বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক

  ২১ অক্টোবর, ২০২১

নিউ ইয়র্কে ব্যবসায়ীর অনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রবাসীরা হতবাক!

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের হোম কেয়ার ব্যবসায়ী শাহ নেওয়াজের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে হতবাক হয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তার দু'টি হোম কেয়ার ব্যবসায় প্রাপ্ত পে-চেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম (পিপিপি) ঋণের (মওকুফযোগ্য) তথ্য একজন অংশীদারের কাছে গোপন রেখে প্রতারণার আশ্রয় নেন। ঋণের সঠিক পরিমাণ ও হিসাব চাওয়ায় তিনি ওই অংশীদারকে হয়রানির উদ্দেশ্যে তাকে মারধর ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে পুলিশে নালিশ করেন।

অভিযোগের ভিত্তিতে সাবেক অংশীদার ও নিউ ইয়র্কের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পরিচিত মুখ যন্ত্রশিল্পী (কিবোর্ড বাদক) পার্থ গুপ্তকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ স্টেশনে আটকে রাখার খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে হতবাক হয়ে পড়েন নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এ ঘটনায় নিউ ইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের বাংলাদেশ কমিউনিটিতে বইছে নিন্দার ঝড়। মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।

গত ১০ সেপ্টেম্বর রাত ১টা ২৯ মিনিটে নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের জ্যাকসন হাইটসের নর্দার্ন ব্লুভার্ড-১১৫ এলাকার পুলিশের কাছে গিয়ে শাহ নেওয়াজ (ওরফে শাহ মোহাম্মদ নেওয়াজ, ওরফে শাহ এম নেওয়াজ, ওরফে মোহাম্মদ এস নেওয়াজ) অভিযোগ করেন যে, তার ব্যবসার সাবেক অংশীদার পার্থ গুপ্ত তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে তার ফোনে লিখিত বার্তা পাঠিয়েছেন। দুই মাস আগে ২৯ আগস্ট জ্যাকসন হাইটসের ৭৬-৩৭ স্ট্রিটের ওপর বাংলাদেশিদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত একটি পথমেলায় তার গোল্ডেন এজ হোম কেয়ারের সাবেক অংশীদার পার্থ গুপ্তসহ কয়েকজন মিলে সন্ধ্যা ৬টা/সাড়ে ৬টার দিকে তাকে মারধর করেন। এ সময় তার জীবননাশের উদ্দেশ্যে তারা বিপজ্জনক যন্ত্র (পিস্তল, রিভলভার, রাইফেল, শর্টগান কিংবা মেশিনগান) প্রদর্শন করেন (ডকেট নম্বর-'সিআর-০২০৫৬০-২১ কিউএন')। এজন্য তার জীবনের নিরাপত্তার জন্য তিনি পুলিশের সাহায্য চান।

তার অভিযোগের সূত্র ধরে গত ৪ অক্টোবর (সোমবার) সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের নর্দার্ন ব্লুভার্ড-১১৫ এলাকার পুলিশ কর্মকর্তা টেলর স্কালা পার্থকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ষ্টেশনে যাবার জন্য আহবান জানান। ফোন পেয়ে পার্থ স্বেচ্ছায় পুলিশ স্টেশনে গেলে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত পর্যন্ত তাকে সেখানে আটক রাখেন।

পরদিন ৫ অক্টোবর (মঙ্গলবার) ক্রিমিনাল কোর্টের বিজ্ঞ বিচারক পার্থের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। মামলার বাদী শাহনেওয়াজ কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখারও নির্দেশ দেন আদালত। অতি সম্প্রতি তিনি আরও একজন সঙ্গীতশিল্পীকে একই পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে হয়রানির চেষ্টা করেন। রাজীব নামের এ সঙ্গীতশিল্পী তার গোল্ডেন এজ হোম কেয়ারের একজন কর্মচারি ছিলেন। পার্থ গুপ্তের 'মাটি ব্যান্ডে'র সঙ্গীতানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার কারণে করোনা মহামারি সময়ে চলতি বছরের ৭ জুলাই রাত ২টা ৪৯ মিনিটে টেক্সট ম্যাসেস পাঠিয়ে রাজীবকে চাকরিচ্যুত করেন শাহ নেওয়াজ। দূরত্ব বজায় রাখার আদালতের নির্দেশ সংক্রান্ত কাগজের ভয় দেখিয়ে শাহ নেওয়াজ পার্থকে পুনঃরায় গ্রেপ্তার করানোর হুমকি দিচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।

