বাণিজ্য ডেস্ক

  ১৬ জানুয়ারি, ২০১৮

প্রবৃদ্ধি আগের চেয়ে বাড়তে পারে : আশাবাদী বিশ্বব্যাংক

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৬ দশমিক ৪ শতাংশে বাড়তে পারে বলে ধারণা করছে বিশ্বব্যাংক; যা তাদের আগের পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি। আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটি গত বুধবার তাদের ষাণ¥াষিক প্রতিবেদন গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টসে এই পূর্বাভাস দিয়েছে। সরকার আশা করছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই হারকে ৭ দশমিক ৮ শতাংশে নিয়ে যেতে পারবে বাংলাদেশ। এর আগে জুনে একটি প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছিল, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পেতে পারে। এবারের প্রতিবেদনে তা বাড়িয়ে ৭ দশমিক ২ শতাংশ করা হয়েছে।

গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন নিয়ে বিশ্বব্যাংক সরকারের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে এলেও বরাবরের মতোই শেষ পর্যন্ত সরকারের হিসাবই গ্রহণ করেছে তারা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) চূড়ান্ত হিসাবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ; যদিও তা ৭ শতাংশের বেশি হবে না বলে জোর দিয়ে আসছিল বিশ্বব্যাংক। এবারের প্রতিবেদনে বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, শিল্প ও সেবা খাতে ‘আশাতীত উন্নতির ফলে’ জুন মাসের পূর্বাভাস ছাড়িয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ হয়েছে। সরকারি খাতে বিনিয়োগে জোরালো প্রবৃদ্ধির সঙ্গে ভোক্তা চাহিদা বৃদ্ধির বিষয়টি এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন বিশ্ব ব্যাংকের অর্থনীতিবিদরা। অবশ্য রফতানি ও প্রবাসী আয়ে মন্দা এবং বন্যায় ফসলহানির বিবেচনায় গত অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির হিসাব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অর্থনীতির গবেষকদের কারো কারো মধ্যে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলছেন, যে যুক্তি দেখিয়ে ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে তাতে ফাঁক রয়েছে। তিনি বলেন, সাময়িক হিসাব প্রাক্কলনে বিশ্ব ব্যাংকের নিজস্ব সূচক থাকলেও চূড়ান্ত হিসাবে কোনো দেশের নিজস্ব পরিসংখ্যানের ওপর নির্ভর করা ছাড়া তাদের উপায় থাকে না। এ কারণে চূড়ান্ত হিসাবে কিছুটা কন্ট্রাডিকশন থাকেই। তারপরও তাদের প্রাক্কলন অনেকটা সঙ্গতিপূর্ণ।

কিন্তু বিবিএস যেসব সূচকের ভিত্তিতে প্রবৃদ্ধি হিসাব করছে তাতে অসঙ্গতি রয়েছে বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, রফতানি আয়, রেমিটেন্স, কৃষি খাত, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও বেসরকারি খাতে প্রবাহ বিবেচনায় নিলে সরকারের হিসাবের সঙ্গে ম্যাচ করাটা একটু কঠিন হয়ে যায়।

সাতের ওপরে যেভাবে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, সেটা কীভাবে হচ্ছে?... বলা হচ্ছে যে, ম্যানুফেকচারিং খাতে ১০ পার্সেন্ট গ্রোথ হয়েছে। এর বড় অংশ হচ্ছে রেডিমেট গার্মেন্ট। কিন্তু রফতানি খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবার ২ শতাংশের নিচে। তাহলে গার্মেন্টে বাদে অন্য খাতগুলোতে বিশাল বড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ধরতে হবে। সেটা কিন্তু দেখা যাচ্ছে না। আরেকটা বিষয় আমাদের এখানে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি সব সময়ই রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। ওগুলো দুর্বল হয়ে গেলে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি অত বেশি বাড়ে না। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবাসী আয় হয়েছে আগের বছরের চেয়ে ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ কম। আর পণ্য রফতানি থেকে বাংলাদেশের আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১ দশমিক ৭২ শতাংশ। তারপরও বিবিএসসের হিসাবে সেবা খাতের রফতানি আয় ৮ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে।

