তারুণ্য ডেস্ক
তারুণ্যের অনন্য প্রয়াস ‘বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন’
এক টাকায় খাবার-দাবারসহ চিকিৎসা এবং আইনি সহায়তা! এটি কিভাবে সম্ভব? নিশ্চয়ই ভাবতে অবাক লাগছে। কিন্তু যতই অবাক হোন না কেন, এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে ‘বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন’। ২০১৩ সালের ২২ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ থেকে এই ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু। এর প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাশ। শৈশবে সুবিধাবঞ্চিতদের কাতারে ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা কিশোর। টাকার অভাবে মাধ্যমিকের পর লেখাপড়ার বিরতি ঘটে। এরপর কয়েক বছর বিরতির পর চট্টগ্রামের একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে প্রবেশ করেন চুয়েটে। এখান থেকে পাঠ শেষ করে ২০০৬ সালে যোগ দেন ওয়ারিদ টেলিকমে (এয়ারটেল)। বর্তমানে পেরুতে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘ওলো’তে কর্মরত। সম্পূর্ণ নিজের টাকায় তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। সুবিধাবঞ্চিত হওয়া এবং নানা রকম প্রতিকূলতাই তাকে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদেরকে নিয়ে ভাবার প্রেরণা জুগিয়েছে।
সংগঠনটি চলছে মূলত তরুণ স্বেচ্ছাসেবকদের হাতে। মানুষের জন্য কিছু করার উদ্দেশ্যে নিজ উদ্যোগেই এখানে কাজ করছে সবাই।
এখানে প্রথমে বিনা মূল্যে বিতরণ করা হতো। কিন্তু সুবিধাবঞ্চিতদের নিজেদেরকে অন্তত খাবার কিনতে পারার সামর্থ্যবান বোঝাতেই এই এক টাকার তকমা লাগানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম স্বেচ্ছাসেবক তৌকির ওসমান। প্রতিদিন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের খাবার রান্না এবং তা বিতরণের কাজে নিয়োজিত আছে প্রায় ৩০০ স্বেচ্ছাসেবক। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবকরা নিজেরাই রান্নার কাজ করে।
শুধু আহারই নয়, এর পাশাপাশি শিশুদের পরিচ্ছন্ন জীবন উপহার দিতে তাদেরকে খাওয়ার আগে হাত ধোয়া, নখ কাটা এবং নিয়মিত চুল কাটার কাজ শেখাতেও নিয়োজিত এই ফাউন্ডেশন। সম্প্রতি কড়াইল বস্তিতে আগুনে সর্বহারা মানুষের পাশেও দাঁড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ৫ দিনে প্রায় ১০ হাজার মানুষের খাবার সরবরাহ করা হয়েছে সেখানে। তাদের দেখাদেখি অন্যান্য সংগঠনও ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আগুন লাগার পরদিন ভোরবেলা থেকেই সাহায্যের কাজ শুরু করেছে এই প্রতিষ্ঠানটির তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরা। সমাজের অনেক সম্মানিত ব্যক্তি এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন, যারা নিজেদেরকে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
এক টাকায় এ পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। প্রথম থেকে প্রতিষ্ঠাতা কিশোরের নিজ অর্থায়নে চললেও বর্তমানে সমাজের বিভিন্ন পেশার মানুষের অর্থায়নে চলছে এর কার্যক্রম। কিন্তু অর্থ সংগ্রহে রয়েছে একটি প্রক্রিয়া এবং স্বচ্ছতা। যে কেউ চাইলেই অর্থ সাহায্য করতে পাওে না। এর জন্য তাদেরকে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
খাবারের পাশাপাশি চলছে এক টাকায় চিকিৎসা এবং আইনি সহায়তা। এ বছর ৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে এক টাকায় স্বাস্থ্যসেবা। এ পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার মানুষকে দেওয়া হয়েছে এই সেবা। এছাড়া বিভিন্ন অপরাধে জড়িত শিশুদের আইনি সহায়তা দিয়ে আসছে এই প্রতিষ্ঠানটি; তাও আবার এক টাকায়। এসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে সঠিক পথে পরিচালনা করাই প্রতিষ্ঠানটির মুখ্য উদ্দেশ্য।
"