নিউ ইয়র্কের যন্ত্রশিল্পী (কিবোর্ড বাদক) পার্থ গুপ্ত কর্তৃক হোম কেয়ার ব্যবসায়ী শাহ নেওয়াজকে মারধর ও হত্যা চেষ্টার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশার মানুষের সাথে কথ হয় এ প্রতিবেদকের। তারা কেউই এ ঘটনাটিকে সহজভাবে মেনে নিতে পারছেন না। শাহ নেওয়াজের এ অভিযোগকে তারা মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে উল্লেখ করেন।

গত ২৯ আগষ্ট জ্যাকসন হাইটসের ৭৬-৩৭ স্ট্রিটের পথমেলার আয়োজক ও ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটস ডেভেলপমেন্ট ইউএসএ প্রেসিডেন্ট শাহ্ শহীদুল হক (সাঈদ) বলেন, এ ঘটনাটি একটি ন্যাক্কারজনক। শাহ নেওয়াজ নিজেকে একজন কমিউনিটির নেতার পরিচয় দিয়ে এজকন নিরীহ মানুষের নামে এ ধরনের একটি মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তিনি নিজেকেই ছোট করেছেন।

তিনি বলেন, পুলিশের কাছে শাহ নেওয়াজ যে অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণই মিথ্যা, কারণ তিনি ওই পথমেলার আয়োজক ছিলেন। সেখানে সার্বক্ষনিক পুলিশি প্রহরার ব্যবস্থা ছিলো। পার্থ দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মঞ্চে কীবোর্ড বাজিয়েছেন। তিনিও সেখানে সার্বক্ষনিক উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে এমন একটি অপ্রীতিকর (মারধর ও বন্দুক প্রদর্শন) ঘটনা ঘটলে প্রথমেই জানতো পুলিশ এবং আয়োজকবৃন্দ। শাহ নেওয়াজ কারও কাছেই কোনো অভিযোগ করেননি। এমনকি তিনি স্বেচ্ছায় পুলিশকেও ফোন করেননি। এতেই প্রমাণিত হয় যে, ঘটনাটি মিথ্যা ও সাজানো।

পথমেলার শব্দ নিয়ন্ত্রক ও কন্ঠশিল্পী তানভীর শাহীন বলেন, তিনি সারাদিন উক্ত মেলায় ছিলেন, এমন কোনো ঘটনার কথা শোনেননি তিনি। শাহ নেওয়াজ যেভাবে তার ব্যবসার অংশীদার পার্থকে ঘায়েল করতে মিথ্যা অভিযোগ সাজিয়েছেন সেটা প্রমাণ করতে না পারলে উল্টো তারই বিপদ হবে বলে মনে করেন শাহীন। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

কমিউনিটি এক্টিভিষ্ট ও ব্যবসায়ী ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার বলেন, যেহেতু পার্থ গুপ্ত ও শাহ নেওয়াজের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব রয়েছে। এ সমস্যা নিজেরাই মিটিয়ে নিতে পারতেন। এমন একটি অভিযোগ নিয়ে পুলিশ আদালত পর্যন্ত যাওয়া মোটেই ঠিক হয়নি। এখনো সময় আছে সমঝোতা করে তাদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব মেটানোর, তা নাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকেই যাবে বলে মনে করেন তিনি।

নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পত্রিকার বেশ কয়েকজন সম্পাদক ও সাংবাদিকের কাছে পার্থ গুপ্ত ও শাহ নেওয়াজের মধ্যে সৃষ্ট ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রায় প্রতিটি বাংলাদেশি হোম কেয়ার ব্যবসায়ীদের মধ্যেই পে-চেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম (পিপিপি) ঋণ সংক্রান্ত প্রতারণা রয়েছে। এ ধরনের অপরাধকে ধামাচাপা দিতে শাহ নেওয়াজ পুলিশের তার সাবেক অংশীদারের বিরুদ্ধে যে ন্যাক্কার জনক অভিযোগ করেছে তা নিন্দনীয়। নিউ ইয়র্কের সাংবাদিক ও সম্পাদকদের ঘটনার গভীরে গিয়ে সত্য প্রকাশ করার সাহস নেই। কারণ বছর বছর ধরে শাহ নেওয়াজ তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিয়ে পত্রিকাগুলোর মুখ বন্ধ করে রেখেছে। এ ঘটনার বিস্তারিত খবর তারা প্রথম বাংলা প্রেস অনলাইনে দেখেছেন। এ ধরনের সাহসী সংবাদ প্রকাশ করার জন্য তারা বাংলা প্রেস'কে ধন্যবাদও জানান।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নিউ ইয়র্ক,প্রবাসী,হয়রানি
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close