সেলিম রায়হান বলেন, গত অর্থবছরে গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা অনেকটাই গতি হারিয়েছে। ঋণ বিতরণেও প্রবৃদ্ধি কমেছে। রেমিটেন্স কমার প্রভাব দেখা যাচ্ছে জমির দাম কমার মধ্যে। এই সময়ে শিল্প খাতের ৮ থেকে ৯ লাখের মতে শ্রমিক কাজ হারিয়েছে, এটা সরকারি তথ্য। তাদের বড় অংশই গ্রাম থেকে আসা। আবার কর্মসংস্থানও সেভাবে সৃষ্টি হয়নি। অথচ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। তাই এ প্রবৃদ্ধির গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। শ্রমিক কাজ হারালে এর নেতিবাচক প্রভাব সরাসরি প্রবৃদ্ধিতে পড়ার কথা। কিন্তু সেখানেও হিসাব মেলাতে পারছেন না এই গবেষক। আমি মনে করি, এই গ্রোথগুলো সোর্সেস অব ক্লারিফাই করা বিবিএসেরই দায়িত্ব। বিবিএসের তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্যা হওয়ার পরও আমদানি নির্ভর বাংলাদেশের জোরালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

জোরালো অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও রফতানির ওপর ভর করে ২০১৮-২০ মেয়াদে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৬ দশমিক ৭ শতাংশ হারে বাড়বে। সুদের নিম্ন হার ও অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে বিনিয়োগ বাড়বে বলেও আশা করা যায়। এ ছাড়া উপসাগরীয় দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধি জোরদার হওয়ায় এবং ভোক্তা চাহিদা বাড়ায় প্রবাসী আয়ও ঘুরে দাঁড়াবে।

তবে চলতি হিসাবের ঘাটতি বড় হতে থাকায় এবং বেসরকারি আর্থিক খাতের বার্ষিক হিসাবে দুর্বলতা থাকায় বেসরকারি বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এর সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতার শঙ্কা এবং বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের কারণে বাংলাদেশে আগামী দিনের অর্থনীতির ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে বলে বিশ্ব ব্যাংক সতর্ক করেছে। প্রবৃদ্ধির হিসাব নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও গত অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির পেছনে যে যুক্তি দেখানো হয়েছে তার সঙ্গে অনেকটাই একমত সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জিডিপির বিস্তারিত হিসাব কেবল বিবিএসই করে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সেই হিসাবের ওপরই নির্ভর করে। প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলনে বিশ্বব্যাংক নিজস্ব মডেল প্রয়োগ করলেও চূড়ান্ত হিসাবের ক্ষেত্রে বিবিএসের পরিসংখ্যানের ওপর নির্ভর করে তারা। গবেষণা পদ্ধতি, ভিত্তি বর্ষ ও নমুনা বাছাইয়ের মানোন্নয়নে বিবিএসের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে অর্থনীতির এই গবেষক বলেন, এসবের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি বা বিশ্বাসযোগ্য করার চ্যালেঞ্জ বিবিএসের সামনে থাকছেই। আমরা যেটা আশা করতে পারি, বিবিএস তার তথ্য সংগ্রহ আরো সময়মত করলে হয়তো তার বিশ্বাসযোগ্যতা আরো বাড়বে।

মোস্তাফিজ বলেন, বিবিএস হিসাব দেখাচ্ছে যে, গার্মেন্ট খাতের প্রবৃদ্ধি ধীর হলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে। রেমিটেন্স কম এলেও গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা ছিল। সরকারের বিনিয়োগ বাড়ছে, সেটারও একটা ইতিবাচক ফলাফল বা প্রভাব প্রবৃদ্ধির ওপর পড়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist