কাউসার মাহমুদ

  ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

উর্দু সাহিত্যে প্রথম বই

ইতিহাস বলে, ১৮ শতকে ইংরেজির প্রভাবে উর্দু ও হিন্দি সাহিত্যের বিকাশ ঘটে। হিন্দি ও উর্দুর একটি সাধারণ কথ্য রূপ আছে, যার নাম হিন্দুস্তানি ভাষা। কিন্তু হিন্দুস্তানি ভাষা সাহিত্যিক ভাষার মর্যাদা পায়নি, যদিও মহাত্মা গান্ধী ইংরেজবিরোধী আন্দোলনে একতা প্রদর্শনের জন্য হিন্দুস্তানি ভাষায় কথা বলতেন। অন্যদিকে স্বতন্ত্র উর্দু ভাষার প্রকাশ ঘটেছে দারুণভাবে। এ ভাষায় লিখিত সাহিত্যকর্ম ক্রমে উর্দুকে নিয়ে গেছে বিশেষ একটি স্থানে। উর্দু সাহিত্যে বিভিন্ন ধারায় বিগত কয়েকশ বছরে নানা রকম বইপুস্তক রচিত হলেও প্রথম ছিল কোন বইটি? তাই জানাতে আজকের আয়োজন।

ড্রামা

‘সাজাদ সিনবল’ কিশোরম ভাটের লেখা আধুনিক উর্দু ধারার প্রথম ড্রামাটিক উপন্যাস। ১৮৭৪ সালে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়। শক্তিমান লেখক কিশোরম ভাটকে বলা হয় উর্দু ও হিন্দি দুই ভাষারই ড্রামা উপন্যাসের পথিকৃৎ। তবে দীর্ঘদিন ধরেই ভাটের এই বই নিয়ে একটি ভুল তথ্য প্রসিদ্ধ আছে। অনেকেই বলেন, তৎকালে যেহেতু সেখানে ‘দেবনাগরি’ লিপির প্রচলন ছিল তাই এটিও সেকালের প্রচলিত পুরোপুরি দেবনাগরি ভাষাতেই লিখিত। কিন্তু আদতে তথ্যটি ভুল। বরং ভাষা, শব্দ, বাক্য গঠন ও এর ব্যবহারে পুরো ড্রামাটিই লেখা হয়েছে নিখাদ উর্দু ভাষায়। আগ্রহীরা চাইলে বিহার রাষ্ট্রভাষা পরিষদ লাইব্রেরিতে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। সেখানেই সংরক্ষিত আছে প্রায় ১৫০ বছরের প্রাচীন ও উর্দু সাহিত্যের প্রথম ড্রামাটিক উপন্যাসটি। কিশোরাম ভাটের পূর্বপুরুষরা মূলত বিহার রাষ্ট্রের ছিল। এককালে তারা বিহার রাষ্ট্র ছেড়ে বিহার শরিফে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

আধুনিক উপন্যাস

‘মিরআতুল উরুশ’। ডেপুটি নজীর আহমেদের লেখা এ উপন্যাসকেই সাধারণভাবে আধুনিক উর্দু সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস বলে সাব্যস্ত করা হয়। পরবর্তীতে বিস্তর তথ্যানুসন্ধান ও ইতিহাস পর্যালোচনা করার পর মৌলভী করীম উদ্দীনের উপন্যাস ‘খততে তাকদীর’কে প্রথম বলে ধরার যদিও একটা চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্ত প্রসিদ্ধ গল্পকার গোলাম আব্বাস তার একটি ইন্টারভিউতে বলেছিলেন, ‘শাদ আজমি আবাদির লেখা উপন্যাস ‘সু’রতুল খেয়ালের’ আগে উর্দু ভাষায় রচিত কোনো উপন্যাসের সন্ধান ইতিহাসে পাওয়া যায় না। সু’রতুল খেয়াল যেটি ‘ওয়েলায়াত কি আপবীতি’ নামে প্রসিদ্ধ। এটি ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত হয়। যদিও ডেপুটি নজীর আহমেদের ‘মিরাতুল উরুশ’ এবং ‘বানাতুন নাআশ’, শাদ আজমির সু’রতুল খেয়ালের আগেই প্রকাশিত হয়। কিন্তু অধিকাংশ ঔপন্যাসিকের মতেই, ডেপুটি নজীর আহমেদের এ বইকে বিষয়বস্তু ও সাহিত্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে উপন্যাস হিসেবে গণ্য করা হয়নি।

বড়গল্প

লাহোরের ‘নকুশ’ পত্রিকায় ১৯৫৪ সালের একটি সংখ্যায় ‘উর্দু গল্পে প্রাচীন ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতা’ শিরোনামে সাহিত্য ও ছোটগল্পের ওপর একটি পর্যালোচনা প্রকাশ হয়েছিল। পর্যালোচনায় প্রফেসর ওকার আজিম তার লেখায় বলেছিলেন, বৃহৎ কলেবরে লেখা উর্দু সাহিত্যের ছোটগল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং উর্দু সাহিত্যে এটিকে প্রতিষ্ঠার পেছনে বিশেষ অবদান রেখেছেন মিয়া আখতার অরেনভি। অবশ্য ওকার আজিম তাকেই উর্দু সাহিত্যের প্রথম ছোটগল্পকার বলেননি। তবে ইতিহাস বলে, আখতার অরেনভিই ‘কুলইয়া আওর কানটে’ লিখে উর্দু সাহিত্যে ছোটগল্পের প্রথম গোড়াপত্তন করেন। কারণ, তার আগে বৃহৎ কলেবরে লেখা অন্যকোনো ছোটগল্প বা গল্পকারের সন্ধান পাওয়া যায় না।

ডেইলি জঙ্গ অবলম্বনে

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close