শাহ্জাহান সাজু

  ২৬ অক্টোবর, ২০১৮

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ৩৫৯ শাখা লোকসানি

রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের ৩৫৯ শাখা এখন লোকসান গুনছে। তাছাড়া অব্যাহতভাবে লোকসানি শাখা বাড়ার কারণে ব্যাংকগুলোর সামগ্রিক অর্থনৈতিক সূচক দিনদিন খারাপ হচ্ছে। ব্যাংকগুলো কাক্সিক্ষত মাত্রায় আদায় করতে পারছে না অনাদায়ী ও শ্রেণীকৃত ঋণ। এ ছাড়া কৃষি ও পল্লীঋণ, এসএমই ঋণ, অন্যান্য ঋণ বিতরণ ও আদায় পরিস্থিতিও সন্তোষজনক নয়। বিশেষ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রাগুলোর অধিকাংশই পূরণ করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের ৩৫৯ শাখাকে এখন লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, অব্যাহতভাবে লোকসানি শাখা বাড়ার কারণে ব্যাংকগুলোর সামগ্রিক অর্থনৈতিক সূচক দিনদিন খারাপ হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, লোকসানি শাখা বর্তমানে সবচেয়ে বেশি সোনালী ব্যাংকের। ব্যাংকটির এক হাজার ২১২ শাখার মধ্যে প্রায় ১৮৩টি লোকসানি শাখা। জনতা ব্যাংকের ৯০৮ শাখার মধ্যে প্রায় ৫৭টি লোকসানি শাখা। অগ্রণী ব্যাংকের ৯৩১টির মধ্যে প্রায় ৪৩টি লোকসানি শাখা। রূপালী ব্যাংকের ৫৬২টির মধ্যে প্রায় ৩৩টি, বেসিক ব্যাংকের ৬৮টির মধ্যে প্রায় ২১টি এবং বিডিবিএলের ৪০টির মধ্যে প্রায় ২২টিই লোকসানি শাখা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সুশাসনের অভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো এখন সংকটে পড়ছে। আর একই কারণে লোকসানি শাখা বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি।

অন্যদিকে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৭ দশমিক ১০ শতাংশ কৃষিঋণ আদায় করেছে সোনালী ব্যাংক। জনতা ব্যাংক করেছে ৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ, অগ্রণী ব্যাংক ১০ দশমিক ০৮ শতাংশ ও বিডিবিএল ৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ কৃষিঋণ আদায় করতে পেরেছে। বেসিক ব্যাংক করেছে ২০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন প্রান্তিক শেষে সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে

৬ হাজার ৬০১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। বেসিক ব্যাংকের ঘাটতি ৩ হাজার ১০৬ কোটি ২২ লাখ, জনতা ব্যাংকের ২ হাজার ১৯৫ কোটি ২৫ লাখ, অগ্রণী ব্যাংকের ১ হাজার ৪১৯ কোটি ২৯ লাখ এবং রূপালী ব্যাংকের ১ হাজার ২৯৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। জানুয়ারি-আগস্ট সময়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বেঁধে দেওয়া অনাদায়ী ও শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সোনালী ব্যাংক আদায় করেছে মাত্র ১৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। জনতা ব্যাংক আদায় করেছে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২০ দশমিক ১৯ শতাংশ, অগ্রণী ব্যাংক ২১ দশমিক ৩০ শতাংশ, রূপালী ব্যাংক ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ, বিডিবিএল ২৩ শতাংশ ও বেসিক ব্যাংক আদায় করেছে ৩৩ দশমিক ৯১ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি-আগস্ট সময়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বেঁধে দেওয়া অবলোপন করা খেলাপি ঋণ লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১ দশমিক ২০ শতাংশ আদায় করেছে সোনালী ব্যাংক। জনতা ব্যাংক করেছে লক্ষ্যমাত্রার ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ, অগ্রণী ব্যাংক ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ, রূপালী ব্যাংক ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ ও বেসিক ব্যাংক মাত্র দশমিক ১৬ শতাংশ আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। তবে বিডিবিএল করেছে লক্ষ্যমাত্রার ৮৮ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই বছরের জুন পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪২ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা, যা এসব ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের ২৮ দশমিক ২৪ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত জুনের শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল মোট ঋণের ৩৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ, জনতা ব্যাংকে ছিল ২১ দশমিক ৫৬ শতাংশ, অগ্রণীতে ১৮ দশমিক ১৫ শতাংশ, রূপালীতে ২২ দশমিক ৬৪ শতাংশ, বেসিক ব্যাংকে ৫৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে ছিল ৫৫ দশমিক ১৭ শতাংশ।

ছয় মাসে (গত জুন মাস পর্যন্ত) শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির কাছ থেকে সোনালী ব্যাংক অর্থ আদায় করেছে লক্ষ্যমাত্রার ৩ দশমিক ২২ শতাংশ, জনতা ব্যাংক ১৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ, অগ্রণী ব্যাংক শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ, রূপালী ব্যাংক শূন্য দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং বেসিক ব্যাংক আদায় করেছে শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ। আর ২০ শীর্ষ ঋণখেলাপি বাদে অন্যদের কাছ থেকে সোনালী ব্যাংককে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। তবে ছয় মাসে আদায়ের হার ১৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ, জনতা ব্যাংককে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা, ছয় মাসে আদায়ের হার ২১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। অগ্রণী ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০০ কোটি টাকা, ছয় মাসে আদায়ের হার ১৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। রূপালী ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০০ কোটি টাকা, ছয় মাসে আদায়ের হার মাত্র ১১ শতাংশ। আর বেসিক ব্যাংকের আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭১৫ কোটি টাকা, ছয় মাসে আদায়ের হার ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক,লোকসানি,ঋণখেলাপি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close