কথাসাহিত্যে বর্তমান সময়ে সৈয়দ নূরুল আলম একটি পরিচিত নাম। তিনি খুব অল্প কথায় এবং অতিরিক্ত শব্দ বর্জন করে কিভাবে গদ্য লিখতে হয়, তা ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। শুধু গদ্য লেখেন যে তা নয়, তিনি কবিতাও লেখেন। গদ্য লেখার শক্ত কলমে খুব সহজ ও সাবলীল শব্দে পদ্য লেখেন। এটা তার বিশেষ গুণ। অহংকার বর্জিত এই কথাসাহিত্যিক সাধারণ ও খেটে খাওয়া মানুষের জীবনকে সাহিত্যের বিশেষ অংশ হিসেবে তুলে ধরতে সিদ্ধহস্ত।

মধুমতি নদীর পাড়ে, সবুজ-শ্যামল গ্রামে বেড়ে ওঠা সৈয়দ নূরুল আলমের লেখায় প্রকৃতি যেমন উঠে এসেছে, একইভাবে উঠে এসেছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। তার বেশির ভাগ লেখাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। তখন যুদ্ধে যাওয়ার বয়স হয়নি, ১২-১৩ বছরের কিশোর অপলক চেয়ে থেকেছে, তাদের বাড়িতে লুকিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি, বাড়িতে জমা করে রাখা অস্ত্রের প্রতি। প্রকৃতি ও মানুষকে মুখস্থ করার অসাধারণ জ্ঞানের অধিকারী মানুষটি সেই থেকে মুক্তিযুদ্ধকে মনের ভেতরে লালন করেছেন। তাই তো ‘এক কিশোর মুক্তিযোদ্ধা’ উপন্যাসে তের বছরের জামাল চরিত্রটা হয়ত লেখক নিজেই ছিলেন।

২৯ সেপ্টেম্বর সৈয়দ নূরুল আলমের ৬২তম জন্মদিন। ১৯৫৮ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি থানার চাপ্তা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা সৈয়দ জহুর আলী এবং মা জাহানারা বেগম। তিনি গ্রামের রাতইল নায়েবুন্নেছা ইনস্টিটিউশন থেকে এসএসসি, বরিশাল বিএম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। এছাড়া ঢাকা ল’কলেজ থেকে এলএলবি এবং ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ থেকে ডিএআইবিবি ডিগ্রি অর্জন করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরির মধ্য দিয়ে ১৯৭৯ সালে তিনি কর্ম জীবন শুরু করেন। সম্প্রতি তিনি উপ-মহাব্যবস্থাপক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অবসর গ্রহণ করেন। চাকরিকালীন শ্রীলংকা ও ভারতের পুনে থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

সৈয়দ নূরুল আলম গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ-উপন্যস-বুকরিভিউ লিখলেও, কথাসাহিত্যিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৪টি। একটি কবিতার এবং বাকিগুলো গল্প-উপন্যাস। ১৯৮৬ সালে রুনা প্রকাশনী থেকে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘যুদ্ধের ছবি’ প্রকাশিত হয়। সে সময় ‘যুদ্ধের ছবি’ শিরোনামের গল্প নিয়ে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। তার প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে অন্যতম—যুদ্ধের ছবি (গল্পগ্রন্থ), ভালবাসা ( প্রা.) লিমিটেড (গল্পগ্রন্থ), বনের বাতাস (উপন্যাস), পাথর মেয়ে (উপন্যাস), একাত্তরের শিশু (কিশোর গল্পগ্রন্থ) , একুশের গল্প (সম্পাদনা), মেঘের মতো মেয়েরা (উপন্যাস), তিন গোয়েন্দা (কিশোর উপন্যাস), এক কিশোর মুক্তিযোদ্ধা (কিশোর উপন্যাস), ইচ্ছে করে আকাশ ছুঁই (গল্পগ্রন্থ), ঢেউ ওঠে ঢেউ ভাঙে (কবিতা), আগুনরঙা মেয়ে (উপন্যাস), ছোটদের বন্ধু বঙ্গবন্ধু (জীবনীগ্রন্থ) ও বঙ্গবন্ধুর বেড়ে ওঠা (জীবনীগ্রন্থ)।

বহুমাত্রিক লেখক শুধু সাহিত্যচর্চা করেই থেমে থাকেননি, তিনি তরুণ সাহিত্যিকদের তুলে ধরতে সবসময় সচেষ্ট। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাহিত্য সংগঠন অধিকোষের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এবং দীর্ঘদিন ওই সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি অধিকোষের উপদেষ্টা এবং পদক্ষেপ বাংলাদেশ, ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতির দায়িত্বপালন করছেন। আমরা এই বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী মানুষটির দীর্ঘায়ু কামনা করি।

পিডিএসও/হেলাল