সম্পাদকীয়

  ২৯ জুলাই, ২০১৯

নদীর বিপর্যয় ঠেকানো আজ সময়ের দাবি

একসময় ঢাকাকে বলা হতো প্রাচ্যের ভেনিস। চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নদী আর জলাশয় সে সময়ের পরিচ্ছন্ন ঢাকাকে এই গৌরব এনে দিয়েছিল। পাশাপাশি সবুজ চাদরে ঢাকা বিস্তীর্ণ নগর ছিল নান্দনিকতার জীবন্ত উপমা। কিন্তু কালপরিক্রমায় আমরা তার কিছুই ধরে রাখতে পারিনি। হারিয়েছি সবুজের সমারোহ। খালের অস্তিত্ব হয়েছে বিলীন। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দূষিত নদীর অবস্থান এখন ঢাকাতেই। দূষণের মাত্রা বিবেচনায় বুড়িগঙ্গাকে এখন আর নদী না বলে ভাগাড় বললে বেশি বলা হবে না। পানি আর পানি নেই। নদীটির পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন পৌঁছেছে শূন্যের কোঠায়। পানির দূষণমাত্রা পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বুড়িগঙ্গার প্রতি লিটার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ সদরঘাট এলাকায় শূন্য দশমিক ২৪ মিলিগ্রাম। ধোলাইখালের ফরিদাবাদ এলাকায় দশমিক ৭৯, শ্যামপুর খালের মুখে দশমিক ৯৮, পাগলা ওয়াসা ট্রিটমেন্ট প্লান্টের নির্গমন ড্রেনের ভাটিতে দশমিক ৫৬, পাগলায় দশমিক ৬৬, মিটফোর্ড হাসপাতালের কাছে দশমিক ২৯ ও চাঁদনি ঘাটে দশমিক ৫১ মিলিগ্রাম। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের তথ্য অনুযায়ী মৎস্য ও জলজ প্রাণীর জন্য প্রতি লিটার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন থাকার কথা ন্যূনতম পাঁচ মিলিগ্রাম।

ঢাকা মহানগরীতে প্রতিদিন যে পয়োবর্জ্য বেরিয়ে আসে, তার পরিমাণ ১৩ লাখ ঘনমিটার। এর মধ্যে পাগলা পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগারে মাত্র ৫০ হাজার ঘনমিটার পরিশোধন করা হচ্ছে। বাকি ১২ লাখ ৫০ হাজার ঘনমিটার অপরিশোধিত অবস্থায় সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। স্বাভাবিক কারণেই নদী আর নদী থাকছে না। পরিণত হচ্ছে ভাগাড়ে। একসময় হাজারীবাগের ট্যানারি বর্জ্যও মিশত বুড়িগঙ্গাতেই। আর বুড়িগঙ্গার তীরে গড়ে ওঠা শিল্প-কারখানার ৯০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য প্রতিদিন কলুষিত করছে নদীটিকে। নদীর দূষণ রোধে আদালতের নির্দেশ মানছে না কেউ। উপেক্ষিত হচ্ছে সেই নির্দেশ। কারখানা আছে। উৎপাদিত পণ্যে মুনাফাও কম নয়। কিন্তু ইটিপি চালু করতে অনীহা মালিকপক্ষের। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে তদারককারী কর্মকর্তারাও এ ক্ষেত্রে উদাসীন থেকেছেন। মালিকপক্ষের অনীহা, কর্মকর্তাদের উদাসীনতা এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত না থাকার ফলে পঙ্গুত্বে ভুগতে হচ্ছে বুড়িগঙ্গাকে।

কনজার্ভ এনার্জি ফিউচারের ২০১৯ সালের তথ্য মতে, বিশ্বের দূষিত নদীর তালিকায় সবার ওপর অবস্থান করছে ভারতের গঙ্গা। দ্বিতীয় শীর্ষ নদীটি ইন্দোনেশিয়ার সিতারাম। তৃতীয় চীনের ইয়োলো। চতুর্থ ইতালির সারনো এবং পঞ্চমে ঢাকার বুড়িগঙ্গা। বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত দূষণের ফল এটি। বর্ষা মৌসুমে দূষণের মাত্র কিছুটা কমলেও বর্ষা সরে গেলে আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে সে বাধ্য। এর একমাত্র কারণ দূষণের উৎসগুলো বন্ধে কার্যকর কোনো ভূমিকা নেই। শুধু বুড়িগঙ্গাই নয়, ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দূষণমাত্রাও সীমা অতিক্রম করছে। আমরা মনে করি, একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই পারে নদীগুলোর জীবন ফিরিয়ে দিতে। সরকার এরই মধ্যে বেশ কিছু পরিকল্পনাসহ কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে। তার এই ইতিবাচক কাজ আমাদের উৎসাহিত করেছে। এ কাজে তার সাফল্য আসবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। আমাদের নদী ও জলাশয় তাদের হারানো যৌবন ফিরে পেয়ে এই নগর আবার প্রাচ্যের ভেনিসে পরিণত হোক।

পিডিএসও/রি.মা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সম্পাদকীয়,নদীর বিপর্যয়
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close