উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি

  ২৮ মে, ২০২০

উল্লাপাড়ায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশংকা, বিপাকে কৃষক

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় প্রায় আড়াই হাজার বিঘার আবাদি মাঠে স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশংকা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাতে মাঠগুলোর নিচু এলাকায় পানি জমেছে। পানি নিষ্কাশনের একমাত্র খালটি ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এখন আর পানি বের হতে পারছে না। কৃষকরা পানিতে তাদের ধান ফসল কাটছে।

এদিকে কৃষি বিভাগ থেকে বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে পানি নিষ্কাশনের উপায় নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

উল্লাপাড়া উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের পাশাপাশি নাগরৌহা, চরপাড়া, পংরৌহা, ভদ্রকোল ও বাখুয়া গ্রাম এলাকার আবাদি মাঠের জমির পরিমাণ প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বিঘা। ইউনিয়ন তিনটি হলো সদর উল্লাপাড়া, কয়ড়া ও পূর্ণিমাগাতী। এর মধ্যে স্থানীয়ভাবে পরিচিত চরপাড়া খাপাল, নাগরৌহার সুলফি গাড়ি, লালি, ভদ্রকোলের দোপাচড়া, ভদ্রকোল জোলা, পংরৌহার সরিষাদহ, খাপাল, বাখুয়ার কার্তিকের ধরে নিচু মাঠে জমির পরিমাণ প্রায় আড়াই হাজার বিঘা হবে বলে জানা যায়। অতীতে বিশাল এ মাঠে সহজে বন্যার পানি ঢুকতো আবার বের হয়ে যেত। বৃষ্টির পানি বের হতো সহজে। একাধিক সরকারি নালা ও খাল হয়ে পানি নিষ্কাশন হতো। নালা ও খালগুলো হলো শৈলাগাড়ী খাল, কয়ড়া নালা, বুড়ির বিল খাল।

বিগত ২ হাজার সালে নাগরৌহার শৈলাগাড়ী এলাকার (আসান কাটা) কচুয়া নদী থেকে ভেংড়ী গ্রামের আজিজল হকের প্রায় ২০ শতক ব্যক্তিগত জমিতে একটি খাল কাটা হয়। চরপাড়ায় অবস্থিত স্মৃতি ব্রিকস নামের ইটভাটা মালিক জাহেদুল হক তার ইটভাটায় বর্ষা মৌসুমে সহজে নৌকা চলাচলে এ জমি লিজ নিয়ে খালটি খনন করেন। এ খাল হয়েই বন্যা ও বৃষ্টির পানি সহজে নিষ্কাশন হয়। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বিঘার পুরো মাঠেই সরিষা ও ইরি ধান ফসলসহ অন্যান্য ফসল আবাদ হতে থাকে।

এদিকে ব্যক্তিগত খালটি হয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকায় অন্য খাল ও নালাগুলো ভরাট করে সরকারি সড়ক পথ ও অবৈধ দখলে নিয়ে অনেকেই ভরাট করে ফেলেছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়।

মাস দেড়েক আগে ব্যক্তিগত খালটির জমির মালিক আজিজল হক পুরোপুরি তা ভরাট করে ফেলেছেন। সেখানে নতুন ঘর তোলা হয়েছে। এ বিষয়ে আজিজুল হকের বক্তব্যে তিনি জমিটি ১০ বছরের জন্য লিজ দিয়েছিলেন। সেখানে ২০ বছর চলছে। লিজের মেয়াদ পার হওয়ার পরও নতুন করে কোনো লিজ চুক্তি হয়নি। তিনি এখন নিজ দরকারে খালটি ভরাট করেছেন।

স্মৃতি ব্রিকসের মালিক জাহেদুল হক এলাকার কৃষি ও কৃষকের স্বার্থে তিনি আজিজল হকের খালের জমিটি বর্তমান বাজার দরে কিনে নেওয়া এবং সেখানে খালটি পুনরায় খননে আগ্রহের কথা জানান।

এদিকে খালটি ভরাট করার ফলে পাঁচ গ্রামের কৃষক আশংকা করছেন এখন আর তাদের মাঠ থেকে পানি বের হতে পারবে না। বন্যার এবং বৃষ্টির পানি বিশাল মাঠজুড়ে জমে থাকবে। দেখা দেবে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। এরই মধ্যে জলাবদ্ধতার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। এলাকার মাঠজুড়ে এখন ইরি ধান ফসল। বৃষ্টিপাতে চরপাড়া খাপালসহ নিচু অন্য এলাকায় ধান জমিতে কম বেশি পরিমাণ পানি জমেছে। মাঠে ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষকরা পানিতে তাদের ধান ফসল কাটছে।

নাগরৌহা, চরপাড়াসহ তিনটি গ্রামের কৃষকের সাথে কথা হলে জানান, এখনতো পানিতে ধান কাটতে হচ্ছে। তাদের আশংকা, খালটি ভরাটে পানি নিষ্কাশনের পর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মাঠজুড়ে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দেবে। তখন সরিষা ফসলের আবাদ করা যাবে না।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আরিফুজ্জামান বলেন, তিনি বিষয়টি জেনে স্থানীয় কৃষি বিভাগ এবং এলাকার ইউপি চেয়ারম্যানগণকে সরেজমিনে পরিদর্শন এবং সহজ সমাধানের পথ বের করার বিষয় জানিয়েছেন। তাদের মতামতের আলোকে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কৃষক,উল্লাপাড়া,জলাবদ্ধতা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close