মিজানুর রহমান, ক্ষেতলাল (জয়পুরহাট)

  ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

বন্যায় ক্ষতি

ক্ষেতলালে আগাম শাকসবজি চাষে ব্যস্ত কৃষকরা

জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে ভয়াবহ বন্যায় আমন ধান ও গ্রীষ্মকালীন সবজি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগাম জাতের শীতকালীন শাকসবজি চাষ ও পরিচর্যা করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বন্যাকবলিত এলাকার অধিকাংশ কৃষক।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভয়াবহ বন্যায় উপজেলার মামুদপুর, তুলসীগঙ্গা ও বড়তারা ইউনিয়নের আমন ধান ও গ্রীষ্মকালীন শাকসবজিসহ কলা এবং মসলাজাতীয় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে , এবার চলতি মৌসুমে ১১ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ভয়াবহ বন্যার ফলে ২ হাজার ৩৪৩ হেক্টর জমির আমন ধান সম্পূর্ণরূপে পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া ৩ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান আংশিক ক্ষতির ফলে এ উপজেলায় ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না।

এদিকে, ২৫৩ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে ১১০ হেক্টর জমির শাকসবজি মাঠ থেকে ঘরে তোলার পূর্বমুহূর্তে বন্যার কবলে পড়ে সম্পূর্ণরূপে পচে নষ্ট হয়। ফলে অধিকাংশ কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ক্ষতি পুষিয়ে নিতে উপজেলা কৃষি বিভাগ কৃষকদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ ও উদ্ধুদ্ধ করছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে আগাম জাতের শীতকালীন শাকসবজি চাষ ও পরিচর্যা করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কৃষকরা।

উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের আমিরা গ্রামের কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, এবার বন্যায় তার প্রায় পাঁচ বিঘা জমির আমন ধান পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় সম্পূর্ণরূপে পচে নষ্ট হয়েছে। সময় স্বল্পতার কারণে ওই সব জমিতে আর আমন ধান চাষ করা সম্ভব নয়। ফলে ক্ষতি হওয়া জমিতে এরই মধ্যে বিঘাপ্রতি চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এসব জমিতে আমন ধানের পরিবর্তে আগাম জাতের রবিশষ্য চাষ নিয়ে তিনি ভাবছেন।

মহব্বতপুর গ্রামের সবজিচাষি মফিজুল ইসলাম বলেন, এবার ভয়াবহ বন্যায় করলা, পটল, বেগুন, চিচিংগাসহ গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি পানিতে ডুবে সম্পূর্ণ পচে নষ্ট হয়েছে। এসব সবজি বন্যা না হলে এক সপ্তাহ পর থেকে বিক্রি করলে প্রতি বিঘায় ৮০ থেকে লক্ষাধিক টাকা লাভ হতো। কিন্তু আকস্মিক বন্যার ফলে লাভ তো দূরের কথা সবজি ফসল চাষ করে ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এখন থেকে আগাম বিভিন্ন জাতের শীতকালীন শাকসবজির চাষ এরই মধ্যে শুরু করেছি।

উপজেলা উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে আগাম জাতের বিভিন্ন শাকসবজি চাষের জন্য মাঠ পর্যায়ে সরেজমিন প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে উদ্ধুদ্ধ করা হচ্ছে। আশা করি এসব পরামর্শ কাজে লাগিয়ে বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কিছুটা সক্ষম হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর কবির জানান, বন্যার কারণে নিচু এলাকার রোপা আমন ও গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে তাদের জন্য স্বল্পমেয়াদি ধানের চারা তৈরি করা হয়েছে। খুব শিগগির তা বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া প্রণোদনা হিসাবে কৃষকদের মধ্যে গম, ভুট্টা, সরিষাসহ ডালজাতীয় ফসল চাষ করার জন্য উদ্ধুদ্ধ করা হচ্ছে। এসব ফসল উৎপাদন করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত ফসল বাজারে বিক্রি করে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে বলে কৃষি বিভাগ আশাবাদী।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist