সফিকুল আলম সবুজ, কাপাসিয়া (গাজীপুর)

  ০৬ এপ্রিল, ২০২০

কাপাসিয়ার শীতলক্ষ্যার চরে বেদেদের জীবনযাপন

‘ভাসমান হওয়ায় আমাদের খোঁজ-খবর কেউ নেয় না’

করোনার বিস্তার রোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করছে প্রশাসন, বন্ধ হয়ে গেছে জনসমাগম। মজমা জমিয়ে সাপ খেলা দেখানোর সুযোগ নেই বেদেদের, গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরাও বন্ধ। ফলে যেখানে ছিল সেখানে অবস্থান করছেন ছিন্নমূল বেদে জনগোষ্ঠী। এখন তারা গ্রামে, মহল্লায়, হাট-বাজারে নিজেদের পেশা কাজ করতে যেতে পারছেন না। তাছাড়া নিজেদের এলাকা না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। গাজীপুরের কাপাসিয়া তরগাঁও এলাকায় শীতলক্ষ্যার চরে আটকা পড়েছেন ৩৫টি পরিবার ১৭০ জন সদস্য।

এদিকে যাযাবর প্রকৃতির এই জনগোষ্ঠীর জন্য নেই সরকারে আলাদা কোনো বরাদ্দ। ফলে খোলা আকাশের নিচে কোনোমতে খেয়েপড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। এ অবস্থা দেশের দেড় লক্ষাধিক বেদে সদস্যের।

বেদে সর্দার ছোয়াব আলী জানান, প্রায় এক মাস ধরে গ্রামে, মহল্লায়, হাট-বাজারে তারা কাজ করতে যেতে পারছেন না। করোনার কারণে তাদের এলাকায় আসতে মানা করছেন লোকজন। এ পেশা ছাড়া আমাদের তো আর কোন কাজ জানা নেই। এখন কী করে খাব?

বেদে সর্দার আরো বলেন, আমরা খেটে খাওয়া মানুষ, দিন আনি দিন খাই। বছরে ১০ মাস বাড়ির বাইরে কাজ করতে বের হই। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা এ দুই মাস বাড়িতে থাকি। সারা বছর এ কাজ করে বউ, ছেলেমেয়ে নিয়ে খেয়ে পড়ে কোনোমতে বেঁচে আছি। এখন দেশে যে অবস্থা, কাজ করতে না পারলে ছেলেমেয়ে নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে।

বেদে সর্দারের ছোট ভাই আবদুল মতিন। তিনি বলে, সারা দেশে বেদের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার। তাদের মতো সবার অবস্থা একই রকম। এই বেদে সদস্য আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা ভাসমান হওয়ায় আমাদের খোঁজখবর কেউ নেয় না। পাঁচ দিন আগে কাপাসিয়া ইউএনও স্যার কিছু চাল ডাল দিয়ে গেছেন, তা শেষ হয়ে গেছে।’

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, শীতলক্ষ্যার চরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বাঁশ ও পলিথিন দিয়ে বানানো ছোট ছোট ডেরা ঘর। রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে এসব ডেরা ঘরে তাদের জীবনযাপন করতে হয়। এ নীড়ে কাটে তাদের সুখ-দুঃখের জীবন। তবে প্রাণঘাতি করোনা নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো সচেতনতা লক্ষণ দেখা যায়নি।

জানতে চাইলে বেদেরা বলেন, করোনায় থেকে নিরাপত্তার জন্য সরকার বা কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে মাস্ক, সাবান কোনো কিছু দেওয়া হয়নি। খাবার সংকট তো আছেই। তারা বলেন, ‘আমরা আল্লাহ ও রাসুলের ওপর ভরসা করে বেঁচে আছি।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোসা. ইসমত আরা। বেদে জনগোষ্ঠীর অবস্থা শুনে প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি জানান, তাদের জন্য নির্দিষ্ট সরকারি কোনো বরাদ্দ না থাকায় আমি নিজে উদ্যোগী হয়ে কিছু চাল, ডাল দিয়েছি তা, কিন্তু যথেষ্ট নয়। নতুন করে বরাদ্দ আসলে দেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close