বগুড়া প্রতিনিধি

  ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

জমির মালিকের আক্ষেপ

জোর করে নিলে এমনই হয়

হুমকি দিয়ে অবসরপ্রাপ্ত মাদরাসা শিক্ষক মুসা আলমের কাছে থেকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের জমি কিনেছিলেন তৎকালীন স্থানীয় প্রশাসনের প্রভাবশালী ব্যক্তি। জমি না দিলে জেলের শিক গুণতে হবে এমন হুমকিও দিয়েছিলেন তারা। তাই বাধ্য হয়েই জমি বিক্রি করেছিলেন শিক্ষক মুসা। সেই মুসা গতকাল বৃহস্পতিবার রায়ের পর আক্ষেপ করে বলেন, জোর করে নিলে এমনই হয়। তবে শুধু মুসাই নন তখন আরো অনেকেই জমি বিক্রি করেছিলেন এই ট্রাস্টের জন্য। বগুড়া শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দুরে গাবতলী সদর ইউনিয়নের তরফসরতাজ গ্রাম। গ্রামের বাজারটির নাম দাড়াইল। তরফসরতাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশের গা ঘেষে সাড়ে ৯ বিঘা জমি। জমির উত্তর পাশে জিয়া অরফারেন্স টাস্ট্রের সাইনবোর্ড। ওই জমির কোনোটি পতিত পড়ে আছে আবার কোনটিতে সরিষা লাগানো হয়েছে। কোনটিতে ইরি-বোরোর বীজতলা লাগানো হয়। কিছু জমিতে চলছে ইরি-বোরো চাষের প্রস্তুতি।

সরেজমিনে সেখানে গেলে উৎসুক জনতা ভিড় করে। তবে এই জমি নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছেন না কেউ, অনেকেই এড়িয়ে যাচ্ছে। তবে নাম না প্রকাশের শর্তে বলছে, জোর করে, ফাঁকি দিয়ে জমি নিলে এমনই হয়। পাশেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের জায়গার ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা কোনো উত্তর দেয়নি। তবে নাম ঠিকানা গোপন রাখার শর্তে জমিদাতাদের বাড়ির ঠিকানা তারা দিয়েছিল।

জমিদাতা তরফসরতাজ গ্রামের মাদরাসা শিক্ষক মুসা আলম বলেন, ৪৭ হাজার টাকা দিয়ে ৩২ শতাংশ জায়গা কিনেছিলাম। সেই জায়গা জোড়পূর্বক দলিল করে নিয়ে প্রতি শতকের দাম ১ হাজার করে দিয়েছে। তৎকালীন উপজেলা প্রশাসনের প্রভাবশালী কর্মকর্তা ও এক দারোগা আমার বাড়িতে আসে তার সঙ্গে চৌকিদার নিয়ে আসেন। আমাকে তাদের সঙ্গে গিয়ে জমি দলিল করার জন্য চাপ দেন। আমি বলেছিলাম, ‘এটা দুঃখজনক। জোড় করে জমি নেওয়া ভালো হবে না। তারা আমাকে বলেছিলেন, জমি না দিলে জেলের শিক গুনতে হবে। মনে মনে তখন আমি বলেছিলাম, তোদেরকে জেলের শিক গুনতে হবে। পরে ভয়েই জমি দিয়েছি। এখন আমার স্ত্রী বলছে, যারা জেলের শিক গুনতে বলেছিল, এখন সেই বিচার হলো। জোর করে জমি নেওয়ার পর কথা ছিল, যতদিন এতিমখানা না হবে ততদিন জমিদাতারা ওই জমি ভোগ করবে। কিন্তু তারেক রহমান দেশের বাইরে যাওয়ার পরে বিএনপি নেতারা ওইসব জমি লিজ দিয়ে টাকা খাচ্ছে।’

আরেক জমিদাতা তরফসরতাজ হিন্দুপাড়ার লক্ষ্মী সরকার জানান, রবীন্দ্রনাথ, রুক্ষুনী, শংকরী বালা, মুসা আলম, নিজাম উদ্দিনসহ আরো কয়েকজনের কাছ থেকে সাড়ে নয় বিঘা জমি এতিমখানার নামে কিনে নেয়। প্রতি শতকের দাম দেওয়া হয় এক হাজার টাকা। এখন ওই জমির মুল্য ৬০-৭০ হাজার টাকা শতক। জমি নেওয়ার পর রবীন্দ্রনাথ, রুক্ষুনী, শংকরী বালা ভারতে চলে গেছে। এদেও মধ্যে একজন বলেন, ভাই আমরা হিন্দু মানুষ, বেশি কিছু বলতে পারব না। আমার যেন কোনো সমস্যা না হয়।

জমি বিক্রেতা নিজাম উদ্দিন মাস্টার জানান, এলাকায় প্রথমে বিএনপি নেতারা এসে বলে এখানে এতিমখানা হবে। যারা জমি দেবে তাদের সন্তানদের চাকুরি দেওয়া হবে। সে কারণে আমি রুক্ষুনীর কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা ৮ শতাংশ জমি ৪০ হাজার টাকায় ক্রয় করি। সেই জমি আমার কাছ থেকে এক হাজার টাকা প্রতি শতাংশ দেওয়া হয়। জমি ক্রয়ের আগেই সেখানে প্রশাসনের বগুড়া ও ঢাকা থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বারবার পরিদর্শনে আসে। জমি ক্রয়ের আগেই সেখানে লাল পতাকা দিয়ে জায়গার সীমানা নির্ধারণ করা হয়। জমি দিতে রাজী না হলে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। ভয়ে তারা জমি দেয়। জমি দলিলের দিন আমাদের গাবতলী উপজেলা ইউএনও অফিসে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কোনো কাগজ পড়তে দেওয়া হয় না। শুধু আমাদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেওয়া হয়।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট,জমি দখল,বিএনপি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist