মো. শহীদ রানা

  ১৯ মে, ২০১৭

বাংলার অ্যামাজন রাতারগুল

বাংলাদেশের একমাত্র ফ্রেশ ওয়াটার সোয়াম্প ফরেস্ট বা স্বাদু পানির জলাবন ‘রাতারগুল’। অনিন্দ্য সুন্দর বিস্তীর্ণ এই বনের সঙ্গে তুলনা চলে একমাত্র অ্যামাজনের। ‘অ্যামাজন’ রেইন ফরেস্ট নামে পরিচিত হলেও বিশ্বের স্বাদু পানির সবচেয়ে বড় বন। অ্যামাজনের মতোই স্বাদু পানির বন এই রাতারগুল। সিলেটের স্থানীয় ভাষায় ‘মুর্তা’ বা পাটিগাছ ‘রাতাগাছ’ নামে পরিচিত। সেই মুর্তা বা রাতাগাছের নামানুসারে এই বনের নাম হয়েছে ‘রাতারগুল’।

উত্তরে মেঘালয় থেকে নেমে আসা স্রোতস্বিনী গোয়াইন নদী, দক্ষিণে বিশাল হাওর, মাঝখানে জলাবন ‘রাতারগুল’। সিলেট থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর ইউনিয়নে এই জলাবনের অবস্থান। উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, পৃথিবীতে ফ্রেশ ওয়াটার সোয়াম্প ফরেস্ট বা স্বাদু পানির জলাবন আছে মাত্র ২২টি। আর ভারতীয় উপমহাদেশে দুটি, যার একটি শ্রীলংকায়, অপরটি বাংলাদেশে।

বন বিভাগের তথ্য মতে, বনের আয়তন ৩৩২৫.৬১ একর। বিস্তীর্ণ এই বনে প্রায় সর্বমোট ৭৩ প্রজাতির উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই বন মূলত প্রাকৃতিক বন হলেও বন বিভাগ বেত, কদম, হিজল এবং মুর্তাসহ বিভিন্ন জাতের জলসহিষ্ণু গাছ লাগিয়েছে। এছাড়া জলমগ্ন এই বনে রয়েছে হিজল, করচ, বরুণ, পিঠালি, অর্জুন, ছাতিম, গুটিজাম ও বট।

বন বিভাগ এই বনটির দক্ষিণে বেশ বড় একটি অংশে বাণিজ্যিকভাবে মুর্তা (পাটিগাছ) লাগিয়েছে। মুর্তা দিয়ে শীতলপাটি হয়। মুর্তা বেশি আছে নদীর উল্টোদিকে। এছাড়া ওদিকে ‘শিমুল বিল’ আর ‘নেওয়া বিল’ নামে দুটি বড় হাওর আছে। বর্ষায় হাওরের স্বচ্ছ পানির নিচে ডুবে থাকা গাছগুলো দেখার অভিজ্ঞতা মনোমুগ্ধকর। শীতকালে আবার বনের ভিন্ন রূপ। জল কমার সঙ্গে সঙ্গে জেগে ওঠে মুর্তা ও জালিবেতের বাগান। সেই সৌন্দর্য আবার অন্য রকম!

বন বিভাগ ১৯৭৩ সালে ৫০৪ একর বনকে বন্য প্রাণীর জন্য অভয়ারণ্য ঘোষণা করে। রাতারগুল বন জলমগ্ন বলে এই বনে সাপের আবাস বেশি। নির্বিষ গুইসাপ এবং জলঢোড়া ছাড়াও রয়েছে গোখরাসহ বিষাক্ত অনেক প্রজাতির সাপ। বর্ষায় বনের ভেতর পানি ঢুকলে গাছই হয় এসব সাপের আবাসস্থল। বনের ভেতর দাপিয়ে বেড়ায় মেছোবাঘ, কাঠবিড়ালি, বানর, ভোঁদড়, বনবিড়াল, বেজি এবং শিয়ালসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণী।

এই বনে টেংরা, খলিসা, রিঠা, পাবদা, মায়া, আইড়, কালবোস এবং রুইসহ আরো অনেক জাতের মাছ পাওয়া যায়। পাখির মধ্যে আছে সাদা বক, কানা বক, মাছরাঙা, টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়ি, ঢুপি, ঘুঘু, চিল ও বাজ। শীতে মাঝেমধ্যে আসে বিশালকায় সব শকুন। আর লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে ঘাঁটি গাড়ে বালিহাঁসসহ হরেক জাতের পাখি। শুকনো মৌসুমে ডিঙ্গি নিয়ে ভেতরে গেলে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি উড়ে গিয়ে পথ করে দেবে। এই দৃশ্য আসলেই দুর্লভ!

রাতারগুল বনে ঢুকতে হয় ডিঙ্গি নৌকায় চেপে। নৌকা বনে ঢুকতেই পাবেন গোয়াইন নদী দিয়ে রাতারগুলে যাওয়ার অসাধারণ সুন্দর পথ; বিশেষ করে বর্ষায়। এছাড়া নদীর চারপাশের দৃশ্যের সঙ্গে দেখবেন, দূরে ভারতের মিজোরামের উঁচু সবুজ পাহাড়। বর্ষা মৌসুমে (মে-সেপ্টেম্বর) প্রায় সর্বদাই পানি থাকে বনে। শীতকালে অবশ্য সেটা হয়ে যায় আর দশটা বনের মতোই পাতা ঝরা শুষ্ক ডাঙ্গা। আর ছোট ছোট খালগুলো হয়ে যায় পায়ে চলা

মেঠোপথ।

যেভাবে যাবেন রাতারগুল

সিলেট থেকে রাতারগুলে যাওয়ার বেশ কয়েকটি পথ আছে। জাফলং, তামাবিল রোডে সারীঘাট হয়ে সরাসরি গোয়াইনঘাট। এরপর গোয়াইনঘাট থেকে রাতারগুল বিট অফিসে যাওয়ার জন্য ৫০০-৬০০ টাকায় ট্রলার ভাড়া করতে হবে। বিট অফিসে নেমে ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে বনে ঢুকতে হবে। এজন্য ঘণ্টাপ্রতি খরচ হবে ২০০-৩০০ টাকা।

আবার সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে ৫০০-৬০০ টাকা ভাড়ায় সিএনজি নিয়ে গোয়াইনঘাট। ওসমানী এয়ারপোর্ট, শালুটিকর হয়ে যাওয়া এই রাস্তা বর্ষাকালে প্রাকৃতিক অপরূপ রূপে সাজে। এরপর একইভাবে গোয়াইনঘাট থেকে রাতারগুল বিট অফিসে যেতে হবে।

সময় ও খরচ কমাতে সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে ৩২০-৩৫০ টাকা ভাড়ায় সিএনজি নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টায় মটরঘাট। এরপর মটরঘাট থেকে সরাসরি ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে বনে চলে যাওয়া যায়।

কিছু সতর্কতা

রাতারগুল বা এর আশপাশে খাবার বা থাকার ভালো ব্যবস্থা নেই। তাই খাবার গোয়াইনঘাট বা সিলেট থেকে নিয়ে যেতে হবে। আরেকটি বিষয় হলো, নৌকায় ঘোরার সময় পানিতে হাত না দেওয়াই ভালো। কারণ, জোঁকসহ বিভিন্ন পোকামাকড় তো রয়েছেই, বর্ষায় বিষাক্ত সাপও পানিতে বা গাছে দেখতে পাওয়া যায়। দয়া করে পলিথিন, বোতল, চিপস বা বিস্কুটের প্যাকেট পানিতে ফেলবেন না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist