রাণীশংকৈল প্রতিনিধি

  ২৯ এপ্রিল, ২০২০

আমি কি সরকারি কোনও ত্রাণ পাওয়ার যোগ্য না?

এক চোখ পুরো আর এক চোখে কাছের জিনিস কিছুটা দেখতে পাওয়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আসাদুল ভ্যানগাড়িতে করে ঝাল মুড়ি বিক্রি করে সংসার চালাতেন। তবে এ ক্ষেত্রে তাকে তার পরিবার ও এলাকার লোকজন চলাচলের জন্য সহযোগিতা করেন। গত ২৬ মার্চ থেকে করোনা প্রার্দুভাব মোকাবেলায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় তার ঝাল মুড়ি বিক্রির ব্যবসা বন্ধ। তবে এর মধ্যে সংসারে চাল ডাল তরি-তরকারি না থাকায় স্ত্রী সন্তানদের খাওয়ার অভাব পুরণের জন্য বেরিয়েছিলেন ঝাল মুড়ির ভ্যানের দোকান নিয়ে। তা নিয়ে বেরিয়ে শহরে দাঁড়াতেই পুলিশ এসে তার ঝালমুড়ির ভ্যান গাড়ির দোকানে লাঠি দিয়ে আঘাত করে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। সেই থেকে পরিবার নিয়ে কষ্টে আছেন এই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আসাদুল। তার বাড়ি ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল পৌর শহরের ৯ নং ওর্য়াডের মহলবাড়ী গ্রামে। তার পরিবারে দুই ছেলে স্ত্রী সহ মোট চারজন সদস্য।

মঙ্গলবার আসাদুল তার দুই ছেলে রমজান(১২) ও সুজন(১০)কে সাথে নিয়ে রাণীশংকৈল প্রেস ক্লাবে আসে। এসে প্রেস ক্লাব সভাপতি ফারুক আহাম্মদ সরকারকে খুঁজে নিয়ে তার কষ্টের কথা বলে, সে বলে আমি এক চোখে দেখিনা আরেক চোখে কিছুটা কাছের জিনিস দেখতে পাই। ঝালমুড়ি বিক্রি করে সংসার চালাতাম। এখন সরকারি নিষেধে ব্যবসা বন্ধ। বাড়িতে যা চাল ডাল ও যোগানকৃত অর্থ ছিল তা শেষ। আমি পরিবার নিয়ে কোনওরকম খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি।

তিনি প্রেস ক্লাবের উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আমি কি সরকারি কোনও ত্রাণ পাওয়ার যোগ্য না? আমি কি ত্রাণ পেতে পারি না। কেন পাইনি? আমাকে কেউ বা কোনও জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রশাসনের লোক সামান্য সহযোগিতা করেনি। সরকারি এক দানা চাল বা ডাল পায়নি। অথচ মানুষের মুখে শুনছি সরকার কর্মহীনদের চাল ডাল আলু দিচ্ছে। আমি কেন পাচ্ছি না। তা আমি জানতে চাই?

আসাদুল জানায়, ২৫ এপ্রিল থেকে রোজা শুরু হয়েছে। ঘরে চালসহ তরি-তরকারী না থাকায় গ্রামে মানুষের কেটে নেওয়া গম খেতে গিয়ে গমের শীষ কুড়িয়ে আটা করে খাচ্ছি। আর তরকারী হিসাবে মানুষের মুলা খেত থেকে পরিত্যক্ত মুলাগুলো নিয়ে এসে কোনওরকম সেদ্ধ করে খাচ্ছি। খাওয়া দাওয়ার অভাব হওয়ায় আমার কিশোর দুই ছেলেকে বাধ্য করে রোজা ধরিয়েছি। কারণ, না খেয়ে থাকার চেয়ে রোজা থাকা অনেক ভালো।

আসাদুল আরও জানায়, অন্ধ হয়েও আমি ব্যবসা করে চলি। এখন সরকারি নিষেধের কারণে ব্যবসা বন্ধ। সরকার আবার আমার মত কর্মহীন হযে পড়াদের জন্য খাদ্য সামগ্রী দিচ্ছে অথচ আমি সে সুবিধায় নেই। আসাদুল দুঃখ করে বলেন, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে গিয়েও কোনও সহযোগিতা পায়নি। তাই শেষ ঠিকানা হিসাবে বাধ্য হয়ে সাংবাদিকদের কাছে এসেছি। তার হতাশার কথা শুনে তাৎক্ষণিক প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে তাকে চাল ডাল তরি-তরকারী ও ইফতারী কিনে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

পরে তার দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী তার এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের কাছেও তার পরিবার নিয়ে কষ্টে থাকার কথাগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়। পরে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসনে যোগাযোগ করে আসাদুলকে ডেকে নিয়ে এসে সরকারি চাল ডাল দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হতে হয়।

এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে বুধবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী আফরিদার কার্যালয়ে বেলা তিনটার দিকে গিয়ে না পেয়ে একাধিবার ফোন দিলেও তিনি তাতে সাড়া দেননি।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আসাদুল,দৃষ্টি প্রতিবন্ধী,সরকারি ত্রাণ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close