কে এম রুবেল, ফরিদপুর

  ০৭ আগস্ট, ২০২০

মধুমতির আগ্রাসন কবলে ১০ গ্রাম

প্রথম ও দ্বিতীয় দফা বন্যার ফলে ফরিদপুরের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলের যেমন ক্ষতি হয়েছে তেমনি পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নদী ভাঙন। মধুমতির আগ্রাসনে ভাঙছে আলফাডাঙ্গার চারটি ইউপির বিস্তৃর্ণ এলাকা। এদিকে দিশে হারা অবস্থায় ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ জানান, গত পনের দিনে মধুমতি নদী তীরের টগরবন্দ, গোপালপুর, বুড়াইচ ও পাচুড়িয়া ইউনিয়ন ইউনিয়নে ১০/১২টি গ্রামে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এতে পাকা সড়ক, বাড়িঘর, কৃষি জমি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ গাছপালা ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও জানান, নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে উপজেলার বাজড়া, চর আজমপুর, চাপুলিয়া, চরধানাইড়, শিকিপাড়া, চাপুলিয়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম।

পাউবোর এই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে ভাঙন রোধে আমরা ৩০ হাজার বস্তা বালুভর্তি জিওব্যাগ ডাম্পিং করছি। তবে নদীতে প্রচুর স্রোত। আগামী শুস্ক মৌসুমে মধুমতির ভাঙন রোধে স্থায়ী বাধের প্রকল্প উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। সেটি অনুমোদিত হলে বড় ধরনের কাজ করা যাবে। লাঘব হবে নদীর পাড়ের মানুষের দু:খ কষ্ট।

সরেজমিনে দেখা যায়, আলফাডাঙ্গার মধুমতির পাড়ের বাজড়া, চর আজমপুর, চরডাঙ্গা, চাপুলিয়া, চরধানাইড়, শিকিপাড়া, চাপুলিয়া, চরনারানদিয়া, বাঁশতলাসহ ১০টি গ্রাম এখন হুমকির মুখে। এরই মধ্যে কয়েক গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র গোপালপুর-চরডাঙ্গা মেইন পাকা সড়কের প্রায় ৫০০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একই সঙ্গে নদীগর্ভে চলে গেছে চাপুলিয়া গুচ্ছগ্রাম ও আশ্রয়ন কেন্দ্রের ৬৫ টি ঘর, বাজড়া পশ্চিম পাড়া জামে মসজিদ, চরআজপুর গ্রামের প্রায় ৩০টি বাড়িসহ নানা স্থাপনা। এখন চরম হুমকির মুখে রয়েছে বাজড়া চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

ভাঙন ঝুঁকিতে থাকা টগরবন্দ ইউনিয়নের চর আজমপুর গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল শেখ ও পাচুড়িয়া ইউপির ইকরামুজ্জামান জানান, এই নদীতে স্থায়ী বাধ দেয়া গেলে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ভাঙন থেকে হয়তোবা রক্ষা পেত। এখন আমাদের মাথা গোজার জায়গাটুকু নেই। এ এলাকার অনেক বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়েছে।

বাজড়া গ্রামের ইউপি সদস্য ওবায়দুর রহমান বলেন, নদী আমার বাড়ি থেকে অল্প কয়েক গজ দূরে। এ বছর বাড়ি মনে হয় আর থাকবে না। আমাদের এলাকায় গত কয়েকদিনে নদীর পাড়ে থাকা ২৫টি পরিবার তাদের বাড়িঘর ভেঙে অন্যত্র চলে গেছে। অনেকেই যাওয়ার জন্য বাড়ি ঘর ভাঙতে শুরু করেছেন।

টগরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমাম হাচান শিপন বলেন, সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের শুধু ১০ কেজি চাল দেয়া হয়েছে। কিছু এলাকায় জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহিদুল হাসান জানান, নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করা হচ্ছে। সরকারিভাবে তাদের সহযোগিতা করা হবে। তিনি এলাকাবাসীর পক্ষে দাবি তুলে বলেন, দেশ স্বাধীনের পর থেকেই আলফাডাঙ্গায় মধুমতির ভাঙনে স্বীকার শত শত পরিবার। নি:স্ব হয়েছে অনেকেই। ভাঙন কবলিত এলাকায় স্থায়ী বাঁধের বিকল্প এখন আর কিছু নেই।

দীর্ঘদিনের মধুমতি নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি রক্ষার বিষয়ে ফরিদপুর-১ আসনের এমপি মনজুর হোসেন বলেন, ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় স্থায়ী বাঁধের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্প তৈরি করছে। এটি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে চেষ্টা চলছে, বিষয়টি অনেক ব্যয় বহুল একারনে কিছুটা সময় লাগবে।

পিডিএসও/এসএম শামীম

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মধুমতি,আগ্রাসন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close