রাজীবুল হাসান, শ্রীপুর (গাজীপুর)
পুনর্মিলনী উদযাপন
পুরানো সেই দিনের কথা ...
‘পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়/ও সেই চোখে দেখা,প্রাণের কথা,সে কি ভোলা যায়।/আয় আর একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়।/মোরা সুখে দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়। শৈলাট উচ্চ বিদ্যালয়’র অঙ্গনজুড়ে শনিবার যেন হৃদয়ে হৃদয়ে নীরবে বেজেছে কবি গুরুর গানের এই কথাগুলো। প্রতিষ্ঠার ৬৪ বছরে আয়োজিত পুনর্মিলনী মিলনমেলায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন সেই পুরনো দিনের স্মৃতিতে। খুঁজে ফিরেছেন শিক্ষাজীবনের দিনগুলোর স্মৃতিকথা। গাজীপুরের শ্রীপুরে ‘শৈলাট উচ্চ বিদ্যালয়’এর গর্বময় পথচলায় একে একে পেরিয়ে এসেছে ৬৪টি বছর। গৌরবোজ্জ্বল ৬৪ বছরে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় পুনর্মিলনী উৎসবের। এই উৎসব ঘিরে বিদ্যালয়ে বসেছিল নবীন-প্রবীণের মিলনমেলা। উৎসবে শামিল হওয়া প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অনেকেই এখন দেশ-বিদেশে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। আর তাঁরাই যেন ফিরে যান সেই উচ্ছল তারুণ্যভরা দিনগুলোতে। \
পুরনো সব বন্ধু আর সহপাঠীকে পরস্পর জড়িয়ে ধরে হয়েছেন আত্মহারা। হাতে হাত আর বুকে বুক মিলিয়ে করেছেন কুশলবিনিময়। অনেকে আবার প্রিয় সহপাঠীকে পেয়ে সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মোবাইল ক্যামেরায় নিজেদের বন্দি করেন নতুন করে। কেউ কেউ খুঁজেছেন বিদ্যালয় মাঠসংলগ্ন সেই বিশাল খেলার মাঠের পাশে থাকা বড় বড় গাছগুলো। কেননা ওই গাছের ছায়াতলে সহপাঠীদের নিয়ে আড্ডা দেওয়ার সব স্মৃতিকথা ভিড় করে আছে যে মনের গভীরে। অনুষ্ঠানে শামিল হতে দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে আসেন এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে তাঁরা সবাই ছিলেন উচ্ছ্বসিত। উৎসবে যোগ দিতে টাঙ্গাইল থেকে এসেছিলেন বীর প্রতীক হামিদুল হক। প্রতিষ্ঠানটির ১৯৬২ ব্যাচের এই ছাত্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন,‘৫৫ বছর পর আমার প্রাণের বিদ্যাপিঠে আসলাম। পুরোনো বন্ধুদের সাথে দেখা হলো। এই অনুষ্ঠান আমাকে নতুন করে ফিরিয়ে নিয়ে গেল স্কুল জীবনে।’ ১৯৭৬ সালের ব্যাচ সাহিদুজ্জামান বলেন, এ আনন্দের নাম দিতে পারবো না। শুধু বলতে পারি জীবনের জন্য এমন মিলনমেলা খুবই প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সাংসদ অ্যাড.মো.রহমত আলী এমপি। তিনি বলেন,‘স্কুলের এই মাঠ আমাকে মনে করিয়ে দেয় অতীত সব স্মৃতি। এই স্কুলের মাঠ হয়ে আমি কাচিনা,বাটাজোর,কালমেঘা বাজারে আসা যাওয়া করতাম। শ্রীপুরের পশ্চিম এবং শখিপুরের পূর্ব অঞ্চলে এই প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা বিস্তারে অগ্রসর ভূমিকা পালন করেছে। তিনি এই বিদ্যালয়ের ছাত্র না হলেও পাশের বাটাজোর পড়া লেখা করেছেন বলেও তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন।’ এ সময় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো.আব্দুল জলিল,ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মন্ডল বুলবুল,বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ক্যালিফোর্নিয়া শাখার সভাপতি কামরুল হাসান কাজল।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও পুনর্মিলনী উদ্যাপন কমিটির সদস্য সচিব আমান উল্লাহ সবুজের পরিচালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কুতুব উদ্দিন,মফিজ উদ্দিন, আলী আজগর মাস্টার সাইদুর রহমান,অ্যাড.মোমতাজুল ইসলাম,মজিবুর রহমান, মো.শাহজাহান,বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রইছ উদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদীন,ইব্রাহীম খলিল,সাইফুল ইসলাম বাচ্চু,মিজানুর রহমান,আশরাফুল ইসলাম বাবুল,হুমায়ন কবির রতন,আপন দুলাল প্রমুখ।
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বুলবুল জানান,সকাল ১০টায় বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে অতিথিরা গৌরবোজ্জ্বল ‘ফিরে যাই শৈশবে,মেতে উঠি উৎসবে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এর অংশ হিসেবে আবৃত্তিকার ইকবাল আহমেদ নিশাতের সঞ্চালনায় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় দেশের খ্যাতিমান বাউল শিল্পী আশিক,ক্লোজ আপ তারকা সোহাগ সুমন,যাদু শিল্পী ম্যাজিক লিটন পরিবেশন করেন। এর আগে পুনর্মিলনী উপলক্ষে রাজীবুল হাসান সম্পাদিত পুনর্মিলনীর বিশেষ স্মরণিকা নিয়ে আলোচনা পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
পিডিএসও/রানা