reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২১ মার্চ, ২০২৪

যৌন হয়রানি ও হত্যার হুমকির প্রতিবাদে উত্তাল জবি

ছবি কোলাজ : প্রতিদিনের সংবাদ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকাকে আত্মহত্যা ও আরেক শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মীমকে যৌন হয়রানি-হত্যার হুমকির ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। এ ঘটনার প্রতিবাদে ও ৫ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা উপচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন।

ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলায় দুই দিনের রিমান্ডের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রায়হান আম্মান সিদ্দিকীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। গতকাল বুধবার দুপুর ১টার দিকে আম্মানকে আদালতে আনা হয়। এ ঘটনার মধ্যেই আরেক ছাত্রীর যৌন হয়রানির ঘটনা সামনে এসেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে।

রায়হান আম্মান সিদ্দিকীকে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি আদালতের পরিদর্শক মুজিবুর রহমান নিশ্চিত করেন।

এর আগে একই মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে এক দিনের রিমান্ড শেষে গত মঙ্গলবার কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের হাজতে পাঠানো হয়। গতকাল আবারও দ্বীন ইসলামের জামিন আবেদন করা হলে আদালত তা নাকচ করে দেন। একদিনের রিমান্ড শেষে দ্বীন ইসলামকে কুমিল্লার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এদিকে অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় প্রাথমিক পর্যায়ে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী যৌন ও সব ধরনের নিপীড়নবিরোধী সেল সক্রিয় ও কার্যকর করার দাবি জানিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার সামনে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ নামের ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায়। সংবাদ সম্মেলন শেষে উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি দেয় শিক্ষার্থীরা।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী কর্মকান্ড নেই। প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা একটি স্বাধীন, শিক্ষার্থীবান্ধব ও প্রাথমিক পর্যায়ে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী যৌন ও সব ধরনের নিপীড়নবিরোধী সেল সক্রিয় ও কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি।

পাঁচ দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপি

১. অবন্তিকা হত্যার সব প্রমাণ আমলে নিয়ে দ্রুত বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিশ্ববিদ্যালয় আইনে এবং রাষ্ট্রীয় আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

২. দ্রুততম সময়ে সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকর করতে হবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভয়মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ নির্মাণ করতে হবে।

৩. অংকন বিশ্বাসসহ পূর্বে দায়েরকৃত সব অভিযোগের দ্রুত তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

৪. আগের প্রক্টরিয়াল বডির বিরুদ্ধে গ্রহণযোগ্য তদন্ত করতে হবে এবং দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

৫. ফাইরুজ অবন্তিকা এবং অংকন বিশ্বাসদের স্মৃতিতে ক্যাম্পাসে দুটি স্থায়ী ফলক নির্মাণ করতে হবে।

এদিকে শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ দেওয়ায় হত্যাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেওয়া হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম ও টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মীমকে। এ ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে গত ১৮ মার্চ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ কার্যালয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন ও বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ হালিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন ওই শিক্ষার্থী।

গতকাল বুধবার ওই দুই শিক্ষক ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের কার্যালয়ে অভিযোগের ব্যাপারে অভিযোগকারী ছাত্রী ও অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে বলে ডিবির একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, ভুক্তভোগীর পরিবারের স্বজনদেরও ডাকা হয়েছে। গত সোমবার দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে ওই শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন। ওই দিন বিকেলে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার বিভাগের শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন আমাকে যৌন হেনস্তা করেছেন। অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে বিভাগের চেয়ারম্যান ও অভিযুক্ত শিক্ষক আমাকে সেটি তুলে নিতে নানাভাবে চাপ দিতে থাকেন। এতে রাজি না হওয়ায় তারা আমাকে হাত-পা কেটে হত্যা করাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন। আমাকে একঘরে করে দেওয়া হয়। আমাকে বিভিন্ন পরীক্ষায় শূন্য নম্বর দিয়ে ফেল করানো হয়। অনার্সের ফাইনালের ভাইভায় আমাকে ফেল করানো হয়।

তার অভিযোগ, ২০২১ সালে আবু সাহেদ ইমন তাকে যৌন হেনস্তা করেন। তারপর অভিযোগ দেওয়া হলে তার জীবনে নেমে আসে নির্যাতনের খড়্গ। সম্প্রতি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় যৌন হয়রানি ও নানা নিপীড়নের বিরুদ্ধে এ শিক্ষার্থী সোচ্চার হন। সেখানেই অবন্তিকার ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে নিজের প্রসঙ্গও আসে। গণমাধ্যমে নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। এরপর থেকে তাকে হত্যাসহ বহিষ্কারের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, আমাকে একঘরে করে দেওয়া হয়েছে। আমি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছি না। কখন আমাকে মেরে ফেলা হয় সেটা জানি না। শুধু আমি না, আমার পরিবারকেও নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে বাঁচতে ডিবি কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছি।

পিডিএস/এমএইউ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জবি,ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা,কাজী ফারজানা মীম,প্রতিবাদ
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close