জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট

  ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

নিম্ন দরদাতাদের উপেক্ষা সর্বোচ্চ দরে কাজ

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি

বিগত কয়েক বছর ধরে সর্বনিম্ন দরেই রোগীর পথ্য সংগ্রহ করতো লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল। এ বছর জমা পর ৯ দরপত্রের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল ১ হাজার ৬৬৫ টাকা ও সর্বোচ্চ সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৭১০ টাকা। কিন্তু মূল্যতালিকার ৮টি নিম্নদের অতিক্রম করে সর্বোচ্চ দরদাতা মেসার্স শাপলা টেইলার্সকেই কাজ দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অথচ গত বছর ওই প্রতিষ্ঠানই মাত্র ১ হাজার ৬৬৬ টাকায় রোগীর পথ্য সরবরাহ করেছে। ফলে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে এবার এ অর্থবছরে পথ্য সরবরাহ ব্যয় বাড়বে চারগুণ।

লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতাকেই কাজ পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলে গত ১৯ সেপ্টেম্বর প্রেস ক্লাবে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন দরবঞ্চিত ঠিকাদাররা। এ জন্য হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আ ফ ম আহসান আলী বাবুকেই দায়ী করছেন তারা।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে নিয়মানুযায়ী দরপত্র আহ্বান করে কর্তৃপক্ষ। এতে নির্ধারিত ২২ আগস্ট মোট ৯ জন ঠিকাদার রোগীর পথ্য সরবরাহে দরপত্র দাখিল করেন। তাদের মধ্যে আবু বক্কর সিদ্দিক সর্বনিম্ন ১ হাজার ৬৬৫ টাকা, এরপর ইকবাল হোসেন মামুন ১ হাজার ৭০৭ টাকা, মেসার্স লাকী এন্টারপ্রাইজ ২ হাজার ৪ টাকা, মেসার্স ফাইভ স্টার গার্মেন্টস ২ হাজার ২১৭ টাকা, মেসার্স গোলাম রাব্বানী সোহেল ২ হাজার ৩৫৯ টাকা, মেসার্স মেফতাহুর রহমান ২ হাজার ৭৫৪ টাকা, মেসার্স শেখ ট্রেডার্স ২ হাজার ৮৫২ টাকা, মেসার্স টিটন কন্সট্রাকশন ৬ হাজার ৬৯০ টাকা এবং মেসার্স শাপলা টেইলার্স সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৭১০ টাকা হিসাবে দরপত্র দাখিল করেন।

ওই দিন দরপত্র খোলার পর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আ ফ ম আহসান আলী বাবু পরবর্তী সময়ে ঠিকাদার মনোনয়নের সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে ঘোষণা দিয়ে সেদিনের কার্যক্রম শেষ করেন। কিন্তু কয়েক দিন না যেতেই সর্বনিম্ন দরদাতার পরিবর্তে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে (৭ হাজার ৭১০ টাকা) মেসার্স শাপলা টেইলার্সকে কার্যাদেশ দেন ওই তত্ত্বাবধায়ক। ফলে গত বছরের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেশি দামে রোগীর পথ্য সরবরাহ করবে মেসার্স শাপলা টেইলার্স।

ওই দরপত্রে অংশগ্রহণকারী মেসার্স লাকী এন্টারপ্রাইজের মালিক মোফাজ্জল হোসেন বলেন, আট সর্বনিম্ন দরদাতাকে উপেক্ষা করে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৭১০ টাকায় আবারো ওই মেসার্স শাপলা টেইলার্সকে রোগীর পথ্য সরবরাহের কাজ দেওয়া হয়েছে। অথচ ওই প্রতিষ্ঠানই গত বছর মাত্র ১ হাজার ৬৬৬ টাকায় রোগীর পথ্য সরবরাহ করেছে। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে চারগুণ দামে ওই প্রতিষ্ঠানকে রোগীর পথ্য সরবরাহের কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আ ফ ম আহসান আলী বাবুকেই দায়ী করেন তিনি।

মেসার্স গোলাম রাব্বানী সোহেল নামে ঠিকাদার অভিযোগ করে বলেন, এক বছরের ব্যবধানে একই পরিমাণ রোগীর জন্য কি এমন হলো যে, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সর্বনিম্ন আট দরদাতাকে উপেক্ষা করে গত বছরের থেকে চারগুণ বেশি মূল্যে সর্বোচ্চ দরদাতাকে কার্যাদেশ দেয়া হলো? এ ব্যাপারে তিনিসহ অংশগ্রহণকারী সব ঠিকাদার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারিগর তত্ত্বাবধায়ক ডা. আ ফ ম আহসান আলী বাবুর এই অদ্ভুত টেন্ডার কারিশমা তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হোক।

তবে ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আ ফ ম আহসান আলী বাবু বলেন, ‘দরপত্র যাচাই-বাছাই করে বিধি অনুযায়ীই ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে যেসব ঠিকাদারের দরপত্র বাজারদরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না, তারা কাজ পাননি বলেই তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন।’

গত বছর যে প্রতিষ্ঠান (মেসার্স শাপলা টেইলার্স) মাত্র ১ হাজার ৬৬৬ টাকায় রোগীর পথ্য সরবরাহ করেছে, সেই প্রতিষ্ঠানকেই এ বছর চারগুণ দামে কাজ দেওয়ার যৌক্তিকতা কী-এমন এক প্রশ্নের সদুত্তর লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আ ফ ম আহসান আলী বাবু দিতে পারেননি। তবে তিনি সব কিছুই বিধি অনুযায়ী করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানান।

অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান মেসার্স শাপলা টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী মোকছেদুর রহমান মোবাইল ফোনে জানান, বিষয়টি আমি ঠিক জানি না। তবে নিয়ম অনুযায়ী দরপত্র দিয়েই ঠিকা পেয়েছি। সর্বনিম্ন দরপত্র বাদ পরা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাজার মূল্যর চেয়েও কম মূল্যে দরপত্র দেওয়ায় তা গ্রহণ যোগ হয়নি। বাজার বিবেচনায়ই ঠিকাদারি দেয়া হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist