কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

  ১৯ আগস্ট, ২০১৭

নানা অনিয়ম আর দুর্নীতিতে ভরপুর

হ-য-ব-র-ল কলাপাড়ার প্রাথমিক শিক্ষা

শিক্ষকদের কোচিং বানিজ্য, প্রশ্নপত্র ফাঁস, উপবৃত্তির টাকা বিতরনে দুর্নীতি, খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষা কর্মসূচীতে অনিয়ম, শিক্ষকের বদলী নিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া ছাড়াও নানা দুর্নীতি আর অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার প্রাথমিক শিক্ষা স্তর। আর এতে করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়নে প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ এ উপকূলীয় এলাকার প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে। কলাপাড়ার প্রাথমিক শিক্ষা স্তর এখন হ-য-ব-র-ল।

উপজেলায় ১৭১টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি রেজি: প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৬টি আন-রেজি: প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩টি এবতেদায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৮টি এবতেদায়ী সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪টি উচ্চ বিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১৫টি কিন্ডার গার্টেন রয়েছে। এর মধ্যে ৮/১০টি স্কুল ভবন ব্যবহার অনুপযোগী রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪৩৭২৯। এছাড়া লতাচাপলি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেনী এবং হাজিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম এবছর চালু করা হয়েছে। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে ৫৬টি, প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে ৬৯টি, সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পদ শূন্য রয়েছে ৩টি এবং অফিস ষ্টাফের ৫টি পদ শূন্য রয়েছে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা গেছে ।

এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের কার্যক্রম তদারকিতে উপজেলায় ১৬ সদস্যের কমিটিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রধান উপদেষ্টা, উপজেলা চেয়ারম্যান সভাপতি, ইউএনও নির্বাহী সদস্য, উপজেলা পরিষদের ২জন ভাইস চেয়ারম্যান, ওসি, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, ইউআরসি ইন্সট্রাক্টর ও একজন ইউপি সদস্য রয়েছে।

সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার এসকল প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে বর্তমানে ২য় সাময়িক পরীক্ষা চলছে। ইতোমধ্যে বাংলা, ইংরেজী, গনিত, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, ধর্ম সহ কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। চলমান এসকল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে এক শ্রেনীর অসাধু শিক্ষকরা পরীক্ষার দু’এক দিন পূর্বে পৌঁছে দিচ্ছে তাদের টিচিং হোম কিংবা কোচিংয়ে অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থীদের কাছে। এতে পড়াশুনার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। সমুদ্র মোহনা ও নদী পাড়ের দরিদ্র শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে না গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে মাছের রেনু আহরন, গেরস্থালি ও কৃষি কাজে সহযোগীতা করছে। শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা এবং বিস্কিট বিতরন নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। এছাড়া প্রাথমিক স্তরের অনেক শিক্ষক রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এরা সরকারী দলের নাম ভাঙ্গিয়ে চলায় অফিসও তাদের সমীহ করছে।

প্রাথমিক শিক্ষার আসল চিত্র দেখা যায় বৌলতলি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, যেখানে ১২৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ১জন শিক্ষক। এছাড়া শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং বানিজ্য প্রভাব ফেলছে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার ক্ষেত্রে। শিক্ষকদের পরিচালিত প্রাইভেট টিউশন ও কোচিংয়ের নির্ধারিত টাকা দিতে না পারায় অনেক দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কোন সুফল পাচ্ছেনা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জিম্মি হয়ে পড়েছে মাত্র কয়েকজন প্রভাবশালী শিক্ষক, শিক্ষা কমিটি’র ২/৩ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও দুর্নীতিবাজ শিক্ষা কর্মকর্তা-কর্মচারীর হাতে। চলতি বছরের শুরুতে ২০ জন শিক্ষকের বদলী নিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি ৫৭ টি স্কুলের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ক্ষুদ্র মেরামত প্রকল্পের ৯ হাজার টাকা বিতরন কালে স্কুল প্রতি ১ হাজার টাকা রেখে দেয়া হয় অফিস খরচের নামে। শতাধিক শিক্ষকদের শ্রান্তি বিনোদনের ভাতা থেকে ৫’শত টাকা করে অফিস খরচের নামে নেয়া হয়। শিক্ষকদের অবসর ভাতা, গৃহ নির্মাণ ঋন পাশ করতে শিক্ষা অফিসে মোটা অংকের টাকা দিতে হয়।

কলাপাড়া প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মনিলাল সিকদার প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের চলমান পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পরীক্ষার এক দিন পূর্বে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে সরবরাহ করা হয়। যদি প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় তাহলে শিক্ষকরা জড়িত, শিক্ষা অফিস নয়।

পিডিএসও/রানা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
হ-য-ব-র-ল প্রাথমিক শিক্ষা,অনিয়ম আর দুর্নীতিতে ভরপুর
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist