নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ জুলাই, ২০১৯

নতুন বাজারে বেড়েছে পোশাক রফতানি

গত অর্থবছরে ইউরোপ-আমেরিকা ছাড়া তৈরি হওয়া নতুন বাজারে গার্মেন্ট পণ্য রফতানি হয়েছে ৫৬৮ কোটি ৭১ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ। আগের অর্থবছরে রফতানির পরিমাণ ছিল ৪৬৭ কোটি ডলার। অর্থাৎ, নতুন বাজারে গার্মেন্ট পণ্য রফতানি বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ বা ১০২ কোটি ডলারের। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত অর্থবছরে বাংলাদেশের গার্মেন্ট পণ্য রফতানি বেড়েছে সাড়ে ১১ শতাংশ। এসব বিবেচনায় নতুন বাজারে রফতানি আশাব্যঞ্জক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বিশেষত নতুন বাজারে রফতানি বাড়াতে সরকারের দেওয়া প্রণোদনা এবং কিছু বাজারে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা বৃদ্ধিতে বড় অবদান রেখেছে বলে মনে করছেন তারা।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, প্রায় এক যুগ আগে নতুন বাজারে রফতানি বাড়াতে সরকার নগদ সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার পর এসব বাজারে রফতানি বাড়ছে। এর মধ্যে কোনো কোনো বাজারে রফতানি ১ বিলিয়ন ডলারও ছাড়িয়েছে। ভবিষ্যতে আরো কিছু বাজারে গার্মেন্ট পণ্য রফতানি বিলিয়ন ডলার ছাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশের গার্মেন্ট পণ্য রফতানি মূলত ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকানির্ভর। রফতানির ৮২ শতাংশই যায় এ দুটি বাজারে। তবে কোনো কারণে এসব বাজারে রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এমন চিন্তা থেকে সরকার এ দুটি বাজারের বাইরে নতুন ও অপ্রচলিত বাজারে রফতানি বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেয়। এর অংশ হিসেবে এসব বাজারে রফতানির ওপর নগদ সহায়তা দিতে শুরু করে। বর্তমানে নতুন বাজারে রফতানির ক্ষেত্রে ৪ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হয়। ফলে নতুন বাজারে রফতানি বাড়তে শুরু করেছে। এক দশক আগে নতুন বাজারে মোট গার্মেন্ট পণ্যের ১০ শতাংশ রফতানি হলেও ধীরে ধীরে এই হিস্যা বাড়ছে। সর্বশেষ অর্থবছরে তা প্রায় ১৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

নতুন বাজারের তালিকায় রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চীন, জাপান, ভারত, চিলি, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্কসহ আরো কয়েকটি দেশ। নতুন বাজারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গার্মেন্ট পণ্য রফতানি হয়েছে জাপানে। গত অর্থবছরে দেশটিতে ২৯ শতাংশ বেড়ে তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে ১০৯ কোটি ডলারের। অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারতে রফতানি বেড়েছে সবচেয়ে বেশি হারে, ৭৯ শতাংশ। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় ৭২ কোটি ডলার, প্রবৃদ্ধি সাড়ে ১৩ শতাংশ; চীনে ৫১ কোটি ডলার, প্রবৃদ্ধি ২৯ শতাংশ, ভারতে ৫০ কোটি ডলার; কোরিয়ায় ২৮ কোটি ডলার, প্রবৃদ্ধি ৪৫ শতাংশ; ব্রাজিলে ১৬ কোটি ডলার, প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। অন্যদিকে তুরস্কে রফতানি না বেড়ে উল্টো ২৭ শতাংশ কমে গেছে।

নতুন বাজার হিসেবে জাপান ও অস্ট্রেলিয়ায় রফতানি করছে নারায়ণগঞ্জের এমবি নিট ফ্যাশন্স। প্রতিষ্ঠানটির মালিক পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সরকারের নগদ সুবিধা ও শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকায় কয়েকটি বাজারে রফতানি বাড়ছে। তবে জাপান চায়না প্লাস নীতি (চীনের বিকল্প হিসেবে অন্য দেশ থেকে আমদানি বাড়ানো) গ্রহণ করার পর আমাদের সম্ভাবনা সবচেয়ে ভালো থাকলেও সেখানে রফতানি প্রত্যাশিত হারে বাড়েনি। বরং এই সুবিধার বেশির ভাগই নিচ্ছে ভিয়েতনাম। ব্রাজিলে ৪০ শতাংশ শুল্ক থাকায় সেখানে রফতানি কাক্সিক্ষত হারে বাড়ছে না। তুরস্ক মাত্রাতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে। ফলে সেখানেও রফতানি কমছে।

এসব দেশে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা পেতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দ্বিপাক্ষিক ভিত্তিতে কিংবা পণ্যভিত্তিক সুবিধা আদায়ে আলোচনা করতে পারে বলে মত দিয়েছেন মোয়াজ্জেম হোসেন। এজন্য প্রস্তুতি দরকার। এছাড়া নন-কটন পণ্যে (পলেস্টার, সিনথেটিক ফাইবার, নন-ফাইবার) কোনো কোনো দেশের আগ্রহ রয়েছে। এসব পণ্যে চীনসহ বিদেশি বিনিয়োগ আনার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close