প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৪ আগস্ট, ২০১৭

কমছে পানি, ছড়িয়ে পড়ছে রোগবালাই

যমুনা ও পদ্মার পানি কমলেও সিরাজগঞ্জ, জামালপুর ও ফরিদপুরে বন্যার্তদের দুর্ভোগ কমেনি। ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত রোগবালাই। বেরিয়ে পড়ছে ভাঙাচোরা ও খানাখন্দে ভরা রাস্তাঘাট। দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের সংকট। অপরদিকে, ফেনীর ফুলগাজীতে নতুন করে আরো সাতটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ত্রাণতৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

ফরিদপুর : ফরিদপুরে কয়েকদিন ধরে পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে, কিন্তু বেড়েছে দুর্ভোগ। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি গোয়ালন্দ পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার কমে এখন বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখনো পানিবন্দি রয়েছে ফরিদপুর সদর, চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের মানুষ। এই সকল এলাকার শিশু ও বৃদ্ধদের অবস্থা আরো করুণ। এর ওপর রয়েছে গো-খাদ্যের সংকট। বাড়ছে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব। ফরিদপুর জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া জানান, জেলার পানিবন্দি ও নদী ভাঙন-কবলিত মানুষের জন্য ২০০ মেট্রিক টন চাল ও সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

ফেনী : গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে ফেনীর ফুলগাজীতে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের পূর্বের ভাঙা অংশগুলো দিয়ে প্রবল স্রোতে পানি প্রবেশ করছে। এতে সাতটি গ্রাম আবারও প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, গতকাল বুধবার সকাল থেকে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের দেড়পাড়া, নিলক্ষী, গোসাইপুর, গাবতলা, মনতলা, সাহাপাড়া, ঘনিয়ামোড়ায় বন্যার পানি ঢুকেছে। এ ছাড়া ফুলগাজী সদর ও মুন্সীরহাট ইউনিয়নেরও কয়েকটি গ্রামের নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি ঢুকেছে। সড়কে পানি উঠায় ফুলগাজী থেকে বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

দ্বিতীয়বারের মতো রোপণকৃত হাজার হাজার হেক্টর আমনের বীজতলা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে নিলক্ষী অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ উচ্চ বিদ্যালয়, নিলখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফুলগাজী দারুল উলূম দাখিল মাদরাসা, ফুলগাজী ঘনিয়া মোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ফুলগাজী শিশু নিকেতনসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

সিরাজগঞ্জ : কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে সিরাজগঞ্জের পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এদিকে, যমুনার পানি গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত হ্রাস পেয়ে এখনো বিপৎসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান, সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী হাসান ইমাম। পানি হ্রাস পেলেও চৌহালী বাঁধ, কাজিপুর ও শাহজাদপুরে ব্যাপকভাবে ধস দেখা দিয়েছে। জেলার বিস্তৃর্ণ এলাকার সাত হাজার ৮৩০ হেক্টর আবাদি জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে প্রকাশ, দুর্গতদের জন্য ১৫৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল রাত পর্যন্ত ১০৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে ক্ষতিগ্রস্তরা আশ্রয় নিয়েছেন। জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ইতোমধ্যেই ৭১৬ মে.টন চাল ও ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও অস্থায়ী নলকূপ স্থাপন ৫৬টি, অস্থায়ী ল্যাট্রিন ১৩৮ টি, পানি জেরিকেন ১০৫টি, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ১৫ হাজার লিটার প্রদান করা হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুর রহিম জানান, এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী মজুদ আছে।

এ ছাড়াও বাঁধ সুরক্ষায় ৩টি স্থানে সেনা মোতায়ন রয়েছে। স্বাস্থ্য সেবার জন্য ৯৬টি মেডিক্যাল টিমও কাজ করছে। বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি সিরাজগঞ্জ ইউনিটের উদ্যোগে বেলকুচি ও চৌহালীতে ১৩০টি বন্যার্ত পরিবারের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এ সময় বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি সিরাজগঞ্জ ইউনিটের চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেকমন্ত্রী আলহাজ আবদুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, সরকারের পাশাপাশি দুর্গতদের মধ্যে অতীতের মতোই রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি আছে এবং থাকবে।

জামালপুর : জামালপুরে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। ভেসে উঠছে ক্ষত-বিক্ষত রাস্তাঘাট, বাড়ি ফিরছে উঁচুস্থান, রাস্তার ধারে ও আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা দুর্গতরা। দেওয়ানগঞ্জেরর ভাটিপাড়া ও জামালপুর সদরের কেন্দুয়া-কালিবাড়ীতে পানির স্রোতে মাটি সড়ে যাওয়ায় শূন্যে ঝুলছে রেললাইন। রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে, সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ। জেলার সাতটি উপজেলার কাঁচা-পাকা রাস্তা বিধ্বস্ত হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এ ছাড়াও ৩৫৫টি বাড়িঘর সম্পূর্ণ ও ১৮ হাজার ৬৮১টি বাড়িঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অপরদিকে, আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন বানভাসিরা। তারা বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি মেরামতে কোমর বেঁধে নেমেছেন। দেওয়ানগঞ্জের গুজিমারী গ্রামের হাসমত আলী বলেন, পানির আঘাতে বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। মেরামতের পর্যাপ্ত টাকা নেই। কোনোমতে নিজেই ঠিকঠাক করে পরিবার নিয়ে উঠেছি। বলিয়াদহ বাজারে খানপাড়া গ্রামের ইসমাইল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ত্রাণের তালিকায় মেম্বর-চেয়ারম্যানের লোকজনের নাম উঠে। সেখানে সাধারণের নাম নাই। ওই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আবুল কাশেম একই অভিযোগ করে জানান, তালিকা তৈরিতে স্বজনপ্রীতি হয়েছে। ত্রাণ না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন অনেকেই।

এদিকে, জামালপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে প্রায় ১৪৫ হেক্টর আউশ ধানের ক্ষতি হয়েছে। ৪৪ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমির রোপা আমনের আবাদ পানিতে তলিয়ে পচে গেছে। বন্যায় এক হাজার ৬৭২ হেক্টর বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। এবারের বন্যায় প্লাবিত হয়েছিল জামালপুর জেলার সাতটি উপজেলার ৪২টি ইউনিয়ন, আটটি পৌরসভা, ৬৬৭টি গ্রাম। প্রায় দুই সপ্তাহ পানির সঙ্গে লড়াই করে টিকে ছিলেন আট লাখ মানুষ। এ ব্যাপারে জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবির বলেন, বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রোগবালাই,দুর্ভোগ,বন্যা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist