্কেটবল, ব্যাডমিন্টন কোর্ট সবই আগের মতো আছে। শীতে সারা দিন ব্যস্ত থাকা এই খেলার মাঠগুলো যেন নিস্তব্ধ হয়ে আছে। বাদামতলা, সুবিশাল ফুটবল-ক্রিকেট মাঠে শীতের সোনালি রোদে শিক্ষার্থীদের আড্ডা নেই। গ্রুপ স্ট্যাডির সদস্যগুলো যেন হারিয়ে গেছে! ক্যান্টিনে শীতের সকালে শিক্ষার্থীরা এখন চায়ের কাপে চুমুক দেয় না। শীতে বিছানা ছেড়ে দ্রুত ক্লাস ধরার ব্যস্ততাও যেন হারিয়ে গেছে। তবে সব হতাশা ছাপিয়ে দ্রুতই পৃথিবী সুস্থ হবে, স্বাভাবিক হবে সবকিছু। সবার পদচারণায় প্রাণের ক্যাম্পাস আবারও মুখরিত হবে, এটাই এখন সবার প্রত্যাশা।
পিডিএসও/হেলাল