রাজশাহী ব্যুরো

  ০৫ আগস্ট, ২০২০

পদ্মায় চামড়া নিক্ষেপ : পরিবেশ দূষণ অভিযোগে ফেঁসে যাচ্ছেন ব্যবসায়ী

ন্যায্য দাম না পাওয়ায় প্রতিবাদ হিসেবে পদ্মা নদীতে ক্রয়কৃত চামড়া ফেলে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন রাজশাহীর কয়েকজন ব্যবসায়ী। তবে এ ঘটনায় বিপাকে পড়েছেন নগরীর একমাত্র ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন। এ ঘটনায় পরিবেশ দূষণের অভিযোগে ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। ব্যবসায়ীর বাড়ি নগরীর বুলনপুর এলাকায়।

এ ঘটনায় ব্যবসায়ীর দাবি, প্রভাবশালী মৌসুমী ব্যবসায়ীরা প্রকৃত অপরাধ করেছে। অথচ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমি তালিকাভুক্ত চামড়া ব্যবসায়ী হওয়া সত্বেও আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, যাকে বলা হয় উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে। এর আগে সরকার ঘোষিত নির্ধারিত দামে কোরবানির পশুর চামড়া ক্রয় করে বিক্রি করতে গিয়ে লোকশানের মুখে পড়েন তিনি। পরে ক্রয়কৃত চামড়া থেকে লাভ তো পরের কথা অর্ধেক ক্রয়মূল্যও না পাওয়ার অভিযোগ তুলে রোববার এর প্রতিবাদ হিসেবে রাজশাহী নগরীর আইবাঁধ সংলগ্ন পদ্মা নদীতে চামড়াগুলো ফেলে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটান। আর চামড়া ফেলে দেয়ার সেই ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর গনমাধ্যমে প্রকাশ হলে তা প্রশাসনের নজরে আসে। যে কারণেই পরিবেশ দূষণের অভিযোগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ঘটনার তদন্ত করে ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

এ তথ্য নিশ্চিত করে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক বলেন, পদ্মায় চামড়া ফেলে দেয়ার ঘটনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিষয়টি তদন্ত করা হয়েছে। তদন্তকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েরও একটি টিম সরেজমিনে গিয়েছিলেন। ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন ইতিমধ্যেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শরিফুল হক বলেন, যিনি চামড়া নদীতে ফেলেছেন তিনি রাজশাহীর একজন মৌসুমি ব্যবসায়ী। চামড়া কেনাবেচা কিংবা সংরক্ষণে তার অভিজ্ঞতা নেই। তিনি ছাগলের চামড়া কেনার পর নাটোর ও রাজশাহীতে বিক্রির চেষ্টা করেন। কিন্তু বিক্রি করতে পারেন নি, সংরক্ষণ করতেও জানেন না। তাই চামড়ায় পচন ধরে গেলে তিনি নদীতে ফেলে দেন।

শরিফুল হক আরও জানান, তার কাছে মনে হয়েছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চামড়া নদীতে ফেলা হয়েছে। সে কারণে ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি চামড়া বিক্রি করতে না পারলে আমাদের জানাতে পারতেন অথবা মাটিতে পুঁতে ফেলতে পারতেন। তিনি নদীতে চামড়া ফেলে পরিবেশ দূষণ করেছেন। তাই তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে বলা হয়েছে।

তবে অভিযুক্ত ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন পিন্টুর দাবি, আমি রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সদস্য। আমি গরুর চামড়া ক্রয় করেছি, ছাগলের না। নদীতে ফেলার সেই অজ্ঞাত ব্যক্তির ধারণকৃত ছবি ও ভিডিওতে যার প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু প্রতিহিংসাবশত কেউ আমার বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ব্যবহার করতে চাচ্ছে। ব্যবসায়ী পিন্টু আরও বলেন, বেশি পচে যাওয়া চামড়াগুলো মৌসুমি ব্যবসায়ীরা নদীতে ফেলে দিয়েছেন। এরমধ্যে নগরীর গুড়িপাড়া এলাকার মৃত আজিমের ছেলে আজাদও রয়েছেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণেই সেসব মৌসুমি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের নজর নেই। এখন উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে।

এ ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহীর উপপরিচালক মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, পরিবেশ আইন অনুযায়ী, কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলে দূষণ আসলেই হয়েছে কি না সেটা আগে দেখতে হবে। সে জন্য নদীর যে স্থানে চামড়া ফেলা হয়েছিল সেখান থেকে তিন বোতল পানি সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য বুধবার বগুড়ার ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। তবে স্রোতের মুখে চামড়া ফেলার দুই দিন পর সংগ্রহীত সেখানকার পানিতে দূষণের মাত্রা বোঝা যাবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা পরীক্ষার পরই বলা যাবে। এটা আমাদের প্রক্রিয়া। আমরা আইন অনুযায়ী পানি পরীক্ষা করছি। পানি পরীক্ষার পর যে প্রতিবেদন পাওয়া যাবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পিডিএসও/এসএম শামীম

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পদ্মায় চামড়া নিক্ষেপ,অভিযোগ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close