নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ অক্টোবর, ২০১৯

রিলায়েন্স ডেভেলপমেন্টের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ

প্লট গ্রহীতাদের ২০০ কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে পালানোর চেষ্টা

রাজধানীর খিলক্ষেত থানাধীন ডুমনি-পাতিরা মৌজায় ১ হাজার ৮০০ প্লট বিক্রি করেন রিলায়েন্স ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েটস’র নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এসব প্লট প্রবাসী বাংলাদেশির পাশাপাশি দেশের অনেকেই ক্রয় করেন। কিন্তু প্লট বুঝিয়ে না দিয়ে নানা টালবাহানা শুরু করে কোম্পানিটি, এভাবেই পার হয়েছে ১৭ রছর। এ প্রতারণার শিকার হয়ে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে রাজধানীর কয়েকটি (শাহবাগ, কাফরুল ও হাজারীবাগ) থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগীরা। এদিকে প্লট গ্রহীতারা সম্প্রতি জানতে পেরেছেন, তাদের কষ্টার্জিত ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে কোম্পানির চার সদস্যের একটি চক্র বিদেশ পালানোর চেষ্টা করছে।

গতকাল শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে রিলায়েন্স মডেল টাউন প্লট ওনার্স ফোরামের সদস্যরা এ অভিযোগ করেন। তারা জানায়, এসব প্লট বিক্রি করলেও এতদিন পর আমরা জেনেছি বিক্রিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদন নেই। তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী, গণপূর্তমন্ত্রী ও রাজউকের কাছে এই ভূমিদস্যু প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। ক্ষতিগ্রস্তরা এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, রিলায়েন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েটস হাউসিং কোম্পানির চেয়ারম্যান বদিউল আলম মজুমদার, এমডি আরিফুর রহমান ওসমানী, ভাইস চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী ফরাজী ও ভাইস চেয়ারম্যান বিসিআইসির বরখাস্তকৃত জিএম দেলোয়ার হোসেন প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ পরিচালকদের জিম্মি করে দেড় যুগ ধরে কোম্পানির প্লট বিক্রির সমুদয় টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এখন তাদের অফিসে কিংবা মোবাইল ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না।

তারা জানান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের খিলক্ষেত থানাধীন ডুমনি-পাতিরা মৌজার ৪৩নং ওয়ার্ডে রিলায়েন্স মডেল টাউনের ১ হাজার ৮০০ প্লট মালিক ও গ্রাহক রিলায়েন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েটস কোম্পানির প্রতারণার শিকার। তাদের মধ্যে অধিকাংশ প্রবাসী। কোম্পানিটির শুরু থেকে চেয়ারম্যান, এমডি, ভাইস চেয়ারম্যান বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদে রয়েছেন। এ চক্রটি কখনো নিজেদের চেয়ারম্যান, এমডি ও ভাইস চেয়ারম্যান বলে পরিচয় দেয়। এই চারজন সিন্ডিকেট করে সাধারণ পরিচালকদের জিম্মি করে রেখেছেন। চক্রটি প্রায় দেড় যুগ ধরে কোম্পানির সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে।

তারা আরো বলেন, আমাদের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে কিস্তিতে ও এককালীন মূল্য এবং রেজিস্ট্রেশনের টাকা পরিশোধ করা সত্ত্বেও ১ হাজার ১০০ সদস্যকে এখনো প্লট রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়নি। আবার অনেককে রেজিস্ট্রি করে দিলেও ভূমি উন্নয়ন বা প্লট বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এখনো প্রকল্পটির অনেকাংশের জমি পানির নিচে রয়েছে। প্লট গ্রহীতাদের কাছ থেকে ৩ কাঠা প্লট বাবদ ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা এবং ৫ কাঠা প্লটের জন্য ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। এভাবে প্লট গ্রহীতাদের কাছ থেকে দুই শতাধিক কোটি টাকা নিয়ে কোম্পানির মালিকরা এখন লাপাত্তা। রিলায়েন্স মডেল টাউন প্লট ওনার্স ফোরামের সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন বলেন, পুরো প্রকল্পের প্রায় ৮০০ প্লটের গ্রাহককে প্লট রেজিস্ট্রি করে দিলেও তা এখনো বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। শুধু রাস্তার লে-আউট তৈরি করলেও এ প্রকল্পটিতে বিদ্যুৎ, পানি, স্যানিটেশন ও পয়ঃনিষ্কাশন লাইনের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। এমনকি প্রকল্প দেখাশোনা ও নিরাপত্তার জন্য কোনো স্টাফও রাখা হয়নি। আর প্লট মালিকরা একত্রিত হলে চক্রটি গা ঢাকা দিয়েছে।

গত ১০ বছরে বেশ কয়েকবার চক্রটি তাদের অফিস পরিবর্তন ও মোবাইলের সিম পরিবর্তন করে।

তিনি আরো বলেন, কোম্পানির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ভাইস চেয়ারম্যান গোপনে প্রকল্পের জমি বিক্রি এবং গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া দুই শতাধিক কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পালানোর চেষ্টা করছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্লট গ্রহীতাদের স্বার্থে এ চক্রটির প্রতারণা বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফোরামের আহ্বায়ক মোহাম্মদ আবুল হুসাইন ও সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ মো. মিয়াজ উদ্দিন, সদস্য আবদুল হালিম, মোবারক হোসেন মোহন, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, কাজী সহিদুল ইসলাম, মো. নূরে আলম এলাহী, সাইদুর রহমান, কাজী জাকারিয়া, আমিনুর রহমান, মাকসুজ্জামানসহ শতাধিক প্লট গ্রহীতা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close