নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৪ নভেম্বর, ২০১৮

রাজস্বের ৫০ শতাংশ আয়কর থেকে আহরণের চিন্তা

আগামী ২০২১ সালের মধ্যে রাজস্ব আদায়ের ৫০ শতাংশ আয়কর খাত থেকে আহরণের চিন্তা করা হচ্ছে। এজন্য অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) কর আদায় ব্যবস্থায় আয়কর ব্যবস্থায় কাঠামোগত সংস্কারসহ বেশকিছু নতুন উদ্যোগ নেওয়ার চিন্তা করছে। এ বিষয়ে এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পরামর্শ চাওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর জন্য একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করেছে আইআরডি। এতে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের অব্যাহত অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখার জন্য অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে পর্যাপ্ত রাজস্ব সংগ্রহ করা আবশ্যক। উন্নয়ন অর্থায়নের জন্য অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে পর্যাপ্ত রাজস্ব সংগ্রহকে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (এসডিজি) অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের কর জিডিপির বর্তমান অনুপাত ১০ শতাংশের মতো। মধ্যমেয়াদি রাজস্ব কৌশলে কর জিডিপি অনুপাত ১৬ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কর জিডিপি অনুপাত ১৬ শতাংশে উন্নীত করতে হলে আগামী বছরগুলোতে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ হারে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন হবে।

এতে বলা হয়েছে, বাজার অর্থনীতির কারণে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সমাজে আয় ও বৈষম্য বৃদ্ধি পায়। আয় ও সম্পদ বৈষম্য নিয়ন্ত্রণে রেখে একটি ন্যায্য ও সুষম বণ্টনভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। আয়কর একটি আদর্শ প্রগ্রেসিভ কর ব্যবস্থা যেখানে অধিক সম্পদশালীদের কাছ থেকে অধিকহারে কর আদায় করা সম্ভব হয়। ফলে আয়করের মাধ্যমে এক সঙ্গে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য পূরণ হয়। এগুলো হলো, রাজস্ব আহরণ এবং সমাজে আয় ও সম্পদের বণ্টন-বৈষম্য নিয়ন্ত্রণ। এ কারণে উন্নত দেশগুলো রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের বেশি আয়কর খাতে আদায় করে। উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশও একটি আদর্শ ও বণ্টন-সহায়ক কর ব্যবস্থা বিনির্মাণের লক্ষ্য স্থির করেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে দেওয়া ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ২০২১ সালের মধ্যে মোট রাজস্বের ৫০ শতাংশ আয়কর খাতে আদায়ের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে।

আইআরডি বলছে, বিগত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাংলাদেশের আয়কর খাতে প্রবৃদ্ধি কাক্সিক্ষত মাত্রার চেয়ে কম হচ্ছে। দেশের কর ব্যবস্থা যুগোপযোগী না হওয়ায় তা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে রাজস্ব সংগ্রহে সমর্থ হচ্ছে না। কর জিডিপি অনুপাত মধ্যমেয়াদে ১৬ শতাংশ এবং দীর্ঘমেয়াদে ২০ শতাংশে উন্নীত করতে হলে দেশের কর ব্যবস্থাকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারী ও যুগোপযোগী করতে হবে। দেশে একটি সমৃদ্ধ কর সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে হলে একদিকে কর সেবার সামর্থ্য বাড়াতে হবে, অন্যদিকে দক্ষ কর তথ্য ব্যবস্থাপনা ও জোরালো এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রমের মাধ্যমে কর ফাঁকির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।

কর কাঠামোর সংস্কার সম্পর্কে বলা হয়েছে, কর বিভাগের সর্বশেষ কাঠামোগত সংস্কার সম্পন্ন হয়েছিল ২০১১ সালে। সে সময় আয়কর রিটার্ন দাখিলকারী করদাতার সংখ্যা ছিল মাত্র ৮ লাখ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের শেষ নাগাদ এ সংখ্যা ২২ লাখ অতিক্রম করবে বলে আশা করা করা যায়। অর্থাৎ এ কয়েক বছরে আয়কর রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা প্রায় ৩ গুণ বেড়েছে কিন্তু কর ইউনিট বা জনবলের আর কোনো সম্প্রসারণ হয়নি। ফলে একই সংখ্যক ইউনিট ও জনবল নিয়ে বিপুল বর্ধিত সংখ্যক করদাতাকে করসেবা দেওয়া ও তাদের কর পরিপালন নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে কর আদায়ের প্রবৃদ্ধির গতি কমছে এবং কর ফাঁকি বাড়ছে।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৮ সালের বাজেট বক্তৃতায় লক্ষ্য স্থির করেছেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরের মধ্যে নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা হবে ১ কোটি এবং রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা হবে ৮০ লাখ। এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন এবং অর্জিত লক্ষ্যের আওতায় যে বিপুল সংখ্যক করদাতা হবে তাদের উপযুক্ত করসেবা প্রদান ও কর পরিপালন নিশ্চিত করার জন্য মাঠ পর্যায়ের কর অফিসগুলোর উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ প্রয়োজন হবে। এছাড়া অর্থমন্ত্রী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলা ও উপজেলায় কর অফিস স্থাপনের বিষয় উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে নতুন আয়কর আইন প্রণয়নের কাজ চলছে যা আগামী অর্থবছরের শুরুতে পাস হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উৎসে কর খাতে ব্যাপক ফাঁকি রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, দেশের বেতনভাতা খাতে উৎসে করের মাত্র ৪ থেকে ৫ শতাংশ আদায় হয়। উন্নত দেশগুলোতে এ হার ৩০ শতাংশের ওপরে। বেতন ও অন্যান্য উৎস কর খাতে কর ফাঁকি কমানোর লক্ষ্যে বিশ্বের অগ্রসর কর প্রশাসনগুলো আধুনিক ও ডিজিটাল উৎসে কর ব্যবস্থাপনার প্রচলন করেছে। অর্থমন্ত্রীর ২০১৬ ও ২০১৭ সালের বাজেট বক্তৃতায় দেশে ইলেকট্রনিক উৎস কর ব্যবস্থাপনা প্রবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। কার্যকর ব্যবস্থাপনার ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা জরুরি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে করদাতা চিহ্নিতকরণে সনাতনি ব্যবস্থা পরিহার করে অনলাইন ভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যা দেশের অন্যান্য সিস্টেমের সঙ্গে আন্তঃসংযুক্ত থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য লাভ করবে এবং কর ফাঁকি উদ্ঘাটন ও করদাতা চিহ্নিতকরণের কাজ করবে। এ প্রস্তাবটি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে অর্থ আইন-২০১৮ এর মাধ্যমে আয়কর আইনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য সংগ্রহ বিধান সংযোজন করা হয়েছে। এ বিধানটি কার্যকর করে নতুন করদাতা চিহ্নিতকরণ ও কর ফাঁকি রোধ করার জন্য অবিলম্বে বাজেটে প্রস্তাবিত কর তথ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিট গঠন করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কর ফাঁকি রোধে কর প্রশাসন কর গোয়েন্দা, তদন্ত ও প্রসিকিউশন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র প্রশাসনিক ইউনিট গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে আইআরডির প্রতিবেদনে। এছাড়াও আয়করের ই-রেজিস্ট্রেশন, ই-রিটার্ন ফিলিং ও ই-পেমেন্টসহ সব ধরনের ই-ট্যাক্স কার্যক্রম কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র ফাংশনাল ইউনিট থাকা জরুরি। বাংলাদেশে এরই মধ্যে ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন, ই-ফিলিং ও ই-পেমেন্ট কার্যক্রম চালু করলেও এসব কার্যক্রম পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য কোনো ফাংশনাল ইউনিট গঠন করা হয়নি। ফলে ই-ট্যাক্স কার্যকরভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close