প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৯ আগস্ট, ২০১৭

বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙন, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, অপ্রতুল ত্রাণ

দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। তবে মধ্যাঞ্চলের কিছু জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও অবনতি ঘটেছে অধিকাংশ এলাকায়। বিভিন্ন এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বানভাসিদের অভিযোগ, বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এসব এলাকায় খাদ্য-গোখাদ্য ও খাবার পানির সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। ঘর-বাড়ি, ফসলী জমি, গবাদিপশুর খামার, মাছের খামারসহ রাস্তা ঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধির পাঠানো খবর-

রংপুর : ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানি জমে থাকায় রংপুরে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, গবাদিপশুর খামার, মাছের খামারসহ রাস্তা ঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত এই বন্যায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ রংপুরের ২৪৩টি কালভার্টের মধ্যে ৪টি কালভার্ট ধসে গেছে। আর বাকি ১৪৩টি কালভার্ট ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানিয়েছে। এদিকে রংপুর সওজ’র সাবডিভিশন-২ এর সাব অ্যাসিসটেন্ট প্রকৌশলী শাহানুর রশিদ জানান, গত কয়েকদিনে টানা বৃষ্টিপাত ও ভারী বর্ষণে মধুপুর এবং শ্যামপুরের বাইপাস সড়কের মধ্যবর্তী এলাকা মধুপুরে প্রায় ১ হাজার ১শ কিলোমিটার পাকা রাস্তা হাটু পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। রংপুর সওজ’র সাবডিভিশন-২এর সাবএ্যাসিসটেন্ট প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানান, এবারের বন্যায় রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গঙ্গাচড়া পীরেরহাট থেকে মন্তনার লাঙ্গনের হাট সেতু, পাকুড়িয়া ব্রিজ, মন্তনা সেতু ও কুর্শাঘাট ব্রিজসহ মোট ৪টি সেতু বন্যার পানির প্রবল চাপে ধসে গেছে। এছাড়াও ওই সড়ক দিয়ে যানচলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

গাইবান্ধা : এলাকাবাসীর টানা চার-পাঁচ দিন আপ্রাণ চেষ্টাতেও শেষ রক্ষা হলো না গাইবান্ধার মহিমাগঞ্জের বালুয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। সেখানে বালুর বস্তা ফেলে অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করেন এলাকাবাসী। এমন কি সারারাত জেনারেটরে আলো জ্বালিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেও বিফল হন তারা। গতকাল ভোররাতে বাঙালি নদীর এ বাঁধটি ধসে গেলে প্রবল বেগে পানি ঢুকে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী বগুড়া জেলার দুটি ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এসময় প্রবল স্রোতের মুখে কেবল বালুয়া গ্রামেই দুই শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। মুহূর্তের মধ্যে তলিয়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকার আমন ধান, আখ সব্জীসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। গতকাল ভোর রাতে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের বালুয়া এলাকায় বাঙ্গালি নদীর এই বাধটি ভেঙ্গে যায়। মহিমাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান জানান, প্রায় চার বছর আগে এই এলাকায় বাঙ্গালী নদীর তীর প্রতিরক্ষা বাঁধটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর লোকালয়ে পানি প্রবেশ ঠেকাতে স্থানীয়রা একটি বাঁধ নির্মাণ করে। পানির প্রবল চাপে বাঁধটি ভেঙ্গে যাওয়ায় গোবিন্দগঞ্জের মহিমাগঞ্জ, কোচাশহর, শালমারা, শিবপুর, রাখালবুরুজসহ ৫টি ইউনিয়ন এবং পার্শ্ববর্তী বগুড়া জেলার সোনাতলা ও শিবগঞ্জ উপজেলার দুইটি ইউনিয়নে পানি ঢুকে পড়ে। এতে কয়েক হাজার হেক্টর আমন ক্ষেত, আখের ক্ষেত, শাক সবজিসহ বিভিন্ন ফসল তলিয়ে গেছে। ভোররাত থেকেই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তার লোকজন নিয়ে সাধ্যমত উদ্ধারকাজ ও ত্রাণ তৎপরতা চালায়। দুপুরে গোবিন্দগঞ্জ এলাকার সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল, পানি উন্নয়ণ বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সেনাবাহিনীর একটি টিমও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

টাঙ্গাইল : ‘আল্লাহ ছাড়া আমাগোরে দেখার কেউ নাই। বানের পানি ধরে রাখতি আমরা হগলে মিলা কাজ করতাছি। তাও যদি শেষ রক্ষে হয়।’ আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের চরগাবসারা থেকে এসে নদী তীরের বাঁধে আশ্রয় নেওয়া সত্তুরোর্ধ বৃদ্ধ রহমান মিয়া। ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফ হোসেন বলেন, ২/১ দিনের মধ্যে আমরা দুই হাজার পরিবারের জন্য চাল, ডাল, লবন, চিরা, চিনি, দিয়াশলাই, মোমবাতিসহ আরও কিছু উপকরণ সরবরাহ করবো। আমাদের এই ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান সিরাজ জানান, যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে।

