বিশ্বজিৎ দাস, কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

  ২৪ জুন, ২০১৭

হাকালুকি হাওর তীরের মানুষের দুর্ভোগ চরমে

ত্রাণ চাই না, বন্যার হাত থেকে বাঁচতে চাই!

আশ্রয়কেন্দ্র বলতে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা। সেগুলোতে ৩-৪ ফুট পানি। কবরস্থানে পানি, মানুষ মারা গেলে? যখন মারা যাবে তখন ভাবা যাবে। এমন উত্তর হাকালুকি হাওর তীরের মানুষের। আশ্রয়কন্দ্রে যাবে, সরকারি ত্রাণ আসবে। এসবের আশায় মানুষ করে না। হাকালুকি হাওর তীরের মানুষের একটাই কথাÑআমরা ত্রাণ চাই না, বন্যার এই ভয়াবহতা থেকে পরিত্রাণ চাই। আর পরিত্রাণের এই একটাই পথÑহাকালুকি হাওরের সাথে কুশিয়ারার সংযোগস্থলের সেই বুড়িকিয়ারি বাঁধ অপসারণ অথবা বর্তমান সংযোগস্থল জুড়ী নদী খনন ও প্রশস্তকরণ।

এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরপাড়ের কুলাউড়া উপজেলার ৭ ইউনিয়নের লক্ষাধিক বানভাসি মানুষ চলতি বন্যায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। ২য় দফা এ বন্যায় হাওরপাড়ের ভুকশিমইল ইউনিয়নে মানুষের বাড়িঘরে পানি ওঠায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এ ইউনিয়নের ৪৫ হাজার মানুষ। পৌরসভা এলাকার বিহালা, সোনাপুর, বিছরাকান্দি এলাকায় মানুষের ঘরে হাঁটুপানি। এ ছাড়াও বরমচাল, ভাটেরা, কাদিপুর ও জয়চন্ডি ইউনিয়নসহ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। গত বুধবার সারা দিন ও রাতে বৃষ্টিপাত হওয়ায় হাওরের পানি কমেনি। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বানভাসি মানুষ। বন্যায় আক্রান্ত হওয়ার ৬-৭ দিন অতিবাহিত হলেও সরকারি সাহায্য না পেয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন হাওরপাড়ের দরিদ্র মানুষ। আর সাহায্য প্রার্থীদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। গত বুধবার (২১ জুন) হাওরপাড়ের বন্যাদুর্গত ভুকশিমইল ইউনিয়নে সরেজমিন দেখা যায়, বন্যার পানির নিচে ইউনিয়নের রাস্তাঘাট, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা। ঈদ মৌসুমে এলাকার মানুষজন শহরের আসতে চরম দুর্ভোগের শিকার হন। রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় নৌকাযোগে গাদাগাদি করে নারী-পুরুষরা শহরে আসতে দেখা যায়। অস্থায়ীভাবে কুলাউড়ার পৌর এলাকার বিহালা গ্রামে এবং ভুকশিমইল গ্রামে নৌকার ঘাট স্থাপিত হয়েছে। মানুষজন নৌকাযোগে চলাফেরা করছেন। কিন্তু নৌকা স্বল্পতার কারণে নদীপথেও যোগাযোগ সময়সাপেক্ষ এবং অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে বানভাসি মানুষের। নৌকাযোগে বন্যায় আক্রান্ত ভুকশিমইল, বাদে ভুকশিমইল, চিলারকান্দি, জাবদা, সাদিপুর, মুক্তাজিপুর, কাড়েরাসহ আরও কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি মানুষের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। কারও বাড়িতে কোমর পানি, আবার কারও বাড়িতে হাঁটুপানি।

ভুকশিমইল গ্রামের কুমুদিনী বিশ^াস, নুর উদ্দিন, পাখি মিয়া, মনসুর, এমদাদ, জামাল, বিনয় ও হেকিম জানান, জানান, ৪-৫ দিন থেকে পানিবন্দি অবস্থায় আছি। ঘরের চুলাও পানিতে ডুবে গেছে। তাই রান্নাবান্না করতে পারছি না। তাই অনেকটা না খেয়ে আছি। এ ছাড়াও তাদের বাড়িঘরে পানি ওঠায় তারা বাড়িঘর ছেড়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। আমাদের দেখার কেউ নেই।

ইউনিয়নের মেম্বার নজরুল ইসলাম ও সায়রুল ইসলাম জানান, ভুকশিমইল ইউনিয়নের শতভাগ মানুষ পানিবন্দি। গরিব মানুষের নৌকা না থাকায় বাড়িঘর থেকে বের হতে পারছেন না। শতাধিক পরিবার বাড়িছাড়া। কোনো আশ্রয়কেন্দ্রে নয়, কেউ আত্মীয়স্বজনের বাড়ি আবার কেউ কেউ গ্রামের উঁচু বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।

ভুকশিমইল ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির জানান, এ বন্যায় হাওর পাড়ের ভুকশিমইল ইউনিয়নের শত শত মানুষের বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। কিন্তু সরকারি ত্রাণ একবারেই অপ্রতুল। মানুষের চাহিদা কোনোভাবে মেটানো যাচ্ছে না। হাকালুকি হাওরের সেই বুড়িকিয়ারী বাঁধটি অপসারণ করা হলে বন্যা এত ভয়াবহ হতো না। বাঁধটি অপসারণ করা না হলেও হাওরের সাথে যে সংযোগ নদী অর্থাৎ জুড়ী নদীটি খনন ও প্রশস্ত করা হলে দ্রুত পানি কুশিয়ারা নদী দিয়ে চলে যেত।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বি জানান, বন্যাকবলিত এলাকায় ঈদ উপলক্ষে ভিজিএফ চাল বিতরণ করা হচ্ছে। তা ছাড়া বন্যাকবলিত ৭ ইউনিয়নে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ৭০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। নতুন করে কোনো বরাদ্দ আসেনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist