কলি হাসান, দুর্গাপুর প্রতিনিধি
দুর্গাপুরে অবৈধ লরি ট্রাক্টরের অবাধ চলাচল
পরিবেশ দূষণ, বাড়ছে দুর্ঘটনা, বিকট শব্দে ঘুম হারাম পৌরবাসীর
নেত্রকোনার দুর্গাপুরে চাষাবাদের জন্য কেনা ট্রাক্টর দিয়ে বানানো হয়েছে লরি ট্রাক। এসব অবৈধ যানের অবাধ চলাচলের কারণে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। অন্যদিকে এসব লরি ট্রাক্টরের বিকট শব্দে পৌরবাসীর ঘুম কেড়ে নিচ্ছে আর বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা।
লাইসেন্সবিহীন এসব অবৈধ লরি ট্রাক্টরের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিলেও কোনো সুফল পাচ্ছে না ভুক্তভোগীরা। স্থানীয় একটি কতিপয় সিন্ডিকেট চক্র প্রশাসনকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ যানের বৈধ ব্যবসা।
জানা গেছে, কৃষি কাজের জন্য এসব ট্রাক্টর ক্রয় করা হলেও মালিকরা এগুলো ব্যবহার করছেন ইট, বালু, মাটি, পরিবহনের কাজে। লরি ট্রাক্টরের বেপরোয়া গতিতে চলাচলের কারণে গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। অনেকাংশে কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে ইটভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছে এসব ট্রাক্টর। দাপিয়ে বেড়ানো এসব লরি ট্রাক্টরের ধুলাবালির কারণে পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। ট্রাক্টরের বেপরোয়া আওয়াজ ও চলাচলে গ্রাম ও পৌর শহরের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বেপরোয়া গতি ও কানফাটা শব্দে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি ঘটেছে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার মতো ঘটনা।
লরি ট্রাক্টরের চালকদের জন্য কোনো লাইসেন্সের প্রয়োজন না থাকায় এসব পরিবহন ব্যবসায়ীরা স্বল্পমূল্যে সহজেই কিনে আনেন ট্রাক্টর। তারা এসব ট্রাক্টর কিনে কৃষিকাজের পরিবর্তে পরিবহন কাজে ব্যবহার করায় গ্রাম থেকে পৌর শহরেও ট্রাক্টরের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে। ট্রাকের চেয়ে ট্রাক্টরের ভাড়া কম থাকায় এই বাহনের চাহিদাও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। অবৈধ লরি ট্রাক্টর বন্ধে আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে আলোচনা ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্রসমাজ আন্দোলন করলেও বেশকিছু দিন এসব পরিবহন বন্ধ থাকে। স্থানীয় সংসদ সদস্য অবৈধ লরি ট্রাক্ট্রর পরিবহন বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেন। জেলা প্রশাসকের বিশেষ প্রতিনিধি সরেজমিন ঘুরে নির্দিষ্ট সময় সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এসব পরিবহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে। তবে কিসের ইন্ধনে এসব অবৈধ লরি ট্রাক্টর চলাচল করছে, এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চায় সচেতন মহল।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ এ প্রতিবেদককে জানান, লরি ট্রাক্টর বন্ধে বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও আইনশৃঙ্খলা মিটিয়ে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে। এসব পরিবহন টোটালি বন্ধ থাকবে। বেশকদিন দিনের বেলা বন্ধ ছিল। এখন দেখছি ২৪ ঘণ্টাই লরি ট্রাক্টর চলছে। কিভাবে চলছে এ বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের খতিয়ে দেখা উচিত। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জান্নাতুল ফেরদৌস আরা বলেন, দুর্গাপুর উপজেলা সদরে এত পরিমাণ লরি ট্রাক্টর বেড়েছে, তা কল্পনা করা যায় না। তবে আমরা খুব দ্রুততার সাথে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। রোড পারমিট ছাড়া অবৈধ গাড়ি চলাচল বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা খানম জানান, লরি ট্রাক্টর বন্ধে প্রতিদিন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত লরি ট্রাক্টর বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পিডিএসও/হেলাল