নিজস্ব প্রতিবেদক

  ৩০ নভেম্বর, ২০১৯

পেঁয়াজে ভোগান্তি চরমে, সবজিতেও নেই সুখবর

দেশের পেঁয়াজ বাজার অস্থিতিশীল প্রায় মাস দুই ধরে। এ সময়ের মধ্যে কয়েক দফায় দাম বেড়েছে নিত্যদিনের অতি প্রয়োজনীয় এ পণ্যটির। সর্বশেষ ২৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। তবে দেশের কোথাও কোথাও এর চেয়েও বেশি দাম বিক্রি হয়েছে। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় পেঁয়াজ সংকট কাটাতে সরকারি-বেসরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়।

তুরস্ক, মিসর, মিয়ানমার, চীন, পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। দ্রুত সময়ে সরকারি উদ্যোগ নেওয়ায় কমতে থাকে দাম। ২৭০ টাকা থেকে মাত্র চার দিনের ব্যবধানে ১৬০ টাকা কেজিতে নেমে আসে পেঁয়াজের দর।

কিন্তু সপ্তাহ যেতে না যেতে ফের তা বেড়ে ২৫০ টাকা হয়। তবে কয়েক দিন ধরে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকার ঘরে ঘুরপাক খাচ্ছে পেঁয়াজ বাজার। এতে করে সরকারের পেঁয়াজ আমদানি, ব্যবসায়ীদের উদ্যোগ, বাজার নিয়ন্ত্রণে নানা ঘোষণায় কোনো সুফলই দেখছেন না সাধারণ ক্রেতারা। আবার শীতকালীন সবজিতেও নেই কোনো সুখবর।

গত কয়েক মাস ধরে পেঁয়াজের দামে আগুন, কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায়। পেঁয়াজের দাম নাগালে আসার আগেই দফায় দফায় বাড়ছে চাল, তেল, ময়দাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম। নিত্যপণ্যের দামের এ উত্তাপ কোনোভাবেই কমছে না।

গত সপ্তাহজুড়েই দাম বাড়ার তালিকায় এক এক করে যুক্ত হয়েছে নতুন পণ্য। আর বিভিন্ন অজুহাতে শীতকালীন সবজির দাম বাড়ানো-কমানোর কারসাজি তো চলছেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত লোকজন। বাজার খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন মধ্যবিত্তরাও। এতে ক্রেতারা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর রামপুরা, মালিবাগ, মালিবাগ রেলগেট বাজার, কারওয়ানবাজার, কাঁঠালবাগান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজ ২৪০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে আমদানি করা বিভিন্ন বার্মিজ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি দরে, মিসর ২০০ টাকা, চীনা পেঁয়াজ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে। দেশি নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, গাছসহ পেঁয়াজ (পেঁয়াজের কালি) বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়।

শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা টিটন রায় বলেন, আমদানি না থাকায় পেঁয়াজের দাম বেশি। এর আগে ভারতের পেঁয়াজ সরবরাহ বেশি ছিল তাই দাম কম ছিলে, এখন সেটা নেই। তাছাড়া বিমানযোগে আসা পাকিস্তানি পেঁয়াজের দাম বেশি। তবে আমদানি বেশি হলে দাম কমবে।

অন্যদিকে পেঁয়াজ বাজার স্থিতিশীল না হওয়ায় অব্যাহত রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) খোলা বাজারে ট্রাকসেলে পেঁয়াজ বিক্রি। দীর্ঘ সময় ধরে সারিবদ্ধ লাইনে দাঁড়িয়ে পেঁয়াজ কিনতে দেখা গেছে অনেককে। ভিড় থাকায় বাড়তি চাপ সামলাতে হচ্ছে বিক্রেতাদের। সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন একেকটি ট্রাকযোগে ১ হাজার কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছে টিসিবি। বাজার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত আমাদের বিক্রি অব্যাহত থাকবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহে শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে রাজধানীতে চাহিদা অনুযায়ী সবজি না আসায় দাম বেড়েছিল। তবে এখন বাজারে পর্যাপ্ত শীতকালীন সবজি থাকায় দাম কিছুটা কমেছে। এ সপ্তাহে প্রতি পিস ফুলকপি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৩০, মিষ্টিকুমড়া ৩০, লাউ ৫০ আর কাঁচকলার হালি ৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি বেগুন ৬০ টাকা, শিম ৬০ থেকে ৮০, মুলা ৩০, কাঁকরোল ৫০, নতুন আলু ৮০, পুরোনো আলু ৩০, কাঁচা পেঁপে ৩০, টমেটো ১২০, কাঁচামরিচ ৮০, গাজর ৮০, বরবটি ৫০, পটোল ৪০, ঢ্যাঁড়স ৬০, করলা ৭০ এবং শসা ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি রুই মাছ ২৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ১৫০, বড় সাইজের কাতল ৩৫০, সরপুঁটি ১৮০, শিং ৫০০, কৈ ৪০০, পাবদা ৫০০, রূপচাঁদা ৮০০, টেংরা ৬০০, চিংড়ি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে অপরিবর্তিত রয়েছে ইলিশের দাম। প্রতিটি এক কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া প্রতিটি ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের হালি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকায়।

এদিকে ফার্মের মুরগি কেজি প্রতি ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়, কক লাল মুরগি ২২০ টাকায়, পাকিস্তানি মুরগি ২৪০ টাকায়, দেশি মুরগি ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাজারদর,নিত্যপণের দাম,পেঁয়াজের দর,সবজির দাম
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close