শাহ্জাহান সাজু

  ৩০ জানুয়ারি, ২০১৯

সামাজিক মাধ্যমে ৫ বছরের বিজ্ঞাপনের তথ্য সংগ্রহে এনবিআর

বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের বিপরীতে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সার্চ ইঞ্জিন প্রতিষ্ঠান গত পাঁচ বছরে কী পরিমাণ আয় করেছে, তার বছরভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। একই সঙ্গে বিগত পাঁচ বছরে বিজ্ঞাপন খাতে বিদেশে কী পরিমাণ অর্থ লেনদেন হয়েছে এবং কী পরিমাণ মূল্য সংযোজন কর ও আয়কর আদায় করা হয়েছে তার প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ও মাসভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রসঙ্গত, ফেসবুক, গুগল, ইয়াহু, অ্যামাজন, ইউটিউবসহ ইন্টারনেট ভিত্তিক সব প্ল্যাটফর্ম থেকে রাজস্ব আদায়ে হাইকোর্টের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরের এক সভায় ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপরই তা বাস্তবায়নের কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। গত ৪ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটির মূসক-বাস্তবায়ন ও আইটির সদস্যের কক্ষে অনুষ্ঠিত বিশেষ কমিটির সভায় এ সংক্রান্ত আরো বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, হাইকোর্টের রিট পিটিশনের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ওইদিনই বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। যেখানে এনবিআরের সদস্যকে (মূসক-বাস্তবায়ন ও আইটি) ওই কমিটির আহ্বায়ক করে আয়কর, মূসক ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একজন প্রতিনিধিকে সদস্য করা হয়েছে। কমিটির প্রথম সভায় গুগল, হোয়াটস অ্যাপ, ইয়াহু, অ্যামাজন, ইউটিউব, ফেসবুক ও ইমো ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সার্চ ইঞ্জিন মাধ্যমে প্রচারিত বিজ্ঞাপনে আয়কর, মূসক ও অন্যান্য ফি নিয়ে আলোচনা করা হয়। সভায় কমিটির সদস্যরা আলোচনাকালে কর বা ভ্যাট আরোপের বিষয়ে নীতিমালার দাবি করেন। সভায় আরো যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তাহলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনপূর্বক ও ব্যাংকিং চ্যানেলে বিগত পাঁচ বছরে বিজ্ঞাপন খাতে বিদেশে কী পরিমাণ অর্থ লেনদেন হয়েছে এবং কী পরিমাণ মূল্য সংযোজন কর ও আয়কর আদায় করা হয়েছে তার প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ও মাসভিত্তিক তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে পত্র প্রেরণ করা যায়। গঠিত কমিটিতে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) একজন প্রতিনিধি কো-অপ্ট করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পত্র প্রেরণ করা যায়। বিটিআরসির লাইসেন্সধারী মোবাইল ফোন অপারেটর এবং অন্যান্য লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান গুগল, ওয়াটস অ্যাপ, ইয়াহু, অ্যামাজন, ইউটিউব, ফেসবুক ও ইমো ইত্যাদি মাধ্যমে কী পরিমাণ ডিজিটাল বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে তার বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়ে বিটিআরসি বরাবর পত্র প্রেরণ করা যেতে পারে। বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের বিপরীতে গুগল, হোয়াটস অ্যাপ, ইয়াহু, অ্যামাজন, ইউটিউব, ফেসবুক ও ইমো ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান গত পাঁচ বছরে কী পরিমাণ আয় করেছে তার বছরভিত্তিক তথ্য যাচাইয়ের জন্য উপরোক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে পত্র প্রেরণ করা যেতে পারে। এছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিনিধি আইসিটি নীতিমালা অনুযায়ী যা করণীয় সে সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অবগত হওয়া।

প্রসঙ্গত, গত ৭ মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং সার্চ ইঞ্জিন গুগলে দেওয়া বিজ্ঞাপনে কর বসানোর উদ্যোগ হিসেবে দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছিল এনবিআর। এর আগে হাইকোর্টে এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে গত ১১ এপ্রিল বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশে ফেসবুক, গুগল, ইয়াহু, অ্যামাজন, ইউটিউবসহ ইন্টারনেটভিত্তিক সব প্ল্যাটফরম থেকে রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে বিজ্ঞাপন, ডোমেইন বিক্রি, লাইসেন্স ফিসহ সব ধরনের লেনদেনের বিপরীতে এসব প্ল্যাটফর্ম থেকে আদায়যোগ্য উৎসে কর, শুল্কসহ সব ধরনের রাজস্ব আদায়ে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছিল রুলে। চার সপ্তাহের মধ্যে অর্থ সচিব, আইন সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, তথ্য সচিব, বাংলদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ নিউজ পেপারস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, গুগল, ইয়াহু, অ্যামাজন ও ইউটিউব কর্তৃপক্ষকে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গত ১০ বছরে অর্থাৎ ২০০৭ থেকে এখন পর্যন্ত এসব প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ থেকে কী পরিমাণ আয় করেছে তা নিরূপণ করতে এবং নিরূপিত আয়ের বিপরীতে কী পরিমাণ উৎসে কর, শুল্ক ও রাজস্ব আদায়যোগ্য ছিল তা নিরূপণ করতে অভিজ্ঞদের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। গত ৯ এপ্লিল কয়েকটি দৈনিকে এ সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে এ রিটটি করেন মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লবসহ সুপ্রিম কোর্টের ছয় আইনজীবী।

জানা যায়, গত ৪ এপ্রিল এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে সংবাদপত্র শিল্প মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো) নেতাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় ফেসবুক, ইউটিউব এবং গুগলকে করের আওতায় আনার বিষয়ে প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া পক্ষে মতামত দেন।

এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, মূলত যেসব প্রতিষ্ঠান অনলাইনের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে তাদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করা হবে। বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্মগুলো যেন বাংলাদেশে নিবন্ধন নিয়ে কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে ব্যবসা করে, সে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। যেহেতু প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশি, সেহেতু বাংলাদেশে তাদের নিবন্ধন নিতে হবে। কীভাবে নিবন্ধন হবে, সেটাও দেখা হবে বলে ওই সময় জানিয়েছিলেন তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close