বাগেরহাট প্রতিনিধি
ডিম পেড়েছে খানজাহান আলী (রহ.) এর মাজারের কুমির
বাগেরহাটের হজরত খানজাহান (রহ.) মাজার শরিফের দিঘির মিঠা পানির মা কুমির আবারও ডিম পেড়েছে। গত শনিবার ও রোববার দিঘির মা কুমিরটি আবারও ৬০ থেকে ৭০টি ডিম পাড়ে। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, রোদের মধ্যে দিঘির উত্তর পাড়ে মা কুমিরটি মাটি আঁকড়ে আছে। সেখানে গর্ত খুঁড়ে ডিম ঢেকে রেখেছে মা কুমিরটি। ডিম পাড়ার পর এখন বাচ্চা ফুটানোর জন্য তা দিচ্ছে। আগ্রহী মানুষ কাছে গেলেই তেড়ে আসছে। সেখানে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে মাজারের খাদেমরা। অনেকে কুমিরের ডিম দেখতে ভিড় করছেন। মা কুমিরটি ডিম মাটির ধুলো দিয়ে ঢেকে রাখায় ডিমের সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি।
খানজাহানের মাজারের প্রধান খাদেম শের আলী ফকির জানান, মা কুমিরটি দিঘির উত্তর পাড়ে গর্ত খুঁড়ে আনুমানিক ৬০ থেকে ৭০টি ডিম পেড়েছে। মাঝে মধ্যে খুব অল্প সময়ের জন্য কুমিরটি দিঘিতে নেমে আবার ফিরে আসছে ডিমে তা দিতে। আগামী আগস্ট মাস পর্যন্ত কুমিরটি ডিমে তা দেওয়ার পর বাচ্চা ফুটবে বলে প্রত্যাশা মাজারের প্রধান খাদেমের। মাজারের প্রধান খাদেম আরো জানান, হজরত খানজাহান (রহ.) এ দিঘিতে কালাপাড় ও ধলাপাড় নামে দুইটি কুমির লালন-পালন করতেন। ওই জুটির কোনো বংশধর এখন আর বেঁচে নেই। ভারত সরকারের দেওয়া মিঠা পানির কুমির এখন দিঘির শেষ সম্বল। কয়েক বছর ধরে এই দিঘির মা কুমিরটি ডিম পাড়লেও তাতে বাচ্চা ফুটছে না। কুমিরের বংশ বৃদ্ধি না হলে দিঘিটি তার ৬৫০ বছরের ঐতিহ্য হারাবে।
বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাইফুজ্জামান খান জানান, দিঘিতে বর্তমানে মিঠা পানি প্রজাতির একটি পুরুষ ও একটি মা কুমির রয়েছে। কয়েক বছর ধরে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিমভাবেই চেষ্টা করেও ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো যায়নি। মা কুমিরটিকে চিকিৎসাও দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শও নেওয়া হয়েছে। পুরুষ কুমিরটির শুক্রাণু মা কুমিরটির ডিম্বানুতে যথাযথভাবে প্রতিস্থাপন না হওয়ার ফলে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটছে না। তাছাড়া শতভাগ সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় পুরুষ কুমিরটির শুক্রাণুর সক্ষমতা কমে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস জানান, কুমির খানজাহানের দিঘির কুমিরের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য কয়েক বছর ধরে নানাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রাণিসম্পদ বিভাগের চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। কী কারণে বাচ্চা ফুটছে না তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে দিঘির ঐতিহ্য ধরে রাখতে কুমিরের বংশবৃদ্ধির জন্য সরকারের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তাই এরই মধ্যে খানজাহানের দিঘি থেকে দুইটি কুমির সুন্দরবনের করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সুন্দরবনের করমজল থেকে কুমির এনে দিঘিতে সংরক্ষণের জন্য বন বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, হজরত খানজাহান (রহ.) আমল থেকে প্রায় ৬৫০ বছর ধরে মাজারের দিঘিতে কালাপাড় ও ধলাপাড় নামের মিঠা পানির কুমির বংশপরম্পরায় (মার্স কোকোডাইল) বসবাস করে আসছে। তবে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হজরত খানজাহানের আমলের কুমিরের শেষ বংশধরটি মারা যায়।
"