নওগাঁ : নওগাঁর ছোট যমুনা ও আত্রাই নদীর পানি কমছে। বাড়ছে প্লাবিত এলাকা। গতকাল সকালে ছোট যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার ও আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ১৮০ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার ভোর রাতে নওগাঁ সদর উপজেলার ইকরাতারা নামক স্থানে ছোট যমুনা নদীর বাধ ভেঙ্গে ৩টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। অতি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে সৃষ্ট বন্যায় জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে ১০টি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। চাহিদার তুলনায় ত্রাণের পরিমাণ অপর্যাপ্ত। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানান, জেলায় বেশ কয়েক কোটি টাকা চাহিদা থাকলেও বরাদ্দ নেয়া সম্ভব হচ্ছে না জেলা হিসাব রক্ষক কর্তকর্তা প্রশিক্ষণে থাকায়। বিভিন্ন ভাবে টাকা জোগার হচ্ছে। এদিকে রাণীনগরে বেড়িবাঁধ ভাঙ্গনার পানির স্রোতের মুখে পরে অজিত চন্দ্র (৫৫) নামের কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার কৌনজ রিশিপাড়া গ্রামের বেড়িবাঁধ ভাঙ্গনায় এ ঘটনাটি ঘটেছে। অজিত চন্দ্র উপজেলার কৌনজ রিশিপাড়া গ্রামের মৃত-সশির ছেলে।

আত্রাই (নওগাঁ): নওগাঁর আত্রাইয়ে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার মো. নুর-উর-রহমান। গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টায় বিভাগীয় কমিশনার সরকারি সফরে আত্রাইয়ে আসেন। পরে পাঁচুপুর উচ্চ বিদ্যালয় বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে বন্যার্তদের মাঝে মাথা পিছু গত ৫০০শত টাকা ও ১০০ পরিবারকে ৩কেজি চিড়া, ১ কেজি গুড়, ২ মোবাতি এবং ১টি করে ম্যাচ ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসক ড.আমিনুর রহমান, উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. এবাদুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মোখলেছুর রহমান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) জয়া মারীয়া পেরেরা প্রমুখ।

উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ): সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় গতকাল বন্যার পানি বেড়েছে। তবে পরিমানে কম বেড়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয় ও মাদরাসা মিলে ৩২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যার পনি ওঠার কারনে বন্ধ রাখা হয়েছে। গতকাল বিকেল থেকে রাত আটটা অবধি উপজেলা প্রশাসন থেকে সবচেয়ে বেশী বন্যা কবলিত মোহনপুর, উধুনিয়া ও বড়পাঙ্গাসী তিনটি ইউনিয়ন পরিদর্শন করা হয়। উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সন্দ্বীপ কুমার সরকার, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম ভূইয়া, জেলা পরিষদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা, অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, মোহনপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, উধুনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল প্রামানিক, বড়পাঙ্গাসী ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির লিটন, কয়ড়া ইউপি চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন, উল্লাপাড়া মডেল থানার এসআই নুরে আলম ইউনিয়ন তিনটি গোটা এলাকা ঘুরে দেখেন। এসময় বিভিন্ন গ্রামের সাধারনরে সঙ্গে কথা বলে স্যানিটেশন, বিশুদ্ধ খাবার পানিসহ যাবতীয় খোজ খবর নেওয়া হয়

ঈশ^রগঞ্জ (ময়মনসিংহ): ময়মনসিংহের ঈশ^রগঞ্জে ব্রহ্মপুত্র নদে উজানের বন্যার পানি আসতে শরু করেছে। দুই দিনেই প্লাবিত হয়েছে উচাখিলা ইউনিয়নের নতুন চর। চার দিকে ব্রহ্মপুত্র নদে ঘেরা এ চরে প্রায় তিন হাজার মানুষ তাদের জীবন ও মাল নিয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে। নদীর তীর বর্তী এলাকায় প্রায় ৫০টি পরিবার নদী ভাঙনে তাদের বসত ঘর হারিয়েছে। আশ্রয়হীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে পুরো নতুন চরে। বাড়িঘর পানিতে ভাসছে এমন আরো অর্ধশত পরিবারকে অতিশিঘ্র আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তর প্রয়োজন বলে মনে করছেন সেখান কার মানুষ। উচাখিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম জানান, হঠাৎ করে নদে পানি দেখা দেওয়ায় নতুন চরের বাসিন্দারা ঝুঁকিতে রয়েছেন। ইতোমধ্যে নদী তীর বর্তী প্রায় ৫০ টি পরিবার ঘর হারিয়েছে, ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছ আরো অন্তত শতাধীক পরিবার। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিতু মরিয়ম জানান, এলাকটিতে পানি দেখা দিয়েছে বলে শুনেছি। চেয়ারম্যান কে এলাকাটি দ্রুত পরিদর্শ করে জানাতে বলা হয়েছে। তিনি নিজেও এলাকাটিতে ত্রান নিয়ে পরিদর্শন করবেন বলে জানিয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist