নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৬ আগস্ট, ২০১৮

বাণিজ্য ঘাটতি ক্রমেই বাড়ছে

বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। গত অর্থবছরে দেশের পণ্য ও সেবা উভয় বাণিজ্যেই ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজার ৮২৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। আর আগে ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে যার পরিমাণ ছিল ৯৪৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বাণিজ্যেই ঘাটতির পরিমাণ ৯২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আমদানি ব্যয় বাড়লেও সে অনুযায়ী রফতানি আয় না বাড়ায় বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি ব্যয় যে হারে বেড়েছে, সে তুলনায় রফতানি আয় না বাড়ায় বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা চাপে রয়েছে। আমদানি বাড়লেই বাজারে ডলারের দাম বেড়ে যায়। তবে আমদানির এই প্রভাব যদি উৎপাদনশীল খাতের বিনিয়োগে পড়ে তাহলে সেটা অর্থনীতির জন্য ভালো হবে। তবে এই অর্থ যদি পাচার হয়ে থাকে তাহলে এর ফল অত্যন্ত ভয়াবহ হবে।

তারা বলছেন, দেশে অবকাঠামোর উন্নয়ন হচ্ছে। এছাড়া নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান করতে হলে আমদানি বাড়বেই। এটি কমানোর কোনো উপায় নেই। তবে সঠিকভাবে আমদানি হলে ব্যয় পর্যায়ক্রমে অনেকটা কমবে আসবে বলে মনে করেন তারা।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষে ইপিজেডসহ রফতানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৩ হাজার ৬২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে ৫ হাজার ৪৪৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এ হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮২৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। যা বর্তমান বিনিময় হার (৮৪ টাকা) অনুযায়ী ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকার বেশি। আলোচিত সময়ে, আমদানি বেড়েছে ২৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। এর বিপরীতে রফতানি বেড়েছে কেবল ৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অন্যদিকে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ফলে চলতি হিসাবে ঘাটতি বড় হয়েছে।

প্রসঙ্গত, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। কিন্তু গত কয়েক বছর উদ্বৃত্তের ধারা অব্যাহত থাকলেও গত অর্থবছরে ঋণাত্মক ধারায় চলে গেছে। এখনো তা অব্যাহত আছে। সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষে ৯৭৮ কোটি ডলার ঋণাত্মক হয়েছে। যা এর আগের অর্থবছরে ঋণাত্মক ছিল ১৩৩ কোটি ১০ লাখ ডলার। এদিকে আলোচিত সময়ে সেবা খাতে বেতনভাতা বাবদ বিদেশিদের পরিশোধ করা হয়েছে ৯১১ কোটি ডলার। আর বাংলাদেশ এ খাতে আয় করেছে ৪৫৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এ হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৫৭ কোটি ডলার। যা গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩২৮ কোটি ডলার।

প্রতিবেদন বলছে, অর্থবছরের মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বিদেশি ঋণ গ্রহণ বেড়েছে। আলোচ্য সময়ে আর্থিক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এ ধরনের ঋণ এসেছে ৫৭৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা আগের একই সময়ের তুলনায় ৭৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি। বিদেশি ঋণ বাড়লেও বিদেশি বিনিয়োগ কমে এসেছে। এ সময় সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ২৭৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ কম। অন্যদিকে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগও কমেছে। অর্থবছর শেষে শেয়ারবাজারে ৩৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। যা তার আগের অর্থবছরে ছিল ৪৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close